|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা |
বেনিয়ম |
বেপরোয়া বাজার |
কৌশিক ঘোষ |
সরকারি জমিতে কারও কোনও অনুমতি ছাড়াই স্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণ করে রমরমিয়ে বাজার চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজারের স্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণের কোনও নথিও নেই পুরসভার কাছে। বেহালার সরশুনায় সোনামুখী রোড চৌমাথা বাজার এ ভাবেই চলছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) দেবাশিস কুমার স্পষ্টই বলেন, “ওখানে সেচ দফতরের জমিতে কোনও অনুমতি ছাড়াই দোতলা বাজার নির্মাণ করে দোকান করা হয়েছে। পুরসভার অনুমতি তো দূরের কথা, বাড়ি তৈরির কোনও নথিও নেই। এই বাজার নির্মাণ করে দোকানঘর বেচাকেনায় বেআইনি আর্থিক লেনদেনও হয়েছে। দোকানদারেরা এই বাজারে পুরসভার জল এবং অন্যান্য পুর-পরিষেবাও ভোগ করছেন। এই বাজার বেআইনি।” তাঁর অভিযোগ, “তৎকালীন বাম পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান নির্মল মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানেই এই বাজার তৈরি হয়েছে।”
|
|
দোতলা এই বাজারটি ২০০৭ সালে বামফ্রন্ট পরিচালিত গত পুরবোর্ডের আমলে উদ্বোধন করেন পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং এই এলাকার সিপিএম কাউন্সিলর নির্মল মুখোপাধ্যায়। দোতলা এই বাজারে মোট দোকানদারের সংখ্যা ৮০। সরকারি জমিতে কারও অনুমতি ছাড়াই তৈরি এই বাজার কী ভাবে উদ্বোধন করলেন তিনি?
নির্মলবাবুর জবাব: “রাস্তার ধারে সরকারি জমিতে যেখানে বহু দিন ধরে দোকানদারেরা বসতেন, সেখানেই বাস যাওয়ার জন্য জায়গা ছেড়ে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই অর্থ দিয়েই বাজারের পরিকাঠামো নির্মাণ করেছিলেন। এই বাজার নির্মাণে কোনও রকম সরকারি অনুমতিও ছিল না। আমি সেই বাজার উদ্বোধন করেছিলাম। এলাকার উন্নয়নের জন্য বাজারের প্রয়োজন। এখানেও বাজারের জন্য মানুষের চাহিদা ছিল। সেই কারণেই এখানে এই বাজার হয়েছে। মানুষের স্বার্থেই আইন। সুতরাং কী করে আমি এই বাজারকে ‘বেআইনি’ বলি? এই দোকানদারদের জন্য আমার নৈতিক সমর্থন রয়েছে।” পাশাপাশি, তাঁর মন্তব্য: “বর্তমান সরকার এবং পুরসভা যদি মনে করে এটি ‘বেআইনি’, তা হলে এই বাজার তারা ভেঙে ফেলতে পারে।”
নির্মলবাবু বলেন, “এই বাজারের ভেতর পুরসভার ফেরুলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগ ঠিক নয়। এই রাস্তায় পুরসভার জলের লাইনের সংযোজন করা হয়েছে। এই লাইনের মাধ্যমে যে পানীয় জল বেরোয় তা এই বাজারের দোকানদার ছাড়াও আশপাশের এলাকার দোকানদার ও পুরসভার ওয়ার্ডের পাশে পঞ্চায়েত এলাকার লোকেরাও ব্যবহার করেন।”
সেচ দফতরের জমির উপরে এই বাজার নির্মাণ প্রসঙ্গে রাজ্যের সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি আমিও শুনেছি। আমি যত দূর জানি, সেচ দফতরের জমিতেই এই বাজার হয়েছে। কী করে এমন হল তা খতিয়ে দেখছি।” |
|
পুরসভার এই ওয়ার্ডটি ১৪ নম্বর বরোর অন্তর্গত। সে সময়ে এই বরোর চেয়ারম্যান ছিলেন বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিষয়টি সেই সময়ে দেখলেন না কেন? শোভনবাবু বলেন, “এই বাজারটি সম্পূর্ণ ভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। চেয়ারম্যানের পক্ষে সব সময় তা জানা সম্ভব ছিল না। তবে, যিনিই এই বাজার নির্মাণ করে থাকুন না কেন, সেটি অন্যায়। পুর আধিকারিকদের ব্যাপারটি অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দিতে বলেছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার ১২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সোনামুখী রোড চৌমাথায় মজে যাওয়া একটি নিকাশি নালার উপর বাঁশের সাঁকোয় বাজার বসত। বহু দিন ধরেই বাজার চলত। এই ব্যবসায়ীরা নিজেদের অর্থ দিয়ে বাজারের পরিকাঠামো নির্মাণ করেন। ৮০টি দোকানঘরের মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দোকানঘর রেখে স্থানীয় বাজার কমিটির নেতৃত্বে বাকি দোকানগুলি বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ।
বাজার কমিটির সম্পাদক অশান্ত মণ্ডল বলেন, “আমরা স্থানীয় কয়েক জন ব্যবসায়ী যাঁরা এই জায়গায় বসতাম, তাঁরা নিজেরাই এখানে দোতলা বাজার নির্মাণ করে ব্যবসা করছি। কিছু কিছু দোকানঘর বেচাও হয়েছে। কেউ আমাদের বাধাও দেননি। এটা কোন দফতরের জমি তা জানা নেই। এই অবস্থায় বেআইনি বলে কেউ যদি বাজার উঠিয়ে দেন তা হলে আমাদের কিছু করার নেই।” বাজারের এক ব্যবসায়ী অভিজিৎ বৈদ্য বলেন, “হাজার দশেক টাকায় বাজার কমিটির কাছ থেকে দোকানঘর কিনেছি। তবে বাজারের পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধা রয়েছে। বর্তমানে এই বাজারের হাল কী হবে তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।” স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের শ্যামাদাস রায়ের কথায়: “এই ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়ে আসার পরে বিষয়টি প্রথম জানতে পারি। তার পরেই পুরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। গোটা বিষয়টি পুর অধিবেশনেও উঠেছে।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|