তাজিকিস্তান-২(খামরাকুলভ, দাভরোনভ)
ভারত-০ |
অ্যালেক্স ফার্গুসনের দলে এখনও বারবার ডাক পড়ে গিগস বা স্কোলসের। ওয়েঙ্গারকে এখনও দ্বারস্থ হতে হয় থিয়েরি অঁরির।
সেই কবে থেকে ফুটবল মাঠে কথাটা চলছে, অভিজ্ঞতার কোনও দাম নেই। অনেক বিশ্রী ভুল ঢেকে দেয় তারা।
স্যাভিও মিদেইরা নিশ্চিত ভাবেই শুক্রবার রাতে বুঝতে পারছেন, এক সঙ্গে এত সিনিয়রকে বাদ দিয়ে খেলতে আসা ঠিক হয়নি!
বৌদ্ধ সন্ন্যাসী থেকে বিদেশিনি টুরিস্টকাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে প্রচুর মুখ হাজির ছিল ভারতকে দেখতে। আক্রমণে উঠলেই চিৎকার। স্যাভিও-র তরুণ ছাত্রদল তার মর্যাদা না দিয়ে ভয়েই মরল।
খেলা তৈরি করে তো মাঝমাঠ! সেখানে অ্যান্টনি পেরিরা বাদে সবাই অনভিজ্ঞ। সব সময় ভয়ে ভয়ে। কর্নারের সময় পর্যন্ত অ্যাটাকিং থার্ডে চার জনের বেশি নেই। যেন তাজিকরা রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে এসেছেন। বল পেলে সামনে এগোনোর বদলে হল স্কোয়ারপাস বা ব্যাক পাস। সঙ্গী গতিহীনতা ও বুদ্ধিহীনতা। জুয়েল, ভাসুমদের বসিয়ে স্যাভিও নির্ভর করেছিলেন গোয়ার চার মিডফিল্ডারের উপর। সেখানেই সমস্যার উৎপত্তি। প্রথমার্ধে ভারত সচল ছিল অভিজ্ঞ দুই সাইডব্যাক নবি ও সমীরের জন্য। পরের দিকে মাঝমাঠ এত নীচে নামল, উপরে সুনীল একা। নীচে গৌরমাঙ্গি দিশেহারা। নবি-সমীরও। এক ঘণ্টার সময় পাঁচ মিনিটে ২-০। দুটোই বিশ্রী গোল।
কী অবদান স্যাভিওর নতুন মাঝমাঠের?
আদিল খান: লং বল সামলাতে তাঁকে রাখা হয়েছিল। মাঝেমাঝে ভাল, মাঝেমাঝে খারাপ।
রোকাস লামেরে: দৌড় আর তাড়া করার জন্য রাখা হয়েছিল। একটাও হল না।
অ্যান্টনি পেরিরা: উইং দিয়ে দৌড়ের জন্য প্রথম দলে। দু’বার ওই দৌড় দেখা গেল। সবচেয়ে সিনিয়র মিডফিল্ডার রইলেন গুটিয়ে। সুনীলের পাস থেকে দারুণ জায়গায় বল পেয়ে মারলেন বাইরে। বিস্মিত গণেশ থাপার ভাষায়, “ওটাই টার্নিং পয়েন্ট”।
ফ্রান্সিস ফার্নান্ডেজ: স্যাভিওর চোখে তিনিই সেরা। কিন্তু মুভমেন্ট তৈরির কোনও চেষ্টা দেখা গেল না।
কাঠমান্ডুতে দশ-বারো ঘণ্টার লোডশেডিংয়ের বিশৃঙ্খলার মধ্যেও একটা শৃঙ্খলা রয়েছে। প্রতি মহল্লায় সরকারি তরফে ছাপানো হ্যান্ডবিল দিয়ে বলে দেওয়া হয়, ক’টা থেকে ক’টা লোডশেডিং। ভারতের মাঝমাঠের বিশৃঙ্খলায় সবটাই বিশৃঙ্খলা। ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডু’র জটায়ু এখানে থাকলে বলতেন, “কাঠমান্ডুতে ভারতের মাঝমাঠের কাটা মুণ্ডু দেখলাম।”
আগের দিন নেপালের খেলা দেখতে, ম্যাচ শুরুর পাঁচ ঘণ্টা আগে থেকে ভরদুপুরে লাইন। ফিফা প্রেসিডেন্ট ব্লাটারের পাশে উৎসাহ নিয়ে বসে প্রধানমন্ত্রী ভট্টরাই, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড। প্যালেস্টাইনের কাছে নেপালকে ০-২ হারতে দেখেও ব্লাটার এখানে বলে গেলেন, “প্রথম দিকে তো নেপাল বার্সেলোনার মতো পাসিং ফুটবল খেলছিল।” স্রেফ উৎসাহ দিতে বলা। ভারতকে দেখলে ব্লাটার কী বলতেন, ভাবার চেষ্টা করছি। দিল্লি রওনা হওয়ার আগে সকালেই তিনি বলেছিলেন, ভারতের উন্নয়নে সন্তুষ্ট নন। ভারতকে দেখে অন্তত বার্সেলোনার কথা তুলতেন না।
বার্সেলোনার এক নম্বর আগের দিন পাঞ্জা দেখানোর মতো পাঁচ গোল করেছেন। ভারতের এক নম্বর প্রথমার্ধে দুটো সিটার নষ্ট করে আশা শেষ করে দিলেন। সুনীল ছেত্রী কাঠমান্ডুতে বেশ জনপ্রিয়। নেপালি সাংবাদিকরা তাঁর ইন্টারভিউয়ের জন্য ঘুরছেন। দেখে মনে হল, রামবাহাদুর, শ্যাম থাপা, ভাইচুং ভুটিয়া, অমর বাহাদুর, নরিন্দর গুরুং, সিবি থাপার উত্তরাধিকারী তিনি। এ দিন প্রথমার্ধে যে দুটো সুযোগ সুনীল পেয়েছিলেন, তাতে গোল করলে ভারতের ছুটির ঘণ্টা বাজা শুরু হয়ে যেত না। উত্তর কোরিয়া অন্য ম্যাচে ফিলিপিন্সকে ২-০ হারিয়ে, সুনীলদের মুখের হাসি আরও উড়িয়ে দিল।
প্রথমার্ধে ভারতের দাপট দ্বিতীয়ার্ধে হারিয়ে গেল কী করে? দুই কোচের সাংবাদিক সম্মেলনে ওই একটা প্রশ্নই উঠল বারবার। স্যাভিও মাঝমাঠের বোঝাপড়ার অভাবের কথা বললেন। ক্লাইম্যাক্সদের অভাব টের পাচ্ছিলেন? স্যাভিও তখন দার্শনিক, “ফুটবলার আসে, ফুটবলার যায়।” বিপক্ষের বসনিয়ান কোচ স্পষ্টই বোঝালেন, ভারতের সেরা সুনীল ছেত্রীকে আটকাতেই ভারত শেষ। প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট ভারতকে মেপে তারা ধাক্কা দিল মাঝমাঠে। স্যাভিও এমন নতুন কিছু দেখাতে পারলেন না। চেনা ছক। চেনা বদল। অসহ্য সুশীল সিংহ না হলে ৮১ মিনিট পর্যন্ত মাঠে থাকেন! প্র্যাক্টিসে ভাল খেলার জন্য এতক্ষণ মাঠে!
তাজিকিস্তান রাশিয়ান ব্লকের টিম হতে পারে। কিন্তু আর্শাভিন বা শেভচেঙ্কোরা তাদের কাছেও দূরতম গ্রহ। বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপে খেলেনি কোনও দিন। এশিয়াডে দ্বিতীয় রাউন্ড পেরোতে পারেনি পর্যন্ত। ফুটবলারদের একজন মাত্র উজবেকিস্তানের ক্লাবে খেলেন। সবাই ঘরোয়া লিগের। এদের সামনেও এত আতঙ্ক হলে উত্তর কোরিয়ার সামনে কী হবে? হাউটন যাওয়ার পরে স্যাভিও তাঁর মতো প্রতি কথায় বলেন, দলের ‘শেপ’ রাখাটাই নাকি আসল। সেই ‘শেপ’টাই দেখা গেল না বিরতির পরে। শুধু আত্মসমর্পণের ‘শেপ’ দেখা গেল।
স্যাভিও মিদেইরার কাছে সার সত্যটা তা হলে কী দাঁড়াল?
একটাই। সাফ কাপ এবং এ এফ সি চ্যালেঞ্জ কাপে দিল্লি আর কাঠমান্ডুর মতোই ফারাক।
ভারত: করণজিৎ, সমীর, রাজু, গৌরমাঙ্গি, নবি, আদিল, ফ্রান্সিস, রোকাস, অ্যান্টনি (জুয়েল), সুনীল, সুশীল (জোয়াকিম)। |