কলকাতার ময়দান এখনও এক ডাকে চেনে সঞ্জয় মাঝিকে। বড় ক্লাবের জার্সি গায়ে এক সময়ে নজর কেড়েছিলেন গৌতম দে, অমিতাভ ঘোষেরা। দুর্গাপুরের সফল ফুটবলারদের তালিকাটা খুব একটা ছোট নয়। বাংলার ফুটবল ঐতিহ্যের সঙ্গে এক কালে পাল্লা দিয়ে এগোত দুর্গাপুর। সেই গরিমা অবশ্য এখন আর নেই। সারা বছর ধরে আয়োজিত হয় কিছু টুর্নামেন্ট। যদিও তা নিয়ে বিশেষ তাপ-উত্তাপ নেই শহরবাসীর।
তবে ফুটবল নিয়ে শহরবাসী উৎসাহ হারিয়েছেন, এ কথা ঠিক নয়। তার প্রমাণ মিলেছে গত অগস্টে। ভগৎ সিংহ ক্রীড়াঙ্গণে সে দিন ইস্টবেঙ্গল ও সিকিম ইউনাইটেডের খেলা দেখতে ঢল নেমেছিল মানুষের। তা হলে এলাকার ফুটবল নিয়ে অনাগ্রহ কেন? ক্রীড়া সংস্থার কর্তা থেকে প্রাক্তন খেলোয়াড়, সকলেরই মত, খেলার নিম্নমুখী মানই এর একমাত্র কারণ। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা জানান, খেলার মান বিশেষ আশাব্যাঞ্জক নয়। ভাল খেলোয়াড়ও উঠে আসছে না। তাই দর্শকেরা মুখ ফেরাচ্ছেন। ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, শহরের ফুটবলের সুদিন ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে তারা। সেই উদ্দেশে বছরখানেক ধরে ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামে একটি প্রশিক্ষণ শিবিরও চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্তারা। |
প্রায় আড়াই দশক আগে ফুটবলের প্রসারে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা শহরের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি সাব জুনিয়র প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেছিল। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তৎকালীন ‘দুর্গাপুর নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটি’। চালু হয় সাব-জুনিয়র ফুটবল লিগ। সে সময় বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে খেলোয়াড় কোটায় চাকরিও মিলত। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবলেও ছেলেকে উৎসাহ যোগাতেন অভিভাবকদের অনেকেই। পরের দিকে আর্থিক কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সংস্থাগুলি খেলোয়াড় কোটায় নিয়োগে রাশ টানে। পাশাপাশি, ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় জৌলুস হারায় শহরের ফুটবল। মহকুমা লিগে দলের সংখ্যাও কমতে থাকে। ১৯৯৮ সালে লিগ বন্ধই হয়ে যায়। প্রশিক্ষণ শিবিরগুলিও উঠে যায়।
বছর দুই পরে অবশ্য ফের লিগ চালু করে মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা। চালু হয় সাব-জুনিয়র লিগও। বেশ কিছু ক্লাব খুদেদের প্রশিক্ষণ শিবিরও চালু করে। কিন্তু খেলার মান আশানুরূপ হচ্ছিল না। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি থেকেও ভাল খেলোয়াড়ের খোঁজ মেলেনি। তাই একেবারে খুদে ফুটবলারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী হয় ক্রীড়া সংস্থা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় পুরসভা। ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামে সেই শিবির চলছে। শুধু দুর্গাপুর শহর নয়, আশপাশের গ্রাম থেকেও মোট ৩০ জন খুদে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সেখানে। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস পাল বলেন, “ছেলেদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে তাদের দেশের বিভিন্ন ফুটবল অ্যাকাডেমিতে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।” তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে অসুবিধা না হয় তাই সপ্তাহে তিন দিন সকালে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন স্বপন গুহ। তাঁকে সাহায্য করেন দিব্যেন্দু দত্ত ও সুব্রত সিংহ।
মোহনবাগান, মহমেডানে খেলা দুর্গাপুরের প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম দে বলেন, “মাঝে শহরে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছিল। তবে তা ফিরে আসছে। আমরা আশা রাখি, দুর্গাপুর থেকে আবার বেশ কিছু ভাল খেলোয়াড় ময়দান দাপাবে।” |