আন্তর্জাতিক এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করছি। ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলেছিলাম, ১৬ বছর হয়ে গেল। আজ মনে হয় এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। একটা সময় ভারতের আর পাঁচটা ছেলের মতো আমিও স্বপ্ন দেখতাম দেশের হয়ে খেলার। কিন্তু ভাবতে পারিনি আমার সফরটা এত দীর্ঘ হবে। এত তৃপ্তি পাব।
কোনও স্বপ্নই আপনি একা তাড়া করতে পারবেন না। ফিরে দেখলে মনে হয়, অনেককে আমার ধন্যবাদ দেওয়ার আছে। অনেক কিছু শেখানোর জন্য। ছোটবেলাতেই খেলাটার জন্য তীব্র ভালবাসা ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। যা আমার সঙ্গে থেকে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচেরা আমার শিল্পকে আরও উন্নত করেছেন। ব্যক্তিত্বে বদল এনেছেন। ফিজিও এবং ট্রেনাররা অনবরত চেষ্টা করেছেন আমাকে ফিট রাখার জন্য।
নির্বাচকদের কথায় আসি। বরাবর দেখে এসেছি, আমি নিজে যত না নিজের উপর বিশ্বাস রাখতাম, তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস নির্বাচকরা আমার উপর রাখতেন। যে সব অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলেছি, সবার থেকে সাহায্য পেয়েছি। প্রেরণা পেয়েছি ভাল খেলার। আমার ভাগ্য ভাল যে, কেরিয়ারের শুরুতে কর্নাটকের মতো টিমে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। আর জাতীয় দলে যখন ঢুকলাম, তখন সোনার সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল ভারতীয় ক্রিকেট। দেশে-বিদেশে ভাল ভাল ম্যাচ জিতছিল টিম। আমার টিমমেটদের অনেকেই পরে কিংবদন্তি হয়ে গিয়েছে। শুধু ভারতে নয়, ক্রিকেট বিশ্বে। আমি ওদের সম্মান করতাম, শেখার চেষ্টা করতাম। আজ আমি খেলাটা ছাড়ছি অসাধারণ সব স্মৃতি নিয়ে।
আমাকে ‘দ্য ওয়াল’ বলা হয়। কিন্তু আমি কখনও ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখিনি। কাগজের জন্য ভাল লাইন। লোকে আমাকে ওই নামে ডাকত। তাই সম্মান দিতাম। কেরিয়ারের সেরা ইনিংস কোনটা বাছতে বললেও পারব না। অনেকগুলো আসবে পর পর। কলকাতায় ১৮০, অ্যাডিলেডে ২৩৩, জামাইকার কয়েকটা ইনিংস...।
আর অস্ট্রেলিয়া সফরে খারাপ ফর্মের জন্য অবসর নিলাম এটাও ভাববেন না। প্রত্যেকটা সিরিজের পর নিজের খেলার বিশ্লেষণে বসতাম। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরার পর আবেগ বাদ দিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম। সচিনের সঙ্গে কথা বলেছি। বাকিদের সঙ্গে বলেছি। অনেক কিছু আছে এই সিদ্ধান্তের পিছনে। তবে অবসর নিয়ে কোনও দুঃখ নেই। বরং বলব, এটাই সঠিক সময় সরে যাওয়ার।
আমার পরিবারের কথা বলব। স্ত্রী বিজেতার কথা বলব। আমার জন্য কেরিয়ারের সঙ্গে আপস করেছে ও। বলব, ভারতীয় সমর্থকদের কথা। দেশ এবং দেশের বাইরেসমস্ত সমর্থকদের আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। ক্রিকেটের সৌভাগ্য যে সে আপনাদের পাশে পেয়েছে। আমার ভাগ্য যে আমি আপনাদের সামনে খেলতে পেরেছি। ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা তো আসলে আপনাদেরই প্রতিনিধিত্ব করা। ক্রিকেটের প্রতি আমার দর্শনটা খুব সহজ ছিল: টিমকে নিজের সর্বস্ব দাও। মাথা উঁচু করে খেলো। ক্রিকেটের স্পিরিট মেনে খেলো। আশা করি, কিছুটা অন্তত করে দেখাতে পেরেছি। ব্যর্থ হয়েছি কখনও-সখনও। কিন্তু চেষ্টা করে গিয়েছি সব সময়। তাই আজ ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর দিনে মন খারাপের সঙ্গে সঙ্গে গর্বও হচ্ছে। |