|
|
|
|
|
রাজ্যসভায় প্রার্থী দিচ্ছে সিপিএম-ই
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
|
শরিক-দাবি ঠেকিয়ে এ বারের রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চলেছে সিপিএম-ই। সেই মর্মেই এ কে জি ভবনের কাছ থেকে সঙ্কেত পেয়েছে আলিমুদ্দিন। বঙ্গ সিপিএম যে পথে এগোচ্ছে, পার্টি কংগ্রেসের পরে কেরলও সেই রাস্তায় হেঁটে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের ঘরণী তথা পলিটব্যুরোর একমাত্র মহিলা সদস্য বৃন্দা কারাটকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারে কিনা, বাম মহলে তা নিয়েই কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
গত বার এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় একমাত্র বাম প্রার্থী ছিলেন পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। এ বার ‘বাইরে থেকে’ কাউকে প্রার্থী করতে রাজি নন বিমান বসুরা। এ রাজ্য থেকেই বৃন্দার সাংসদ-পদ গত বছর ফুরিয়েছে। ফলে কারাট চেষ্টা করছেন এ বার কেরল থেকে বৃন্দাকে প্রার্থী করতে। ওই রাজ্য থেকে রাজ্যসভার তিনটি আসন খালি হবে আগামী ১ জুলাই। যার মধ্যে একটিতে এলডিএফের জয় নিশ্চিত। গত দু’টি রাজ্যসভা নির্বাচনেই এলডিএফ শরিকদের দাবি উপেক্ষা করেছিল সিপিএম। এ বারও শরিকি দাবি সরিয়ে রেখে বৃ্ন্দার জন্য বিজয়নেরা আসন বার করতে পারেন কি না, তা নিয়েই কৌতূহল।
রাজ্যসভায় এ বার রাজ্য থেকে ‘বাইরের লোক’ পাঠাতে হচ্ছে না আলিমুদ্দিনকে। শেষ মুহূর্তে কোনও বড় ‘অঘটন’ না-ঘটলে সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন ফের রাজ্যসভায় মনোনয়ন জমা দিতে চলেছেন। এই দফায় সিপিএমের তিন সাংসদ তপনবাবু, মইনুল হাসান ও সমন পাঠকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মেয়াদ ফুরোচ্ছে সিপিআইয়ের রামচন্দ্র সিংহেরও। গত বছর আরএসপি-র অবনী রায় এবং এ বার সিপিআইয়ের রামচন্দ্রের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রাজ্য থেকে ওই দুই শরিকের দলের কোনও সাংসদ রাজ্যসভায় থাকছেন না। ‘রোটেশন’ পদ্ধতিতে তাদের সুযোগ দিতে ‘ঘরোয়া ভাবে’ আলিমুদ্দিনের কাছে আগেই দাবি জানিয়েছিল বাম শরিকেরা। কিন্তু সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে শরিকদের সঙ্গে সিপিএমের অলিখিত ‘সমঝোতা’ হয়েছে ২০১৪ সালে এ রাজ্য থেকে একটি আসন শরিকদের ছাড়া হবে। সে বছর ফরওয়ার্ড ব্লকের বরুণ মুখোপাধ্যায়ের সাংসদ-পদের মেয়াদ ফুরনোর কথা।
বস্তুত, সিপিএমের অন্দরের রাজনীতিতে এ যাত্রায় সিটুই লাভবান হল বলে দলের একাংশ মনে করছে। সাধারণত দলের শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বা সর্বভারতীয় সভাপতির মধ্যে কাউকে রাজ্যসভায় সাংসদ করে সিপিএম। আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপনবাবু এবং সর্বভারতীয় সভাপতি এ কে পদ্মনাভন দু’জনেই পলিটব্যুরোয় যাওয়ার দাবিদার। সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, তপনবাবু রাজ্যসভায় গেলে তামিলনাড়ুর পদ্মনাভনের পলিটব্যুরোয় যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে তিনি প্রয়াত এম কে পান্ধের শূন্যস্থান পূরণ করবেন। দলের একাংশের মত ছিল, সংখ্যালঘু মুখের স্বার্থে মইনুলকে পুনর্নির্বাচিত করা হোক। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের যুক্তি, বিধানসভা এবং সংসদে এখন দলের যা শক্তি, তাতে শুধু সংখ্যালঘু মুখ বলেই কাউকে বিবেচনা করলে চলবে না। এ রাজ্য থেকে লোকসভায় সাইদুল হক সাংসদ আছেন। তাই তপনবাবুর দিকে ‘পাল্লা’ ভারী। পার্টি কংগ্রেস আসন্ন বলেই রাজ্যসভার সঙ্গে পলিটব্যুরোর গঠন অনেকটা জড়িয়ে গিয়েছে। তপনবাবু রাজ্যসভায় গেলে যেমন পলিটব্যুরোয় পদ্মনাভনের সম্ভাবনা বাড়বে, তেমনই মহম্মদ আমিন পলিটব্যুরো থেকে ‘অব্যাহতি’ নিলে তাঁর জায়গায় সংখ্যালঘু প্রতিনিধি হওয়ার লড়াই শুরু হয়েছে এ রাজ্যের দুই প্রাক্তন সাংসদের।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য অবশ্য বলছেন, “বামফ্রন্টে আলোচনার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।” শরিকেরাও এখন এ নিয়ে ‘বিদ্রোহ’ করার অবস্থায় নেই। আরএসপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “বাম ঐক্যের স্বার্থেই এখন যাবতীয় পদক্ষেপ করতে হবে। তপনবাবুর রাজ্যসভায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আমরাও বুঝতে পারছি।” এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় পঞ্চম আসনটির জন্য আপাতত কিছু ভাবছে না সিপিএম। বিধানসভার এখনকার বিন্যাস অনুযায়ী এ বার তৃণমূল পাবে তিনটি আসন। বামেরা একটি। পঞ্চমটির জন্য শাসক জোটের তরফে কোনও সর্বসম্মত প্রার্থী থাকলে তিনি জিতবেন। কিন্তু কংগ্রেস-তৃণমূলের সমঝোতা না-হলে এবং দু’দলই প্রার্থী দিলে ভোটাভুটি হবে। এক একটি আসনের জন্য প্রথম পছন্দের ৪৯টি ভোট লাগবে, এই অঙ্কে তিন প্রার্থীকে জিতিয়েও তৃণমূলের থাকবে ৩৮টি ভোট। কংগ্রেসের আছে ৪২টি ভোট। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং নির্দলদের ভোট তখন গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেই অবস্থায় তাদের বাড়তি ভোট কোনও এক পক্ষকে দিয়ে বামেদের জোটে ‘বিভাজন’ উস্কে দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “গত বছরের মডেলেই এ বার নির্বাচন হবে, এটাই ধরে নিয়েছি। একটাই আসনে আমাদের জেতার সুযোগ আছে। পঞ্চমটা নিয়ে ভাবছি না।” |
|
|
|
|
|