দল ডোবানো নেতারাই চিন্তা গডকড়ীর
ডোবাচ্ছেন দলের কিছু নেতাই। কিংবা কাজের কাজ কিছু করে উঠতে পারছেন না। অথচ ভোটের আগে কঠোর হলে অন্তর্ঘাত আরও বাড়ত। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ভরাডুবির পর এ বার এই সব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে খানিকটা সুবিধাই হবে নিতিন গডকড়ীর। উত্তরপ্রদেশে বিপর্যয়ের পরে তাই সংগঠনকে ঢেলে সাজতে চাইছেন বিজেপি সভাপতি। কয়েক দিনের মধ্যেই কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সেই কাজটা তিনি শুরু করে দেবেন।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, কৌশলগত ত্রুটি-বিচ্যুতি যা-ই থাক, ভোটের ফলে একটি বিষয় স্পষ্ট, উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু নেতার কোন্দলে প্রচুর খেসারত দিতে হয়েছে দলকে। খোদ রাজ্য সভাপতি সূর্যপ্রতাপ শাহি জিততে পারেননি। তিন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিও ভোটে হেরেছেন। রাজনাথ সিংহ, মুরলীমনোহর জোশীর মতো উত্তরপ্রদেশ থেকে আসা কেন্দ্রীয় নেতাদের গড়েও আসন পায়নি বিজেপি। দলের কোন্দল তো আছেই, এই সব তাবড় নেতারাও যে দলকে আসন এনে দিতে পারেননি, তারও প্রমাণ মিলছে।
কেন্দ্রে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসও ভাল কিছু করতে পারেনি। কিন্তু তারাও ৬ শতাংশ ভোট বাড়িয়েছে এই রাজ্যে। সেখানে বিজেপির ভোট কমে গিয়েছে ২ শতাংশের মতো। লোকসভা ভোটের মাত্র দু’বছর আগে, ভোটব্যাঙ্কের এই ক্ষয় অবশ্যই কপালে ভাঁজ ফেলার মতো ঘটনা। বিশেষ করে দেশের সব চেয়ে বেশি সাংসদের রাজ্যে। যে কারণে সংগঠনকে এখন থেকেই ঢেলে সাজা জরুরি বলে মনে করছেন গডকড়ী।
শাহি ইতিমধ্যেই গডকড়ীকে চিঠি লিখে রাজ্য সভাপতি পদে তাঁর ইস্তফা পাঠিয়ে দিয়েছেন। দলের নেতারাই কী ভাবে
ভাবাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ
তাঁকে হারিয়ে দিয়েছেন, তার উল্লখও করেছেন তাতে। কিন্তু গডকড়ী শিবিরের বক্তব্য, শাহি হোন বা কলরাজ মিশ্রের মতো নেতা, এঁদের নেতৃত্ব যে ব্যর্থ হয়েছে, সেটা স্পষ্ট। লখনউয়ে গোটা দল ঝাঁপিয়ে পড়ে কলরাজকে জেতাতে পেরেছে। কিন্তু একদা অটলবিহারী বাজপেয়ীর গড় লখনউয়ের অন্য আসন জেতাতে পারেননি কলরাজ।
ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর আপত্তি উপেক্ষা করেও সঞ্জয় জোশীকে উত্তরপ্রদেশে সংগঠনের দায়িত্বে নিয়ে আসেন গডকড়ী। জোশী আজ বলেন, “ভোটের এই ফল দেখার পরে দলকে এ বার সংগঠনে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। কাউকেই চার দশকের বেশি নেতৃত্বে রাখা উচিত নয়। এমন নেতা প্রয়োজন, যিনি সারা বছর ধরে তৃণমূল স্তরে মানুষের মধ্যে গিয়ে কাজ করবেন। কর্মীদের মনোবল বাড়াবেন।”
দু’বছর পরেই লোকসভা নির্বাচন। তাতে ভাল ফলের আশা করতে হলে এখন থেকেই ‘হোমওয়ার্ক’ করা প্রয়োজন, বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “পরিযায়ী পাখির মতো ভোটের তিন মাস আগে প্রস্তুতি শুরু করলে হবে না। সাধারণ মানুষের ছোটখাটো অসুবিধার দিকেও নজর দিতে হবে দলকে। পাড়ার রাস্তায় খানাখন্দ থেকে শুরু করে বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা এই সব নিয়েও সরব হতে হবে। ২০০৯-এর লোকসভা উপনির্বাচনে মুলায়মের খাসতালুকেই অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল হেরে গিয়েছিলেন। এতে না দমে তখন থেকেই সমাজবাদী পার্টি কাজ শুরু করে দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। বিজেপিকেও লোকসভায় ভাল ফল করতে হলে এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নিতে হবে।”
কিন্তু দলের কোন্দল ও অন্য সমস্যাগুলি কি আগে টের পাননি গডকড়ী? বোধদয় হল ভোটের পরে!
গডকড়ী শিবিরের এক নেতার মতে, “ভোটের আগে তখন রাজ্যের নেতাদের মধ্যে মতান্তর এত তীব্র ছিল যে, কঠোর কোনও পদক্ষেপ করলে দলের নেতারাই বিজেপিকে বিপাকে ফেলার ষড়যন্ত্র করতেন। এ বারের ভোটে যে সেটা হয়নি, তা-ও নয়। তবে কড়া পদক্ষেপ করলে তার মাত্রা আরও বাড়ত। এখন এই নেতারা নিজে ভোটে ব্যর্থ হওয়ায় পদক্ষেপ করতে সুবিধা হবে।”
ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে বিজেপি নেতারা দেখছেন, গত বারের চেয়ে এ বার আসন কমলেও ৫৫টি আসনে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এর সিংহভাগ কেন্দ্রে বিজেপি হেরে গিয়েছে মাত্র কয়েকশো ভোটের ব্যবধানে। ধর্মীয় মেরুকরণ থেকে এর আগে একাধিক ক্ষেত্রে লাভ পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে এ বার সংখ্যালঘু সংরক্ষণকে ঘিরে মেরুকরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে মুলায়মই একমাত্র সব থেকে বেশি সুবিধা পেয়েছেন। ফলে ভোট ভাগাভাগি হয়নি। যেখানে মুলায়মের সঙ্গে সরাসরি টক্কর হয়েছে, সেখানে প্রায় অবধারিত ভাবে বিজেপি হেরে গিয়েছে। তাই সংগঠনের সমস্যা মিটিয়ে ফেলাই শেষ কথা নয়, আগামী নির্বাচনগুলিতে বিজেপিকে নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসাবে মানুষের সামনে তুলে ধরার জুতসই কৌশলও খুঁজে নিতে হবে নিতিন গডকড়ীকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.