|
|
|
|
দু’শোরও বেশি অসুস্থ |
মুম্বইয়ে বিষ-রং মেখে মৃত শিশু |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
রঙের উৎসব বদলে গেল বিষাদে।
গত কাল গোটা দেশের সঙ্গে রঙে রঙে রঙিন হয়ে উঠেছিল বাণিজ্যনগরীও। বিপদ লুকিয়ে ছিল সেই রঙের মধ্যেই। রং খেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন মধ্য মুম্বইয়ের ধারাভি, সায়ন এবং ঘাটকোপার এলাকার মানুষজন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে অসুস্থের সংখ্যা। তাদের মধ্যে সিংহভাগই ৯ থেকে ১০ বছরের শিশু। দু’শোরও বেশি মানুষকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে মারা যায় ১৩ বছরের কিশোর ভিকি বাল্মিকী।
এই ঘটনায় ধারাভি থানায় একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। রঙে বিষক্রিয়ার কারণেই এই বিপর্যয় ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ। তবে রঙের নমুনা পরীক্ষার পরই প্রকৃত কারণ জানা যাবে জানিয়েছে তারা। এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। দু’সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে এই কমিটি।
ধারাভি-সায়ন-ঘাটকোপার এলাকায় তখন জমিয়ে চলছে দোল খেলা। ‘হোলি হ্যায়’ বলে একে অপরকে রং মাখাচ্ছেন আট থেকে আশি সকলেই। হঠাৎই আনন্দ-উল্লাস ঢেকে যায় আর্তনাদে। রং লাগার কিছু ক্ষণ পরেই শরীরে জ্বালা এবং চুলকানি শুরু হয় বাসিন্দাদের। সেই সঙ্গে মাথাব্যথা, বমি এবং শ্বাসকষ্ট। সারা শরীরে লাল লাল দাগ দেখা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ভর্তি করা হয় সায়ন, রাজওয়াড়-সহ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে। তবুও বাঁচানো যায়নি ঘাটকোপার এলাকার কিশোর ভিকিকে। কাল রাতে রাজওয়াড়ি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। |
|
ছেলেকে হারিয়ে বিহ্বল সতীশ বাল্মীকি। শুক্রবার মুম্বইয়ের হাসপাতালে। ছবি: এ এফ পি |
কী করে ঘটল এমন রং-দুর্ঘটনা?
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, ধারাভির একটি ময়লা ফেলার জায়গায় পড়েছিল নীল রং ভর্তি একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে বাচ্চারা। সেই রং দিয়ে খেলাতেই এই বিপত্তি। পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার প্রভাকর সাতাম বলেন, “ধারাভি এলাকায় একটি বড় চামড়ার কারখানা রয়েছে। চামড়া শিল্পে রং লাগে। হতেই পারে বাচ্চারা সেই বিষাক্ত রংকে ভুল করে হোলি খেলার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। সেই রং বিক্রিও হয়ে থাকতে পারে।” কোনও দোকান থেকে এই রং বিক্রি করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
কাল বেলা যত গড়িয়েছে, ততই হাসপাতালে বেড়েছে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা। অসুস্থ অবস্থায় ২১০ জনকে ভর্তি করা হয় সায়ন হাসপাতালে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছে বছর বারোর ছোট্ট নীতীন টাক। তার কথায়, “সকাল আটটার সময় থেকে আমি হোলি খেলা শুরু করি। বন্ধুরা আমাকে রং মাখিয়েছিল। দু’-তিন ঘণ্টা পর বাড়ি গিয়ে স্নান সেরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এর পর আর কিছু মনে নেই।” নীতীনের মা হুলি জানান, ঘুম থেকে ওঠার পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে নীতীন। সে হাঁটতেও পারছিল না। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
সায়ন হাসপাতালে অসুস্থদের দেখতে যান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুরেশ শেট্টি এবং নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী বর্ষা গাইকোয়াড। হাসপাতালের তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালের ডিন সন্ধ্যা কামাত বলেন, “দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা থাকায় আজ সকালেই এক জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে তিন জন আইসিইউ-তে।” তবে কাল রাত এগারোটা থেকে নতুন কোনও রোগী হাসপাতালে ভর্তি হননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবুও স্বস্তিতে নেই মুম্বইবাসী। তাঁদের সব রং যে ঢেকে গিয়েছে আতঙ্কের কালো ছায়ায়। |
|
|
|
|
|