|
|
|
|
পাচার রুখতে গিয়ে খুন আইপিএস অফিসার |
সংবাদসংস্থা • গ্বালিয়র |
আকরিক পাচার রুখতে চেয়েছিলেন। হাত তুলে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন পাথরে ভর্তি ট্রাক্টরের সামনে। প্রকাশ্যে, দিনের আলোয় ট্রাক্টরের ভারী চাকা পিষে দিয়ে গেল তাঁকে। রংয়ের উৎসবের দিনেও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মধ্যপ্রদেশের মোরেনায় মাফিয়াদের হাতে খুন হলেন আইপিএস অফিসার নরেন্দ্রকুমার সিংহ (৩০)।
পুলিশ বলছে খুনই করা হয়েছে নরেন্দ্রকে, তবে তা পূর্বপরিকল্পিত নয়। নিহতের বাবা অবশ্য আঙুল তুলেছেন পুলিশের দিকেই। তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় থানা এবং খনি-মাফিয়াদের মিলিত চক্রান্তেই খুন হয়েছেন নরেন্দ্র। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। প্রথমে ঘটনাটিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে বর্ণনা করলেও পরে সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের চাপে তড়িঘড়ি বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। অস্বস্তিতে পড়া বিজেপি সরকারের তুমুল সমালোচনায় নেমেছে কংগ্রেস।
কিন্তু এ খানেই শেষ নয়, ভিন্দ জেলায় আজও হামলা হয়েছে জয়দেবন নামে এক আইপিএস অফিসারের উপর। অভিযোগ, বেআইনি মদ বিক্রিতে বাধা দিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় মদ ব্যবসায়ীরা তাঁর উপর হামলা চালায়। এই ব্যবসায়ীরা বিজেপি বিধায়ক নরেন্দ্র সিংহের ঘনিষ্ঠ।
|
নরেন্দ্রকুমার সিংহ।
ছবি: পিটিআই |
বৃহস্পতিবার বিকেলের ঘটনা। মোরেনা জেলার বানমোর-এ খনি এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন আইপিএস অফিসার নরেন্দ্রকুমার সিংহ। তখনই ঘটে যায় ঘটনাটা। চম্বল রেঞ্জের ডিআইজি ডি পি গুপ্ত জানিয়েছেন, জিপে বসেই নরেন্দ্র দেখেন একটি ট্রাক্টরে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বেশ কিছু পাথরের টুকরো। এই এলাকায় আকরিক পাচারের ঘটনা নতুন নয়। মাফিয়াদের দৌরাত্মও চলছে অনেক দিন ধরেই। তাই সন্দেহের বশেই ট্রাক্টর থামাতে নির্দেশ দেন তিনি। তাতে আমল না দিয়ে এগিয়ে যায় ট্রাক্টর। এরপর দ্রুত গতিতে জিপ চালিয়ে ট্রাক্টরের পথ আটকে দাঁড়ান নরেন্দ্র। নেমে আসেন জিপ থেকে। দু-হাত তুলে দাঁড়ান। ট্রাক্টর-চালক না থেমে নরেন্দ্রকে পিষে দেয়। গ্বালিয়রের হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এ দিকে পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক ট্রাক্টরের চালককে গ্রেফতারের পর জেরা করে এমন কোনও তথ্যই মেলেনি যা থেকে বলা যায় পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়েছে নরেন্দ্রকে। মনোজ গুর্জর নামে ওই চালকের মোবাইলের কললিস্টও তেমন কোনও যোগসূত্রের সন্ধান দিতে পারেনি। ডিআইজি ডি পি গুপ্ত স্পষ্টই জানিয়েছেন, “দুর্ঘটনা নয়, এটা খুন। নরেন্দ্র হাত তুলে দাঁড়াতে বলার পরেও চালক ট্রাক্টর চালিয়ে দেয়। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা এমন কোনও প্রমাণ পাইনি যা থেকে বলা যায় যে পরিকল্পনা করে তাঁকে খুন করা হয়েছে।”
২০০৯ সালে আইপিএস হন নরেন্দ্র। এক মাস আগে বানমোর-এ এসডিওপি হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি। প্রথম থেকেই আকরিক পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এর আগেও বেশ কয়েক বার ট্রাক্টর ও ট্রাক আটকে তা থেকে পাচার হওয়া আকরিক উদ্ধার করেন নরেন্দ্র। তাঁর স্ত্রী মধু তেওয়াতিয়া এক জন আইএএস অফিসার। তিনি এখন গর্ভবতী। মাতৃত্বের ছুটিতে রয়েছেন। এই সময়ে নরেন্দ্রর নিহত হওয়ার ঘটনা মথুরায় তাঁর পরিবারকে শোকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আজই মথুরায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হচ্ছে। নরেন্দ্রর বাবা কেশব সিংহ বলেন, “পুলিশ যদি সহযোগিতা করত তা হলে এমন ঘটনা ঘটতেই পারত না। কিন্তু স্থানীয় থানার সঙ্গেই নরেন্দ্র’র সম্পর্ক ভাল ছিল না। আমি অনেক বার বুঝিয়েছিলাম সাবধানে থাকতে। শুনল না।”
এই ব্যাপারে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্নও তুলেছেন নরেন্দ্র’র বাবা কেশব সিংহ“কেন রঙের উৎসবের মধ্যে খনি এলাকায় টহল দিতে বেরোলেন নরেন্দ্র? খুন করা হবে বলেই কি পাচারের ভুয়ো খবর দিয়ে ওকে ওই এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল?” কেশবের আরও প্রশ্ন, “এক জন আইপিএসের তো একা একা ট্রাক্টরের পিছনে ধাওয়া করে পাচার আটকানোর কথা নয়। এলাকার পুলিশ বাহিনী সঙ্গে যায়নি কেন?”
গত কাল ঘটনাটিকে ‘দুর্ঘটনা’ বললেও আজ চাপের মুখে‘খুন’-এর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উমাশঙ্কর গুপ্ত। তিনি বলেন, “ওই আইপিএস-কে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে কিনা তা তদন্তে স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
আজই সচিবালয়ে রাজ্যের মুখ্য সচিব অবনী বৈশ্য এবং ডিজিপি নন্দন দুবের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে করেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। এর পর এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “গোটা ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” চৌহান আরও বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এই নিয়ে কংগ্রেসের রাজনীতি করা উচিত নয়।”
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস অবশ্য সুযোগ বুঝে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে আসরে। মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা অজয় সিংহ বলেন, “রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতখানি অবনতি ঘটেছে বোঝাই যাচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে আইপিএস অফিসার খুন হয়ে যাচ্ছেন।”
এআইসিসি’র সাধারণ সম্পাদক দ্বিগ্বিজয় সিংহ বলেন, “নরেন্দ্রকুমার সিংহকে যে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে তা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহই নেই।” |
|
|
|
|
|