বৈঠক সাংসদদের সঙ্গে
রাজ্য নিয়ে সরব হয়েও কেন্দ্রকে বিপন্ন না করতে নির্দেশ মমতার
রাজ্যের অধিকার নিয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হতে হবে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, তাঁর দল তৃণমূল কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারকে বিপন্ন করতে চায়। সুতরাং এমন কোনও ‘বার্তাও’ যেন কারও আচরণে না যায়। শুক্রবার মহাকরণে দলের সাংসদদের সঙ্গে আলোচনায় এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের পরে মমতা নিজেও বলেছেন, “আমরা বিশ্বাসঘাতক নই। কেন্দ্রীয় সরকারকে বিপাকে ফেলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা অন্তর্বর্তী নির্বাচন চাইছি না। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটও ছিন্ন করতে চাইছি না।”
গত বুধবার রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী এক ইংরেজি দৈনিকের আলোচনাচক্রে মন্তব্য করেন, উত্তরপ্রদেশে ভোটের পর অন্তর্বর্তী নির্বাচন অনিবার্য। তৃণমূলও এই ভোটের জন্য প্রস্তুত। তাঁর এই মন্তব্যের পরেই জোর জল্পনা শুরু হয়। মমতা দীনেশের উপরে ‘ক্ষুণ্ণও’ হন। তার পরে নিজেই উদ্যোগী হন এই নিয়ে যাবতীয় জল্পনার অবসানে। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে দীনেশ পরে জানিয়ে দেন, এটি তাঁর নিজস্ব বক্তব্য। মমতাও গত কালই সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলকে জানিয়ে দেন, তাঁরা ‘বিশ্বাসঘাতক’ নন। সরকারকে বিপাকে ফেলে অন্তর্বর্তী নির্বাচনও তাঁরা চাইছেন না। এ দিন সাংসদদের বৈঠকে মমতা রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই জানান, দীনেশ তাঁর ‘ভুল’ স্বীকার করে নিয়েছেন। দুঃখপ্রকাশও করেছেন। অতঃপর ঠিক হয়, কোনও সাংসদই সংবাদমাধ্যমে তাঁর ‘নিজস্ব’ মতামত দিতে পারবেন না। দলের অনুমোদিত ‘লাইন’ই বলতে হবে। ফলে ওই বিষয়ে মমতার ‘অবস্থান’ খুব স্পষ্ট।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটে ভাল ফল করতে পারেনি কংগ্রেস। তার পর থেকেই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের ধারণা, মমতা, মুলায়ম, জয়ললিতা এবং নীতীশ কুমার এই চার জন অকাল লোকসভা নির্বাচনে যেতে আগ্রহী হতে পারেন। সেই লক্ষ্যে তাঁরা কেন্দ্রকে বিভিন্ন বিষয়ে চাপে রাখবেন। শরিক এবং সমর্থকরা অদূর ভবিষ্যতে সমর্থন প্রত্যাহারও করতে পারেন। কিন্তু মমতা এ বার নিজেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়ায় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যথেষ্ট আশ্বস্ত।
দিল্লির অনেকেই মনে করছেন, কংগ্রেস এবং তৃণমূল, দু’পক্ষেরই দু’পক্ষকে প্রয়োজন। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের পরে মমতার উপরে কংগ্রেসের নির্ভরতা আরও বেড়ে গিয়েছে। সনিয়া নিজেও দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে। এখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যসভা ভোট, সব ক্ষেত্রেই তৃণমূল নেত্রীর সাহায্য প্রয়োজন। আবার উল্টো দিকে, আর্থিক সাহায্য চেয়ে প্রথম থেকেই কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী মমতা। তিনি যে দিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন, তার এক দিন আগে মনমোহন সিংহকে একটি চিঠি দিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র তিন বছরের জন্য সুদ না নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। এ দিনও মহাকরণে দলনেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আর্থিক ভাবে রাজ্য সরকার পঙ্গু। বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা সুদ-সহ ঋণ শোধ করতে হচ্ছে। তাই পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে কেন্দ্রকে আলাদা করে ভাবতেই হবে।
তাই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙতে না-চাইলেও বা কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারকে ‘বিপাকে’ ফেলতে না চাইলেও সংসদের অধিবেশন চলাকালীন জিরো-আওয়ারে এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজ্যের অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া নিয়ে সাংসদদের ‘সরব’ হওয়ার নির্দেশই দিয়েছেন মমতা। রাজ্যের অর্থনীতির হাল-হকিকতও বুঝিয়ে বলেছেন। জানিয়েছেন, রাজ্যের দাবিদাওয়া এবং প্রাপ্য নিয়ে ‘সরব’ হতে হবে। এমনকী, ফরাক্কা ব্যারেজের জল, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এ সব নিয়ে লোকসভা এবং রাজ্যসভার ভিতরে তো বটেই, প্রয়োজনে সংসদের বাইরে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসার রাস্তাও খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “চার দিকে এমন প্রচারের চেষ্টা চলছে, যেন আমরা ইউপিএ সরকারকে বিপন্ন করার চেষ্টা করছি। এটা ভুল। বিষয়টা মোটেই তেমন নয়। তবে রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা সরব হব।” তৃণমূল সূত্রের কথায় স্পষ্ট যে, মমতা চান কেন্দ্রও রাজ্যের দাবিদাওয়া এবং উন্নয়নের প্রশ্নে তাঁর ‘পাশে’ থাকুক।
আবার পেট্রোল, ডিজেল-সহ পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধি যাতে না হয়, তার জন্য কেন্দ্রের উপরে চাপ দেবে তৃণমূল। আজ কলকাতায় মহাকরণে সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। পরে সুদীপবাবুও সাংবাদিকদের জানান, এনসিটিসি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে দলীয় ‘কৌশল’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসদে প্রতিবাদ করব আমরা। সারের ভর্তুকি নিয়েও কেন্দ্রের নীতি মানব না। এতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশের কৃষকদের স্বার্থ জড়িয়ে।”
এর আগেও যে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিবাদের ফলে কেন্দ্র পিছিয়ে এসেছিল, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
মমতার এ দিনের মন্তব্য এবং দলের সাংসদদের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট যে, ইউপিএ সরকারকে ‘বিপাকে’ ফেলতে না চাইলেও নিজের রাজ্য এবং আমজনতার ‘স্বার্থবাহী’ বিষয়গুলি নিয়ে তিনি কংগ্রেস তথা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আগের মতোই লড়ে যাবেন। তৃণমূলের এক গুরুত্বপূর্ণ সাংসদের কথায়, “এর আগেও তো আমরা জনস্বার্থে জড়িত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বলেছি। আমাদের সেই অবস্থানই রয়েছে এবং থাকবে। এর সঙ্গে পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলাফলের কোনও সম্পর্ক নেই! যাঁরা সেই আশা করছেন, তাঁরা অচিরেই তাঁদের ভূল বুঝতে পারবেন।” তবে একই সঙ্গে মমতা কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানাচ্ছেন, এই বিষয়গুলি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তিনি সমস্যার সমাধান করতে চান।
এরই মধ্যে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতর থেকে মমতার কালীঘাটের বাড়ি সংলগ্ন দফতরের ফোন নম্বর চাওয়ায় রাজ্য বিজেপি-তে জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, মোদীর আপ্ত-সহায়ক পটেল গত বুধবার রাজ্য বিজেপি দফতরে ফোন করে মমতার কালীঘাটের দফতরের ফোন নম্বর চান। তিনি জানান, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়ের এক অফিসারকে ওই নম্বর দিতে হবে। মোদী-মমতা কথা হয়েছে, এমন কোনও খবর এখনও মেলেনি।
তবে যে সমস্ত বিষয়ে মোদী, মমতা সহ দেশের কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীর ‘অবস্থানগত’ মিল রয়েছে, সেই বিষয়গুলিতে কেন্দ্র-বিরোধিতায় মমতাকে ‘পাশে’ পেতেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর ‘সক্রিয়’ বলে বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.