গরিমায় ঘুণ/১
জাদুঘরের প্রত্ন-রত্নে নোনা ধরাচ্ছে মার্বেলের জেল্লা
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের ‘গান্ধার স্তূপ’-এর গা থেকে ঝুরঝুর করে খসে পড়ছে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সব কারুকাজ। স্তূপের নীচের অংশে চতুষ্কোণ বেদির চারপাশে উৎকীর্ণ শাক্যমুনি বুদ্ধের জীবনের নানা কাহিনির দৃশ্যপটে ধরেছে নোনার ভাঙন।
কলকাতার ‘গর্ব’ ভারতীয় জাদুঘরের অমূল্য প্রত্ন-সম্ভারে এমনই ক্ষয়ের ছোপ। এর অন্যতম দৃষ্টান্ত গান্ধার স্তূপ। যার দেখা বিশ্বের অন্য কোনও কোনও জাদুঘরে মিলবে না। এমনকী, গান্ধার শিল্পের ‘স্বভূমি’ আফগানিস্থান বা পাকিস্তানেও নয়। এটির ‘বেস’-এর চারপাশে আটটি কাহিনি-দৃশ্য উৎকীর্ণ। কিন্তু দু’পাশের কাজ গত ক’বছরে ঝরে গিয়েছে। গান্ধার গ্যালারিতে গেলেই দেখা যাবে, একটু উঁচুতে রাখা কাচে ঘেরা দু’হাজার বছরের প্রাচীন স্তূপটির দু’পাশে জমে রয়েছে ঝরে পড়া পাথরের গুঁড়ো!
শুধু গান্ধার স্তূপ নয়। একই ভাবে ভারহুত গ্যালারি বা মথুরা গ্যালারির কিছু কিছু দুর্লভ মূর্তি ও প্রদর্শসামগ্রী দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ দিকে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এই জাদুঘরের দু’শো বছর পূর্তি হচ্ছে ২০১৪ সালে।
ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে এই গান্ধার স্তূপ। নিজস্ব চিত্র
দ্বিশত বর্ষপূর্তি উদ্যাপন সমারোহের তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গিয়েছে। অতিকায় ভবনটির সংস্কার ও রঙের কাজে হাত পড়েছে। অথচ জাদুঘরের আসল যে সম্পদ, সেই প্রাচীন প্রত্ন সামগ্রীগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে নজর দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
এবং ঘটনা হল, বেলেপাথর সরিয়ে জাদুঘরের ওই সব গ্যালারির মেঝে মার্বেল-মোজাইকে ঢেকে দেওয়ার পরেই, গত ক’বছরে জাদুঘরের ঐশ্বর্যভাণ্ডারে এই ক্ষয়ের গতি তরান্বিত হয়েছে বলে মনে করছেন পুরা-বিশেষজ্ঞদের একটি মহল। কেন?
কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরের প্রাক্তন অধিকর্তা তথা জাতীয় জাদুঘরের ডিরেক্টর জেনারেল শচীন্দ্রশেখর বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, “একতলায় মেঝেতে গোড়া থেকেই বেলেপাথরের টালি পাতা ছিল। মাটি থেকে যে লবণাক্ত জলীয় বাষ্প (অর্থাৎ নোনা) ওঠে, তা বেলেপাথরের সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারত। কিন্তু মেঝে মার্বেল আর মোজাইকে বাঁধিয়ে দেওয়ায় নোনা বেরোনোর সেই রাস্তা বন্ধ। মেঝের উপরে কিংবা বেদিতে রাখা ভাস্কর্য ও প্রস্তরের নিদর্শনগুলোই এখন নোনা শুষে নিচ্ছে। ফলে ক্ষয়ে যাচ্ছে দ্রুত।” জাদুঘর সংস্কার কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন ঘরে মেঝের বেলেপাথর সরিয়ে মোজাইক ও মার্বেল পাথর বসানো হয়েছে। “সর্বনাশের সেই শুরু।” মন্তব্য শচীনবাবুর।
‘সর্বনাশের’ কোপ থেকে জাদুঘরের অমূল্য সম্পদকে রক্ষা করার কাজ অনেক আগেই শুরু করার কথা ছিল। করা হয়নি। কেন? কলকাতা জাদুঘরের অধিকর্তা অনুপ মতিলালের বক্তব্য: শিল্পের কাজ পুনরুদ্ধারে (রেস্টোরেশন) অভিজ্ঞ এক অফিসারকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন গান্ধার স্তূপকে বাড়তি ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে। তবে ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশগুলো যে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়, অনুপবাবু তা-ও জানিয়ে রাখছেন।
রক্ষণাবেক্ষণে ‘অবহেলা’র পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গ্যালারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। যেমন, প্রাগৈতিহাস গ্যালারি। ‘নতুন করে সাজানোর’ উদ্দেশ্যে হরপ্পা-মহেঞ্জোদরো-লোথাল থেকে সংগৃহীত সিন্ধু সভ্যতার বহু নিদর্শনে সমৃদ্ধ গ্যালারিটিকে ভেঙে ফেলা হয় ১৯৯৭-এ। পনেরো বছর কেটে গিয়েছে, কিন্তু তা আর খোলেনি। ২০০৫-এ ভেঙে ফেলা দর্শকদের অতি প্রিয় বাদ্যযন্ত্রের গ্যালারিটিও ফিরে আসেনি।
অথচ প্রদর্শসামগ্রীর ক্ষয় চিহ্নিত করার জন্য কলকাতা জাদুঘরে একটি ‘ফিজিক্যাল ভেরিফিকেশন কমিটি’ আছে। যার সদস্যদের কাজ হল, মাঝে মাঝে সমস্ত সংগ্রহ খুঁটিয়ে দেখে সেই সব সামগ্রীকে চিহ্নিত করা, যেগুলো নষ্ট হতে পারে, কিংবা যাতে ক্ষয় ধরে গিয়েছে। পরে সেগুলি পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা করেন জাদুঘর-কর্তৃপক্ষ। কমিটি শেষ কবে সরেজমিন পরিদর্শন করেছে?
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ তা জানাতে পারেননি। কমিটির চেয়ারপার্সন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস কস্তুরী গুপ্ত মেনন পারিবারিক কারণে দীর্ঘ দিন দিল্লিতে। বস্তুত, কলকাতা জাদুঘরের সঙ্গে বেশ কিছু কাল তাঁর কোনও যোগাযোগই নেই। তাই এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতেও তিনি
রাজি হননি।
তা হলে দায়িত্বটা কার?
(চলবে)
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.