রাজ্য বিজেপি-র ‘মুখরক্ষা’ হল!
দুর্ঘটনায় আঘাত লাগল মাথায়। কিন্তু অক্ষত রইল মুখ। মানে বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে রাজ্য বিজেপি-র মুখ শমীক ভট্টাচার্য।
বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শমীকবাবুকে আমবাঙালির অনেকেই চেনেন টিভি চ্যানেলের সান্ধ্য বিতর্কের সূত্রে। কিন্তু পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণ এবং সে সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতা পুলিশের কমিশনার রঞ্জিত কুমার পচনন্দার ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য নিয়ে সম্প্রতি চ্যানেলগুলিতে যে ঝড় উঠেছিল, তার কোনওটিতেই শমীকবাবুকে
|
শমীক ভট্টাচার্য |
দেখা যায়নি। তিনি ‘গৃহবন্দি’। দুর্ঘটনায় বেঁচে ফিরলেও আপাতত চিকিৎসকদের নির্দেশে বাড়িতে বিশ্রামে। মাথায় মোট ৭৩টি সেলাই পড়েছিল। সেলাই কাটার পরে এখন ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধা। দুর্ঘটনার অব্যবহিত পরে বিজেপি শিবিরে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল শমীকবাবুর মুখ একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। মাস ছয়েক পর প্লাস্টিক সার্জারি করাতে হতে পারে। চিকিৎসকরাও সেকথা বলেছিলেন। কিন্তু বিধাননগরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ভয়ের কারণ নেই। দ্রুত সেরে উঠছেন শমীকবাবু। মাথায় ব্যান্ডেজ। কিন্তু মুখে দাগ নেই। বোঝা গেল, বিজেপি-র ‘মুখ’ বদলাবে না।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বীরভূম যাওয়ার পথে গাড়িতে ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর জখম হন শমীকবাবু, আর এক বিজেপি কর্মী শুভেন্দু চক্রবর্তী এবং গাড়ির চালক গোরা বসাক। দুর্ঘটনা ঘটেছিল বর্ধমানে। তিন জনকেই সেখানকার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। পর দিন তিন জনকেই দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে আনা হয়। শমীকবাবু ওই হাসপাতালেই কয়েক দিন ভর্তি ছিলেন। সেখানে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। তার পর থেকেই তিনি গৃহবন্দি।
এবং বন্দি বাঘের মতো অস্থির পায়চারি রত। বারান্দা এবং ঘরে। কেমন আছেন প্রশ্ন করলে বলছেন, “পিঠে একটা ব্যথা ছাড়া আর সব দিক থেকেই ভাল আছি। শুধু বাড়িতে আর আটক থাকতে পারছি না।” চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞা নয়, পিঠের ব্যথাই তাঁকে বাড়িতে থাকতে বাধ্য করছে এবং বারান্দা বা চেয়ার থেকে মাঝে মধ্যে বিছানায় ঠেলে দিচ্ছে। যেখানে তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছে ‘শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বা ‘নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কবিতা’। তবে তাতেও আক্ষেপ রয়েছে, “একটানা বেশি ক্ষণ বই পড়তে পারছি না।”
একে রাজনৈতিক নেতা। তায় অকৃতদার এবং স্বঘোষিত ‘বোহেমিয়ান’। ফলে শমীকবাবুর চর্যা মূলত পাঠ এবং ভ্রমণমূলক। শরীর সম্পূর্ণ সারেনি বলে এখন পাঠে প্রায়ই ছেদ পড়ছে। আর ভ্রমণ আটকে রয়েছে চিকিৎসকের চেম্বার পর্যন্ত। আপাতত তাঁকে দেখতে-আসা লোক জনের সঙ্গে গল্পগাছা করেই দুনিয়াদারির অভ্যাস বজায় রাখছেন। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় ঘুরে গিয়েছেন। দলের অন্য নেতা-কর্মীরাও আসছেন। এসেছিলেন তাঁর টিভি চ্যানেলতুতো বন্ধু কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকারও। কখনও দুর্ঘটনা-সঙ্গী শুভেন্দুবাবু। সকলকেই নিজের লন্ডন-আমেরিকা ভ্রমণের কাহিনী শোনাচ্ছেন রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক। লন্ডনে ভাই আর আমেরিকায় বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ বা রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে মত বিনিময় করছেন। আসলে আশঙ্কা আছে। অনুশীলন না-করলে পাছে টিভি চ্যানেলে উদয়ের দিনে ‘আনকোরা’ লাগে নিজেকে! দক্ষতায় যদি মরচে পড়ে যায়! আপাতত দূর-দর্শকদের অভাবে নিকট-দর্শকদেরই সে সব বলছেন শমীকবাবু।
রক্ষা যখন হয়েইছে, মুখ পাল্টালে চলবে না রাজ্য বিজেপি-র। |