আগামী এক বছরে পরিবেশ ও পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চলেছে জলপাইগুড়ি পুরসভা। ২০১২-১৩ সালের অর্থিক বছরের জন্য পুরসভার ১১৫ কোটি টাকার পুর বাজেটে পরিবেশ ও পর্যটনের জন্য ২০ শতাংশেরও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী আর্থিক বছরের বাজেট তৈরির আগে পুরসভার চেয়ারম্যান পরিষদের বৈঠকেই পরিবেশ এবং পর্যটনের জন্য আলাদা প্যাকেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো তিস্তা নদীর বাঁধের জুবলিপার্ক থেকে করলা নদীর পাশে শিশু উদ্যান পর্যন্ত রোপওয়ে সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। বাজেটে এই খাতে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পুরসভার মতে, রোপওয়ে সার্ভিস চালু হলে জুবলিপার্ক থেকে শিশু উদ্যান এলাকাটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডলে প্রকল্পটি রূপায়ন করার কথা বাজেটে বলা হয়েছে। এরজন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এ ছাড়া জলপাইগুড়ি শহরের বৈকুন্ঠপুর রাজবাড়ির সংস্কারে প্রায় ৫ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ির দীঘি সংস্কারেই তিন কোটি টাকার বেশি খরচ করা হবে। শহরের বুক চিরে যাওয়া করলা নদীতে গত বছরের বিষকাণ্ডের পরে সংস্কারের জন্য স্বাভাবিক ভাবেই পৃথক সংস্থান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিস্তা নদীকে দুষণমুক্ত করা, ফকিরাপাড়া সহ শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকার পাশে পার্ক তৈরি করার জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “শহরের রাস্তা, নিকাশি, আলোর উন্নয়ন তো হবেই। সেই সঙ্গে পরিবেশ ও পর্যটনকে বাড়তি গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। শহরে পর্যটকদের আকর্ষণ করার নানা সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলিকেই পুরসভার তরফে বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেটে এই জন্য আলাদা সংস্থান করা হয়েছে।” ইতিমধ্যে পুরসভার তরফে বছর খানেক আগেই শহরে প্ল্যাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও পুরসভার সেই উদ্যোগে তেমন ফল মেলেনি বলে বাসিন্দারা জানাচ্ছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, শহরের সর্বত্র যথেচ্ছভাবে প্ল্যাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছে। চলতি সপ্তাহে পেশ করা পুরসভার বাজেটে শহরকে দূষণমুক্ত রাখতে প্ল্যাস্টিকের বিরুদ্ধে বড়মাপের অভিযান চালানোর কথা বলা হয়েছে। অভিযান চালানোর আগে প্ল্যাস্টিক ব্যবহারের কুফল নিয়ে সচেতনতা প্রসার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই খাতেও ১ কোটি টাকার সংস্থান রেখেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “প্ল্যাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ে এবার দীর্ঘস্থায়ী অভিযান চালানো হবে। শহরের বাসিন্দারা নিজেরা সচেতন না হলে পুরোপুরি প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই সচেতনতা প্রসারের জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হবে।” এবার জলপাইগুড়ি শহরকে পুরোপুরি প্ল্যাস্টিক মুক্ত শহর ঘোষণার লক্ষ্য বাজেটে রাখা হয়েছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলার প্রমোদ মন্ডল বলেন, “পুরসভার বাজেটে প্রতিবারই সব রকমের ভালো ভালো কথা লেখা থাকে। কিন্তু কোনটারই রূপায়ন দেখা যায় না। এ বারের বাজেট অধিবেশন বিরোধীরা বয়কট করেছে। আমরাও চাই পরিবেশ-পরিকাঠামোর উন্নতি হোক।” |