গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্রের ছাড়পত্র মিললে পাহাড়ে পর্যটন প্রসারের কাজ রাজ্য সরকার কী ভাবে করবে, সেই প্রশ্ন তুলল দার্জিলিং জেলা সিপিএম। সোমবার শিলিগুড়িতে দলীয় অফিসে বসে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে গিয়ে কদিন টানা থেকেছেন। তিনি নানা পর্যটন সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য পর্যটন সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। আবার উনিই (মুখ্যমন্ত্রী) বলছেন, জিটিএ গঠন শীঘ্রই হবে। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, পাহাড়ের পর্যটন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্ব বর্তাবে জিটিএ-এর উপরে। তা হলে রাজ্য সরকার কী ভাবে পাহাড়ে পর্যটন প্রসার করবে? সে ক্ষেত্রে জিটিএ-এর কোনও ভূমিকাই তো থাকবে না?”প্রাক্তন পুরমন্ত্রী জানান, সুবাস ঘিসিংয়ের সঙ্গে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গঠনের পরেও পর্যটনের দায়িত্ব তাঁদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য জীবেশ সরকারের কটাক্ষ, “কোনও বিষয়ের গভীরে না-গিয়ে হালকা চালে মন্তব্য করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা অনেকটা ইতিহাস পড়ে ভূগোল পরীক্ষা দিতে চলে যাওয়ার মতো ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তো সবই দেখছেন। বুঝতেও পারছেন।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য পরিষদ গঠন হয়। পরিষদের আওতায় নানা দফতর তৈরি করা হয়। ডিজিএইচসি পর্যটন দফতর এর অন্যতম। সুবাস ঘিসিং এই দফতরের মাধ্যমেই নানা প্রকল্পের কাজ করেন। একমাত্র কালিম্পঙের ‘মর্গান হাউস’ রাজ্য সরকারের হাতে রয়েছে। রাজ্য সরকারের পার্বত্য বিষয়ক দফতরের মাধ্যমে কেবলমাত্র কিছু অনুদান এবং পাহাড়ের পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়। বর্তমানে জিটিএ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে একই প্রক্রিয়ায় মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে আইন না বদলে পাহাড়ের প্রকল্প সরাসরি রাজ্যের কোনও দফতর নিতে পারে না বলেও প্রাক্তন পুরমন্ত্রীর অভিমত। তবে অশোকবাবুর মন্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্য সরকার এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “ওঁর কথাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। উনি তো জনপ্রতিনিধিও নন।” আর মোর্চার প্রচার সচিব তথা বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের উন্নতির জন্যই অনেক কিছু বলেছেন। তা নিয়ে অশোকবাবুদের বেশি ভাবতে হবে না। পাহাড়ের সব কাজই জিটিএ-এঅর মাধ্যমে হবে। পর্যটন থেকে অন্যান্য বিষয়, জিটিএ-র মাধ্যমে কোন কাজ কী ভাবে করতে হবে তা আমরা ঠিক করে নেব।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অবশ্য মোর্চা নেতাদেরও পাল্টা কটাক্ষ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “হয়তো সব মামলা তুলে নেওয়ার আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন, সে জন্য মোর্চা আপাতত চুপ করে সমস্ত কথাই শুনছে। এমনও হতে পারে, মদন তামাং হত্যা মামলায় অভিযুক্তরা ছাড় পেতে পারে। আবার নির্বাচনের বদলে জিটিএ মনোনীত প্রতিনিধিদের দিয়েও চালানোর চেষ্টা হতে পারে। আমরা সব কিছুই খেয়াল রাখছি। তেমন কোনও পদক্ষেপ করলে বিরোধিতা করতে বাধ্য হব।” মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী অবশ্য জানান, তাঁরাও মদন তামাং হত্যা মামলার বিচার চান। তিনি বলেন, “আমরা শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছি। মদনবাবুর খুনিদের সাজা চাই।” |