র্যাগিং-মারধরের ঘটনাটি ১২ দিন আগে ঘটেছে বলে অভিযোগ। বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বা বেসু-র জনা কুড়ি ছাত্রের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ জানিয়ে শিবপুর থানায় এফআইআর করা হল সোমবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমেই এফআইআর করেছেন বেসু-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শীর্ষক দে। তাঁর অভিযোগ, পুরনো শত্রুতা থেকেই এই হামলা এবং তিনি নিরাপত্তার এতটাই অভাব বোধ করছেন যে, হস্টেল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। পুলিশি তদন্তের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্তও চলবে বলে এ দিন বেসু-র তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বেসু-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শীর্ষক অভিযোগ জানান, চতুর্থ বর্ষের এক দল ছাত্র তাঁকে মারধর করেছে। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তেরা সকলেই হস্টেলের আবাসিক। ঘটনার দিনেই টিআই প্যারেডে অভিযুক্ত আট জনকে শনাক্ত করেন শীর্ষক। প্রাথমিক ভাবে মারধরের ঘটনা প্রমাণিতও হয়। তবে বাকিদের তিনি শনাক্ত করতে পারেননি। অভিযুক্তদের মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে বিশ্ববিদ্যালয়। পরে, ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র র্যাগিং প্রতিরোধ সেলে অভিযোগ জানান শীর্ষক।
সোমবার পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআরে শীর্ষক জানান, ২২ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টো নাগাদ এক সহপাঠীর সঙ্গে তিনি হস্টেলে ফিরছিলেন। সেই সময়েই চতুর্থ বর্ষের ২০-২৫ জন ছাত্র লাঠি, চেন, বেল্ট, ভাঙা বোতল ইত্যাদি নিয়ে তাঁদের উপরে হামলা চালায়। সহপাঠী কোনও রকমে পালাতে পারলেও শীর্ষককে চতুর্থ বর্ষের ওই ছাত্রেরা প্রচণ্ড মারধর করে বলে অভিযোগ।
এফআইআরে অভিযোগকারী ওই ছাত্র জানান, তাঁকে যে মারধর করা হচ্ছে, দুই সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সেটা দেখেছেন। এ দিন শীর্ষক বলেন, “ওই শিক্ষক একটি হস্টেলের সুপার এবং সেই হস্টেলটি ঘটনাস্থলের সামনেই। আমাকে মারধর করা হচ্ছে দেখেই ছুটে আসেন তিনি। হামলাকারীরা তখন আমাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।” ওই শিক্ষকই শীর্ষককে বেসু-র হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন।
এফআইআরে শীর্ষক লিখেছেন, অভিযুক্তেরা সকলেই ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ে চাকরি পেয়ে গিয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার আগে কিছু পুরনো শত্রুতার শোধ নিতেই এই হামলা। শীর্ষকের বক্তব্য, হস্টেলে তিনি নিরাপদ বোধ করছেন না। ইতিমধ্যেই হস্টেল ছেড়ে দুর্গাপুরে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন শীর্ষক। সেখান থেকে টেলিফোনে সোমবার তিনি বলেন, “যা অভিযোগ জানানোর জানিয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ যা ব্যবস্থা নেবেন, আমি সেটাই মেনে নেব।”
বেসু-র রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইউজিসি-র কাছ থেকে ই-মেল পেয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি শিবপুর থানার পুলিশ আমার কাছে র্যাগিংয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর করতে আসে। পুলিশের কাছ থেকেই জানতে পারি যে, শীর্ষক ইউজিসি-র র্যাগিং প্রতিরোধ সেলেও অভিযোগ করেছে।”
কিন্তু অভিযুক্তদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে এবং তাদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় দায় সারতে চাইল কেন? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি রেজিস্ট্রার। তিনি এ দিন বলেন, “২৮ ফেব্রুয়ারি তো পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। ৭ মার্চের মধ্যে তারা রিপোর্ট পেশ করবে।”
হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন এ দিন বলেন, “আমরা একটা মারধরের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। ইউজিসি-র কাছে অভিযোগকারী যে-র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেছেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |