বাজেট অধিবেশনের মধ্যেই সংসদে তৃণমূলের তুলনায় সিপিএমের শক্তি আরও কমতে চলেছে। এই অবস্থায় কোণঠাসা সিপিএম কেন্দ্রীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণের লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক ধর্ষণ এবং কৃষক আত্মহত্যার প্রসঙ্গ সংসদে তোলার কৌশল নিচ্ছে। শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে কড়া অবস্থান নিয়েছেন, তার প্রতিবাদেও বাম সাংসদরা সরব হতে চান।
আগামী ২ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত পাঁচ সাংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তৃণমূলের মুকুল রায়ের ছাড়া ওই তালিকায় রয়েছেন সিপিএমের তপন সেন, মইনুল হাসান, সমন পাঠক এবং সিপিআইয়ের আর সি সিংহ। ২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বর্তমান আসন সংখ্যার বিচারে এই পাঁচটির মধ্যে মাত্র একটি পেতে পারে বামেরা। সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। তবে ফের নির্বাচিত হয়ে আসার ব্যাপারে পাল্লা ভারি সিটু-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেনেরই। নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে অবশ্য শরিক দলগুলির কোনও দাবি আছে কি না, তা দেখে নিতে চায় সিপিএম।
২৯৪ আসনের বিধানসভায় কোনও প্রার্থীর নির্বাচিত হতে ৪৯টি ভোট দরকার। রাজ্যে বামেদের এখন ৬১ জন বিধায়ক। তাই তাঁদের পক্ষে এক জনকেই জেতানো সম্ভব। বিধায়ক সংখ্যার হিসেবে পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিই পাবে তৃণমূল। একটি যেতে পারে কংগ্রেসের ঝুলিতে।
নিজেদের অবস্থা বুঝেই সংসদের অভ্যন্তরে মমতার সরকারকে আক্রমণের কৌশল নিচ্ছে সিপিএম। আজ স্পিকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকে সিপিএমের বাসুদেব আচারিয়া যে সব বিষয়ে লোকসভায় আলোচনার দাবি তুলেছেন, তা থেকেই তাঁদের কৌশল স্পষ্ট। বাসুদেবের দাবি, দেশের শ্রমিকদের দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা করতে দিতে হবে। একই দাবি জানান সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্তও। তাঁদের কৌশল হল, এ নিয়ে আলোচনায় সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মঘট-বিরোধী অবস্থানের সমালোচনা করা। রাজ্যের পরিবহণ সংস্থায় কর্মীদের বেতন না দেওয়ার মতো বিষয় নিয়েও সরব হবেন তাঁরা।
একই ভাবে কৃষি সঙ্কট নিয়ে আলোচনা চেয়ে বাসুদেব বলেন, “যে সব রাজ্যে আগে কৃষক আত্মহত্যা হত না, সেখানেও গত তিন-চার মাসে বহু কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।” মহিলাদের উপর নির্যাতন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাসুদেব। তাঁর কথায়, “কোনও কোনও রাজ্য ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।” নাম না করলেও তাঁর নিশানা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার, তা স্পষ্ট। কারণ এই দু’টি বিষয় নিয়েই সাম্প্রতিক কালে সিপিএমের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বৈরথ চলছে। আর তা বুঝেই লালুপ্রসাদ যাদব তৃণমূল ও বাম নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে বলেন, “এঁরা অভিযোগ তুলবেন, ওঁরা আপত্তি জানাবেন। তা হলে সংসদ চলবে কী করে?”
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূল সরব হলে বামেরা বলতেন, আইন-শৃঙ্খলার মতো বিষয়গুলি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। সংসদে তা নিয়ে আলোচনা করা যাবে না। এখন তা হলে তাঁরাই রাজ্যের বিষয় নিয়ে সংসদে সরব হবেন কী ভাবে? সিপিএম নেতাদের যুক্তি, মহিলাদের উপর নির্যাতন শুধু আইন-শৃঙ্খলার প্রশ্ন নয়। একই ভাবে কৃষিতে সঙ্কটের ফলে কৃষক আত্মহত্যাও আর শুধু রাজ্যের বিষয় নয়। এমনকী সাংবিধানিক অধিকারের প্রশ্ন তুলে রাজ্যে ‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের ফলে’ ঘরছাড়া সিপিএম-কর্মীদের কথাও বলা যায়। যার ফলে মমতা-সরকারকে নিশানা করা সম্ভব।
সংসদের কক্ষে তৃণমূলের তুলনায় দুর্বল সিপিএম এখন কতখানি তা করতে পারে, এখন সেটাই দেখার। |