গণপ্রহারে মৃত তিন দুষ্কৃতী
জগদ্দলে বাড়ছে অপরাধ, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ
হিলাদের কটূক্তি, ছিনতাই, বোমাবাজি, মারধর এলাকায় একের পর এক অপরাধের ঘটনা ঘটে চলায় উদ্বিগ্ন উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল এলাকার বাসিন্দারা। নিরাপত্তাহীনতাতেও ভুগছেন তাঁরা।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অধীনে রয়েছে জগদ্দল থানা। এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে ওই কমিশনারেট গঠন হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অপরাধ কমেনি। এই অবস্থায় কমিশনারেটের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জগদ্দলের বহু মানুষ।
এই থানা এলাকায় সর্বশেষ অপরাধের ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার গভীর রাতে। লোকাল ট্রেনের কামরায় ছিনতাই করে পালানোর সময়ে সাবির আলি ওরফে ছোটকা, মহম্মদ সাজ্জাদ এবং দীনেশ বাঁশফোড় ওরফে বল্লি নামে এলাকার তিন ছিনতাইবাজকে ধরে ফেলে জনতা। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় তিন জনের।
এর আগে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করায় এই থানা এলাকাতেই এক মানবাধিকার কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। সাধারণ ধর্মঘটের দিনও চার জনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তার আগে রাতের স্টেশনে বোনের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় দাদাকে মারধর করে চলন্ত ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ। আর স্টেশন চত্বরে মহিলাদের কটূক্তি, ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। যে সব ঘটনার ভুক্তভোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে যাচ্ছেন না। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিমত, কমিশনারেট অপরাধ দমন বা আইনশৃঙ্খলা উন্নতির বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
ঠিক কী হয়েছিল রবিবার রাতে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ ডাউন কল্যাণী লোকাল জগদ্দল স্টেশনে ঢোকে। সেই সময়ে একটি কামরায় লুঠপাট চালায় তিন দুষ্কৃতী। জগদ্দল স্টেশনের পাশে প্রীতিনগর এলাকা। সেখানকার বাসিন্দারা হইহল্লা শুনে বেরিয়ে আসেন। ততক্ষণে জগদ্দল স্টেশন রোড ধরে হাতে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে বোমা ছুড়তে ছুড়তে ছুটছে দুষ্কৃতীরা। বাসিন্দারা তাড়া করলে দুষ্কৃতীরা তাঁদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। বোমার টুকরোয় সামান্য জখম হন দু’জন। তাঁদের ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা দুষ্কৃতীদের ধরে ফেলে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। থেঁতলে দেওয়া হয় চোখ-মুখ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা সাবির আলি, মহম্মদ সাজ্জাদ এবং দীনেশ বাঁশফোড়কে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা বেশ কিছু সোনার গয়না, টাকা, একটি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বোমা আটক করে পুলিশ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এবং রেল পুলিশ এই ঘটনায় দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।
এলাকার বাসিন্দাদের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে ক্ষোভ মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তবে, অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররা মেনে নিয়েছেন, জগদ্দল থানায় পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। সেই কারণে অপরাধ দমনের কাজে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।
প্রায় সাত লক্ষ মানুষ বাস করেন জগদ্দল থানা এলাকায়। অথচ, এই থানায় পুলিশকর্মী রয়েছেন মাত্র ২৭ জন। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে যখন জনসংখ্যা অনেক কম ছিল, তখন জগদ্দল থানায় ১১ জন সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন। এখন জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। অপরাধ বেড়েছে অন্তত পাঁচ গুণ। আর সাব-ইন্সপেক্টরের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার বলেন, “এক মাসের কিছু বেশি সময় হল কমিশনারেট গঠিত হয়েছে। পরিকাঠমোগত বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে আমাদের। তবে, দুর্গাপুজোর মধ্যে আমরা অনেকটাই সামলে নেব। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.