|
|
|
|
|
লক্ষ টাকায় এটিএম জালিয়াতি শিখছে ‘ছাত্র’রা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
এক বছরের ‘কোর্স ফি’ এক লক্ষ টাকা।
একটু বেশি মনে হতেই পারে। কিন্তু এক বার ‘পাশ’ করে বের হতে পারলেই লাখ লাখ টাকা রোজগারের ‘গ্যারান্টি’ দিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুলটি বিহারের ফতেপুরে। লাখ টাকা নিয়ে এই স্কুলে শেখানো হয় ‘এটিএম’ জালিয়াতি।
স্কুলের শিক্ষক পিছু ছাত্র সংখ্যা তিন থেকে চার। এই ‘কৃতী’ ছাত্ররা এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে। তাদের দু’জন এখন রয়েছে লালবাজারের শ্রীঘরে। তাদের জেরা করেই গোয়েন্দারা জেনেছেন ফতেপুরের ওই স্কুলের কথা। গোয়েন্দাদের একটি দল সম্প্রতি ফতেপুরে হানা দিয়েও ওই স্কুলের সম্পর্কে আরও তথ্য নিয়ে ফিরেছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, শহর জুড়ে এটিএম জালিয়াতির অপরাধ বাড়ছে।, গত কয়েক বছরে টালিগঞ্জ, জোড়াসাঁকো, যাদবপুর, রিজেন্ট পার্ক, পাটুলি থানা এলাকায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিভিন্ন এটিএম কাউন্টার থেকে গ্রাহকদের ঠকিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিহারের এক দল দুষ্কৃতী। পুলিশের খাতায়, যাঁদের নাম ‘গয়া গ্যাং’। দিন কয়েক আগে, এই ‘গ্যাং’-এর দুই অপরাধীকে ধরতে ফতেপুরে হানা দেন গোয়েন্দারা। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) দময়ন্তী সেন সোমবার জানান, দিন দু’য়েক আগে এক অভিযানে ফতেপুর থেকে প্রমোদ কুমার সিংহ (২০) এবং নিশিকান্ত কুমার (২০) নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, জেরায় ধৃতেরা ওই স্কুলের বিষয়ে জানায়।
কেমন সে স্কুল? লালবাজার সূত্রের খবর, ঘরের ভিতরেই এক বা একাধিক ‘শিক্ষক’ এই কারবার ফেঁদেছে। শিক্ষক বলতে ‘গয়া গ্যাং’-এর পুরনো ‘খেলোয়াড়েরা’। এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, “এই স্কুলের শিক্ষকদের হেলাফেলা করা উচিত নয়। এদের অনেকেই পড়াশোনা এবং প্রযুক্তির বিষয়ে বেশ দড়।” রীতিমতো প্রযুক্তি-কলাকৌশল শিখিয়েই ছাত্রদের জালিয়াতির পেশায় ‘স্বনির্ভর’ করে তোলা হয়। কী সেই শিক্ষা?
লালবাজার সূত্রের খবর, এটিএম মেশিনের ‘0’ এবং ‘#’ সুইচের কোনায় তরল আঠা দিয়ে বসিয়ে দেয় জালিয়াতেরা। কোনও গ্রাহক টাকা তোলার জন্য পাসওয়ার্ড দেওয়া মাত্রই মেশিনটি সাময়িক ভাবে অকেজো হয়ে পড়ে। মেশিন কাজ করবে না ধরে নিয়ে গ্রাহক বাইরে বেরোলেই কাউন্টারে ঢোকে জালিয়াতের দল। সরু পিন জাতীয় কিছুর সাহায্যে আঠা তুলে দিলেই ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে মেশিনটি। প্রযুক্তিগত কারণেই ওই গ্রাহকের এটিএম কার্ডের তথ্য এবং পিন (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) মেশিনে রয়ে যায়। সেই ‘সুবিধা’ কাজে লাগিয়েই টাকা হাপিস করে এই দুষ্কৃতীরা। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কী ভাবে আঠা লাগাতে হবে এবং সেই আঠা চটজলদি তুলে টাকা হাতানোর উপায়, সব কিছুরই পুঙ্খানুপুঙ্খ শিক্ষা দেওয়া হয়। শেখানো হয় হাতসাফাইয়ের নানাবিধ কলাকৌশলও। স্কুলে রয়েছে থিওরি-প্র্যাকটিক্যালের ব্যবস্থা।
এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, “শুধু প্রযুক্তি শিখলেই তো হবে না! কাউন্টার কেমন, তাতে ক্যামেরা লাগানো রয়েছে কি না, সেটা যাচাই করে নেওয়া শেখানো হয়। তৈরি করে দেওয়া হয় ‘শিকার’ চিনে নেওয়ার চোখও।” প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের ধারণা, স্কুলে কোনও বেতনভুক শিক্ষক নেই। যা দক্ষিণা মেলে, তা ভাগ করে নেয় ‘শিক্ষকেরা’। নিজেদের ‘গ্রেড’ অনুযায়ী।
পুলিশ বলছে, প্রমোদ এবং নিশিকান্ত, দু’জনেই এই রকম একটি স্কুলের ছাত্র। ‘কাজ’-ও করছিল ভাল। কিন্তু অতি লোভেই তাঁতি নষ্ট হল তাদের। পুলিশের দাবি, এ বারের অভিযানে শিক্ষকেরা ধরা না পড়লেও শীঘ্রই ছাত্রদের সঙ্গে তাদের ‘পুনর্মিলনের’ ব্যবস্থা করবে লালবাজার। |
|
|
|
|
|