শাস্তির দাপট বন্ধে স্কুলে নজরদারি কমিটির সুপারিশ
দেশের স্কুলে-স্কুলে এখনও দিব্যি দাপট দৈহিক শাস্তির। বেতের বাড়ি, কানমলা কিল-চড় থেকে শুরু করে বিদ্যুতের ‘শক’-ও! স্কুলে এই জাতীয় অভিজ্ঞতা হচ্ছে সিংহভাগ ছাত্র-ছাত্রীর। ভেদ নেই রাজ্য সরকারি বা কেন্দ্রীয় সরকারি স্কুলে। সাত রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে এমনই পরিস্থিতির কথা জানতে পেরেছে শিশু অধিকার রক্ষার জাতীয় কমিটি (এনসিপিসিআর)। শাস্তির নামে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর এই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে স্কুলে-স্কুলে তাই বিশেষ নজরদারি কমিটি গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। স্কুলে দৈহিক শাস্তি কেমন ভাবে এড়ানো যায় সে সম্পর্কে আজ একটি বিস্তারিত পথনির্দেশিকাও প্রকাশ করেছে এনসিপিসিআর।
ওই পথনির্দেশিকায় যে কমিটির কথা বলা হয়েছে, তার কাজ হবে, কোনও স্কুলে দৈহিক শাস্তির পিছনে কী কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা। কোনও ছাত্র মানসিক নির্যাতনের বা বৈষ্যমের শিকার হচ্ছে কি না তাও দেখবে ওই কমিটি। অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানাবে জেলা প্রশাসনকে।
নির্দেশিকায় রয়েছে আর কিছু প্রস্তাব। যেমন, কোনও স্কুলকে সরকারের স্বীকৃতি পেতে হলে আগে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে যে স্কুলে দৈহিক শাস্তি প্রদানের মতো পরিবেশ তৈরি হতে দেওয়া হবে না। এমনকী, প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে দিয়েও লিখিয়ে নেওয়া হবে যে দৈহিক শাস্তি দিতে হয়, এমন কোনও পরিস্থিতি তাঁরা তৈরিই হতে দেবেন না। এর পরেও দৈহিক শাস্তি ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে তার একটি বার্ষিক তালিকা তৈরিরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষাবর্ষের গোড়ায় প্রত্যেক স্কুলকে ওই তালিকা সকলের জন্য টাঙিয়ে দিতে হবে।
ছাত্র-ছাত্রীদের দৈহিক শাস্তি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে প্রচার চালানোরও প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপিসিআর। ছাত্রদের জানিয়ে দেওয়া হবে যে স্কুলে দৈহিক শাস্তি পেলে বা মানসিক অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হলে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার অধিকার রয়েছে তাদের।
এনসিপিসিআর ২০০৯-’১০ সালে ৭টি রাজ্যের ৬ হাজার ৬৩২ ছাত্র-ছাত্রীর উপর সমীক্ষা চালিয়েছিল। তার ভিত্তিতেই এই পথনির্দেশিকা তৈরি করেছে তারা। ওই সমীক্ষায় সামগ্রিক ভাবে যে ছবিটা উঠে এসেছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মনে করছে এনসিপিসিআর। দেশ জুড়েই বিভিন্ন স্কুলে দৈহিক শাস্তি এখনও রুটিন ব্যাপার। ছাড় পায় না ৩ থেকে ৫ বছরের শিশুরাও। কিল, চড়, লাঠি পেটা তো চলছেই, বৈদ্যুতিক ‘শক’ দেওয়ার কথাও জমা পড়েছে সমীক্ষায়।
দেখা গিয়েছে, যত জন ছাত্র-ছাত্রীর উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও শাস্তি পেয়েছে স্কুলে। এদের ৮১.২% কোনও না কোনও সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে শুনতে হয়েছে, তাদের বেশি পড়াশোনার যোগ্যতাই নেই। বেতের বাড়ি খেয়েছে ৭৫% ছাত্র, গালে চড় ৬৯%।
ছাত্রীরা কি তুলনা কম দৈহিক শাস্তি পেয়ে থাকে? সমীক্ষা বলছে মোটেই পিছিয়ে নেই চারা। ছাত্রদের ৭৮% বেতের বাড়ি খাওয়ার কথা শুনিয়েছে। একই অভিযোগ ৭১% ছাত্রীরও। গালে চড় খেয়েছে ৭১.৯% ছাত্র। ৬৭.১% ছাত্রীরও সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে। ৫৯.৮% ছাত্র এবং ৫৩.৯% ছাত্রীর পিঠে পড়েছে কিল। অন্যান্য শাস্তির মধ্যে কানমলা, স্কেল-পেটা বা চিমটির ছবিটাও একই রকম। ছাত্র পেটানোয় রাজ্য সরকারি স্কুল এবং কেন্দ্রীয় স্কুলের মধ্যেও প্রায় কোনও ফারাক ধরা পড়েনি সমীক্ষায়। রাজ্য সরকারি স্কুলে বেতের বাড়ি খেয়েছে ৭৮.২% ছাত্র। কেন্দ্রীয় সরকারি স্কুলে ৭৮.৯%। বেসরকারি স্কুলে বরং এই হার সামান্য কম। ৬৯%।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.