|
|
|
|
উত্তরপ্রদেশে ‘খাতা’ খোলার আশায় মমতা |
সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা |
উত্তরপ্রদেশে ‘খাতা’ খুলতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? আজ, মঙ্গলবার পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ এবং রাজধানী দিল্লি। তাকিয়ে তৃণমূলও। তার প্রথম কারণ যদি হয় দিল্লির দরবারে নিজেদের ‘প্রাসঙ্গিকতা’, দ্বিতীয় কারণ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে পদক্ষেপ করা।
উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, মণিপুর ও গোয়াতে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে একমাত্র পঞ্জাব ছাড়া বাকি চারটি রাজ্যেই প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। উত্তরাখণ্ডে জয়ের কোনও আশা করছেন না দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু বাকি তিন রাজ্যে, বিশেষত উত্তরপ্রদেশে ‘খাতা’ খোলার আশায় তাঁরা। এমনকী, গোয়া এবং মণিপুরেও তাঁরা ‘উল্লেখযোগ্য ফল’ করবেন বলে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘনিষ্ঠমহলে আশা প্রকাশ করেছেন। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়ও সোমবার বলেছেন, “গোয়া ও মণিপুরে আমরা ভালই করব।” উল্লেখ্য, ৬০ আসনবিশিষ্ট মণিপুর বিধানসভায় তৃণমূল ৩৫ জন প্রার্থী দিয়েছে। গোয়াতে ৪০টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের প্রার্থী আছেন ১৯টিতে।
উত্তরপ্রদেশে শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। তার মধ্যে দু’একটি পেলেই তিনি ‘সন্তুষ্ট’। রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় দলের স্বীকৃতি পেতে উত্তরপ্রদেশের আসন তাঁকে সাহায্যই করবে। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে স্থানীয় প্রশাসনের ‘অসহযোগিতা’ সত্ত্বেও বাংলার একটি দল হিসেবে ‘খাতা’ খুললে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তাঁরা অনেকটাই ‘এগিয়ে’ যেতে পারবেন। পাশাপাশি, কংগ্রেস-শাসিত মণিপুর ও গোয়ায় তৃণমূল ‘ভাল ফল’ করলে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে তার ‘উপযোগিতা’ তাঁরা পাবেন। এদিন মুকুলবাবু বলেন, “উত্তরাখণ্ড নিয়ে আমরা কোনও আশা করছি না। এমনকী, উত্তরপ্রদেশেও দু’তিনটির বেশি আসন আশা করছি না। কিন্তু গোয়া ও মণিপুরে আমরা আমাদের দলের উজ্জ্বল উপস্থিতির প্রমাণ দিতে পারব বলেই মনে হচ্ছে। যেটা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।” ‘ভবিষ্যৎ’ বলতে তিনি কী বোঝাচ্ছেন, তা বিস্তারিত না-বললেও মুকুলবাবুর বলেছেন, “সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একটি আঞ্চলিক দল তার উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে, এটাই তো তাৎপর্যপূর্ণ!” রাজ্যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএমকে যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও তৃণমূল চ্যালেঞ্জ জানাতে চান, মুকুলবাবুর বক্তব্যে তারও ইঙ্গিত মিলেছে। তাঁর কথায়, “জাতীয় দল হিসাবে স্বীকৃত সিপিএম অথবা সিপিআইয়ের থেকেও পাঁচ রাজ্যের ভোটে আমাদের উপস্থিতি যে বেশি, আমরা সেটা দেখাতে চাই।”
মুকুলবাবু জানান, এখন অরুণাচল বিধানসভায় তাঁদের ছ’জন এবং অসমে একজন বিধায়ক আছেন। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দু’টি রাজ্যে তৃণমূল স্বীকৃত রাজনৈতিক দল। মঙ্গলবারের ফলাফলে অন্য রাজ্যেও আসন পেলে আমরা বলতে পারি, তিন রাজ্য পেরিয়ে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও আমরা এগোচ্ছি।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রথমসারির নেতা সুলতান আহমেদের অবশ্য আশা, উত্তরপ্রদেশে তাঁরা একাধিক আসন পাবেন। তিনি এবং বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার দলের পক্ষে উত্তরপ্রদেশে প্রচারের দায়িত্ব ছিলেন। আসন পাওয়ার ব্যাপারে কাকলি সুলতানের চেয়েও বেশি আশাবাদী। বেনারস, পিলিভিটের পূর্ণপুর, নয়ডা-সহ সাতটি আসনে তাঁরা জয়ী হতে পারেন বলে কাকলির দাবি।
সুলতান অবশ্য আসন সংখ্যা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণীতে ঢুকতে চাননি। তাঁর অভিমত, “এই ভোট থেকে তৃণমূল সর্বভারতীয় রাজনীতিতে একটা সম্ভাবনা তৈরি করতে পেরেছে। যে সমস্ত জায়গায় কংগ্রেস দুর্বল হচ্ছে, সেখানে সাধারণ কংগ্রেসকর্মীরা তৃণমূলের দিকে আসছেন। কারণ, প্রকৃত কংগ্রেসকর্মীরা সমাজবাদী পার্টি বা বিজেপি-তে যোগ দেবেন না। তাঁরা মনে করেন তৃণমূল জাতীয়তাবাদী দল এবং প্রয়াত রাজীব গাঁধীর স্নেহধন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসেরই সৃষ্ট নেত্রী। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল তৃণমূলকে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বাড়তি গুরুত্ব দেবে বলেই মনে হয়।”
রাজ্যের ‘দিদি’ কি সারা দেশের ‘দিদি’ হয়ে ওঠার পথে এগোতে পারবেন? আশায়-আশায় তপসিয়ার তৃমমূল ভবন এবং বিবাদী বাগের মহাকরণ। |
|
|
|
|
|