|
|
|
|
আগেই শুরু কেনাবেচার তোড়জোড় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ভোটবাক্স খোলার আগেই উত্তরপ্রদেশে শুরু হয়ে গেল ‘কেনাবেচার’ আগাম প্রস্তুতি।
লখনউ সূত্রে খবর, যে সব নির্দল প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁদের আগেই চিহ্নিত করে রেখেছে সপা-বিএসপি শিবির। তাঁদের কাছ থেকে আগাম সমর্থনপত্র আদায় করে রাখা নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে রবিবার রাত থেকেই। বুথ ফেরত সমীক্ষায় যে হেতু কিছুটা হলেও এগিয়ে মুলায়ম সিংহের দল, তাই এ ব্যাপারে তাঁরা বেশি সক্রিয়। একই সঙ্গে সপা নেতারা প্রকাশ্যে বিতর্ক শুরু করে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, বাবা না ছেলে? তাঁদের ভাবটা এমন যে, দল তো ক্ষমতায় আসছেই। এখন শুধু দেখার, অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, নাকি নিয়ে আসা হবে নবীন প্রজন্মকে? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অন্যদের বিভ্রান্ত করে নিজেদের দিকে টানার এটাও একটা কৌশল।
জাতীয় রাজনীতির দুই যুযুধান দল কংগ্রেস এবং বিজেপি এই তৎপরতা ও প্রচারে কিছুটা শঙ্কিত। প্রকাশ্যে তাঁরা যা-ই বলুন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ার আশা তাঁদের কেউই করছেন না। ফলে মুলায়ম বা মায়াবতীর দলের হাত থেকে ঘর আগলে রাখাই এখন তাঁদের প্রধান চিন্তা। বিধায়ক কেনাবেচায় অভ্যস্ত লখনউ রাজনীতিতে ভোটের পরের খেলাটা যে কী ‘মারাত্মক’ হতে পারে, তা এই দু’দলের অজানা নয়। একই আশঙ্কা রয়েছে অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোকদলেরও।
উৎকণ্ঠার এই প্রহরেই মার্কিন মুলুকে ‘রুটিন চেক আপের’ পর আজ দেশে ফিরেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। তার পরেই দলের শীর্ষ স্তরে আলোচনায় দিগ্বিজয় সিংহকে লখনউ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই ভাবে ঘর আগলাতে তৎপর হয়ে উঠেছে বিজেপি-ও।
কিন্তু ফল প্রকাশের আগেই কেনাবেচার প্রস্তুতি কেন?
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, লখনউয়ে এমন হয়েই থাকে। তবে এ বার সেই ‘তৎপরতায়’ অক্সিজেন জুগিয়েছে তামাম বুথ ফেরত সমীক্ষা। যে সমীক্ষাগুলির হিসেব অনুযায়ী, মুলায়ম সিংহ-অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি হয়তো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, কিন্তু ম্যাজিক ফিগার বা জাদু সংখ্যা ২০২ থেকে খুব বেশি পিছনেও থাকবে না। হয়তো আর জনা কুড়ি বিধায়কের সমর্থন পেলেই সরকার গড়ে ফেলতে পারবে তারা। যার অর্থ, সরকার গড়তে অন্য বড় দলের (অর্থাৎ, কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় লোকদল জোটের) সাহায্য না-ও দরকার হতে পারে মুলায়মের। পিস পার্টি, উলেমা পরিষদ বা সে ধরনের তস্য ছোট দল এবং কিছু নির্দল বিধায়কের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ে ফেলতে পারবেন তিনি। সে কথা মাথায় রেখেই এঁদের সঙ্গে আগাম বোঝাপড়া শুরু করে দিয়েছেন মুলায়ম।
আবার বেশির ভাগ বুথ ফেরত সমীক্ষা বিএসপি-র ভোট সম্ভাবনা খুবই খারাপ বলে আভাস দিলেও কেনাবেচার প্রস্তুতিতে মায়াবতীর ঘনিষ্ঠ নেতারাও পিছিয়ে নেই। বরং তাঁরাও আগাম ব্যবস্থা রাখছেন। ‘খেলা’ অবশ্য এখানেই থেমে নেই। যদি দেখা যায়, জাদু সংখ্যা থেকে তারা ৩০ বা ৪০টি আসনে পিছিয়ে আছে, তা হলে অন্য দলে ভাঙন ধরিয়ে সেই সংখ্যা পূরণ করতেও তৈরি হচ্ছে সপা-বিএসপি। কোনও দলের এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি বিধায়ক একযোগে দল ভেঙে বেরিয়ে এলে তাঁরা দলত্যাগ বিরোধী আইন এড়াতে পারবেন। অতীতেই সে ভাবেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে লখনউতে মায়াবতীর দল ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। এ বার সে দিক থেকে সব থেকে আশঙ্কায় ভুগছে কংগ্রেস, বিজেপি ও অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোকদল। কারণ, এরা কেউই খুব বেশি আসন জেতার আশা রাখছে না। আসন যদি কম হয়, তা হলে তার এক-তৃতীয়াংশও হবে অনেক কম। ফলে তা ভাঙিয়ে নেওয়া সহজ হয়ে যাবে (ধরা যাক, কোনও দল যদি ৩০টি আসন পায়, তা হলে তার এক-তৃতীয়াংশ হবে মাত্র ১০। অর্থাৎ, ১০ জনকে ভাঙিয়ে আনলেই চলবে)।
শুরু হয়ে গিয়েছে বিপক্ষ শিবিরকে বিভ্রান্ত করে দেওয়ার প্রক্রিয়াও। এমনিতেই বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসেব কিছুটা হলেও বিএসপি এবং কংগ্রেসের মনোবলে আঘাত হেনেছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত কাল থেকে সপা নেতারা বলতে শুরু করেছেন, তাঁরা একাই সরকার গড়ে ফেলবেন। কারও সমর্থন প্রয়োজন হবে না। বরং তাঁরা প্রকাশ্যে বিতর্ক জুড়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন তাই নিয়ে। অধিকাংশ পুরনো সমাজবাদী নেতা বলছেন, মুলায়মেরই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত। তিনি অভিজ্ঞ নেতা। আবার আজম খাঁর মতো কম বয়সী নেতাদের বক্তব্য, অখিলেশেরই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত। যদিও অখিলেশ নিজে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে বাবা-ই মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
তবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা ‘বাবা-ছেলে’ আগেই ভেবে রেখেছেন। ওঁরা আসলে কৌশলে বাকি দলগুলিকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। বোঝাতে চাইছেন, আমাদের ক্ষমতায় আসা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। চিন্তা শুধু মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তাই নিয়ে। সপা-র এই প্রত্যয় দেখে কংগ্রেস, বিএসপি-র নিচুতলার কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। তা হলে গণনা কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট কমে যেতে পারে। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে সপা। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই এমন প্রচার, বাবা-ছেলেকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছেন সপা নেতৃত্ব।
এই পরিস্থিতিতে ঘর সামলাতে পাল্টা কৌশল নিয়েছেন মায়াবতী। কংগ্রেসও। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা বেণীপ্রসাদ বর্মা গত কালই বলেছিলেন, “কংগ্রেস বিএসপি-কে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে সমর্থন করতে পারে।” আজ আবার বিএসপি সূত্রে বলা হয়েছে, সপা-কে ঠেকাতে তারা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারে সমর্থন জোগাতে পিছপা হবে না। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এ সব বলে আসলে কংগ্রেস ও বিএসপি নেতৃত্ব নির্দল এবং ছোট পার্টিগুলিকে পাল্টা বোঝাতে চাইছেন, বুথ ফেরত সমীক্ষা যা-ই বলুক, তাঁদের সরকার গঠনের আশা এখনও রয়েছে। সপা-ই একমাত্র বিকল্প নয়। এই বার্তা নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। কংগ্রেস এবং বিএসপি নেতৃত্ব আপাতত সেই বিভ্রান্তিই ছড়াতে চাইছেন।
এই অবস্থায় কাল যদি কোনও একটি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তা হলে অবশ্য ভোটের পর ঘোড়া (পড়ুন বিধায়ক) কেনাবেচার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু ত্রিশঙ্কু ফল হলে নিঃসন্দেহে জমে উঠবে ভোট-পরবর্তী ‘খেলা’। যার মুখবন্ধ এর মধ্যেই সেরে রেখেছেন লখনউয়ের রাজনৈতিক কুশীলবরা। |
|
|
|
|
|