তৈরি হচ্ছে বিরোধীরা
কংগ্রেসের ফল খারাপ হলেই ঝড় উঠবে সংসদে
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের বুথ-ফেরত সমীক্ষা আর প্রকৃত ফলের মধ্যে যদি বিশেষ ফারাক না থাকে, তা হলে সংসদে আসন্ন বাজেট অধিবেশনে কংগ্রেসকে আরও চাপে রাখা যাবে বলে আশাবাদী বিরোধীরা।
সংসদ শুরু হচ্ছে আগামী সোমবার। তার আগে লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার আজ সর্বদল বৈঠক ডাকেন। যে বৈঠকের পর স্পষ্ট যে, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে কংগ্রেসের ফল ভাল না হলে সংসদে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে বাম, বিজেপি। আর সে ক্ষেত্রে তারা প্রধান অস্ত্র করবে রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের বিষয়টি। বিজেপি এবং বাম নেতৃত্বের মতে, এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের শরিক তৃণমূল এবং এডিএমকে, বিজু জনতা দল ও সংযুক্ত জনতা দলের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সামগ্রিক কক্ষ সমন্বয় গড়ে তোলা সম্ভব।
বিশেষ করে লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আজকের বৈঠকে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সরব হওয়ায় বাম-বিজেপি উজ্জীবিত। বৈঠকে কল্যাণ বলেন, “কেন্দ্র রাজ্যগুলি থেকে কর আদায় করছে। কিন্তু রাজ্যকে যথাযথ ভাগ দিচ্ছে না। কংগ্রেস মুখপাত্ররা তো আবার এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে, কেন্দ্র যেন রাজ্যকে উপহার দিচ্ছে। এমনটা তো আর চলতে পারে না। বরং রাজ্যকে অর্থ জোগানের বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া দরকার।” তাঁর আরও বক্তব্য, “সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়েছে, একাধিক ঘটনায় কেন্দ্র রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সংবিধান অনুযায়ী যা অন্যায্য। এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হওয়া জরুরি।”
রঙের উৎসব। বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বাড়িতে বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। দিল্লিতে। ছবি-পিটিআই
কল্যাণের এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বদল বৈঠকের পর লোকসভার বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজ বলেন, “রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আলোচনার সর্বসম্মত দাবি উঠেছে। এতে সরকারের শরিকরাও সামিল।” এর পাশাপাশি তাঁরা কালো টাকা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ, নরওয়ে থেকে শিশু উদ্ধারের বিষয়, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম লঙ্ঘনের মতো বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা চাইবেন বলে তিনি জানান।
বিজেপি এই সব বিষয় তুললে যেমন বামেরা সমর্থন জানানোর ইঙ্গিত দিয়েছে, তেমনই শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাম্প্রতিক ধর্মঘট ও শ্রমিকদের দূরবস্থা নিয়ে সংসদে আলোচনার যে দাবি বামেরা জানাচ্ছে, তাতে বিজেপি সমর্থন জানাবে বলে সুষমারা স্থির করেছেন। অর্থাৎ কংগ্রেসকে চাপে রাখতে বাম-বিজেপি ইতিমধ্যেই পারস্পরিক সমন্বয়ে নেমে পড়েছে।
বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, আসলে বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলইে তাদের উৎসাহ জুগিয়েছে। কারণ উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড থেকে সুসংবাদের পূর্বাভাস দিচ্ছে অধিকাংশ সমীক্ষা। গোয়াতেও ফল ভাল হবে বলে দলীয় সূত্রের দাবি। অন্য দিকে পাঁচ রাজ্যের ভোটে বামেদের পাওয়ার কিছু নেই, হারানোরও নেই। কংগ্রেস চাপে থাকলেই তারা খুশি।
বিজেপি-র ‘খুশি’র কিছুটা প্রতিফলন আজ ঘটে দলীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বাসভবনে হোলি মিলন উৎসবে। পাঁচ রাজ্যে ভোটের দায়িত্বে থাকা নেতারা সেখানে এসে হোলি খেলেন। আর তার মধ্যে দিয়ে দলের ঐক্যের ছবিও আজ তুলে ধরতে চেয়েছেন গডকড়ী। হোলি মিলন চলাকালীনই ভোট-পরবর্তী দলীয় কৌশল নিয়ে এক প্রস্ত আলোচনাও সেরে নেন গডকড়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলিরা পরে গডকড়ী অবশ্য বলেন, বুথ-ফেরত সমীক্ষার হিসেব বিজেপি মানছে না। কারণ, সমাজবাদী পার্টি ১৬০-এর বেশি আসন পাবে বলে বিজেপি মনে করে না। আর বিজেপি-ও আগের থেকে অনেক বেশি আসন পাবে।
অন্য দিকে, কংগ্রেস শিবিরের ছবিটা ছিল পুরোপুরি আলাদা। উৎকণ্ঠা উত্তেজনাকে চাপা দিয়ে আজ দিনভর সাহসী মুখ দেখিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আসলে রাহুল গাঁধীর প্রচারকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে হইচইয়ের ফলেই প্রত্যাশার পারদ চড়ে গিয়েছে। চিন্তা তা নিয়েই।” কংগ্রেস নেতৃত্বকে আজ বারবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে যে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ফল খারাপ হলে তা কি রাহুলের ব্যর্থতা বলে গণ্য হবে না?
জবাবে সলমন খুরশিদ থেকে জনার্দন দ্বিবেদীর মতো নেতারা পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছেন, “রাহুল জাতীয় স্তরের নেতা। তিনি প্রার্থী বেছেছেন, প্রচার করেছেন সবই ঠিক। কিন্তু তাঁর তোলা হাওয়াকে ব্যালট বাক্সে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সংগঠনের নেতাদের।”
তবে কংগ্রেস নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন যে, ভোট ফলের উপরেই বাজেট অধিবেশনের গতি প্রকৃতি নির্ভর করছে। কংগ্রেসের ফল খারাপ হলে সরকার পড়ে যাবে না ঠিকই, কিন্তু বিরোধী ও শরিকদের চাপে সুষ্ঠু ভাবে সংসদ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।
এই অবস্থায় আজ লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী ও দুই বাম নেতা বাসুদেব আচারিয়া এবং সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে বৈঠক করেন। সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য সাহায্য চান। ইয়েচুরি হাসতে হাসতে প্রণববাবুকে বলেন, “আজ বৈঠক করে লাভ কী! আপনার বাজেট কেমন হবে, আর সংসদ কেমন ভাবে চলবে, সে তো ঠিক হবে আগামিকাল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.