ফের শিলান্যাস শনিবার
জমি-জটেই বাতিল আগের অর্থতালুক, দাবি হিডকোর
ফের উদ্বোধন হতে চলেছে রাজারহাটে প্রস্তাবিত অর্থতালুকের (ফিনান্সিয়াল হাব)। ১৭ মাস বাদে।
হিডকো ও একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে দেশের দ্বিতীয় অর্থতালুক প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছিল ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর। উদ্বোধন করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রধান অতিথি রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এখন সেই প্রকল্পটিই হিডকো একা করবে বলে ঠিক করেছে রাজ্যের নতুন সরকার। তাই আগামী শনিবার, ১০ মার্চ নতুন করে প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধান অতিথি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
অর্থতালুক তৈরির মূল লক্ষ্য ছিল, ব্যাঙ্ক, বিমা-সহ সরকারি-বেসরকারি যাবতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এক জায়গায় এনে রাজ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জোয়ার আনা। যেমনটি হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট, অথবা এ দেশে মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুরলায়। এই ভাবনা থেকেই ২০১০ সালের মাঝামাঝি নিউটাউনে অর্থতালুক তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব পাঠান হিডকোর তৎকালীন চেয়্যারম্যান তথা আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব। এমন প্রস্তাব পাঠিয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, গুজরাতও। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাব অনেক সবিস্তার হওয়ায় পাল্টা আগ্রহ দেখাতে বেশি সময় নেয়নি প্রণববাবুর দফতর। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তৎপরতায় দেশের দ্বিতীয় অর্থতালুক তৈরির সবুজ সঙ্কেত পেয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ।
এই প্রকল্পের ৮৯ শতাংশ অংশীদারিই ছিল বেসরকারি সংস্থা ‘ওরিয়েন’-এর। হিডকোর সঙ্গে মিলে তৈরি হয় যৌথ উদ্যোগের নতুন সংস্থা বেঙ্গল ওরিয়েন ফিনান্সিয়াল হাব। সংস্থার পরিচালন বোর্ডের চেয়ারম্যান হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন। ঠিক হয়, প্রায় ৩০০ একর জমির উপর তৈরি হবে অর্থতালুক। বিনিয়োগ হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। কর্মসংস্থান হবে চার লক্ষ মানুষের।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২৮.৮৪ একর জমি চিহ্নিত হয়। সেখানে কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তাব দেয় ইউকো ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক এবং স্টেট ব্যাঙ্ক। তিনটি প্রস্তাবই বোর্ডের সভায় গৃহীত হয়।
কিন্তু রাজ্যে নতুন সরকার আসার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। অগস্ট মাসে ব্যাঙ্কের হাতে জমি তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়। আস্তে আস্তে ছবি থেকে সরে যেতে থাকে যৌথ উদ্যোগের সংস্থা। অর্থতালুকের একক স্থপতি হয়ে ওঠে হিডকো।
সেই পথেই শনিবার হচ্ছে আরেক দফা উদ্বোধন। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “ওই দিন শিলান্যাস অনুষ্ঠান হবে। দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।” অর্থতালুক তৈরির কথা ছড়িয়ে দিতে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুতে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্বোধনের দিন দুই আগে থেকে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ২০ সেকেন্ডের বিশেষ প্রচার হবে। পাশাপাশি হোর্ডিংয়ে ঢাকবে নিউটাউনের আকাশ। সব মিলিয়ে একটি ‘সাড়া জাগানোর মতো’ অনুষ্ঠান করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। দেবাশিসবাবু জানান, হিডকোর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টে (সিবিডি) অর্থতালুকের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২৫ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রকল্প এক থাকলেও পালাবদলের পর কেন আগের চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হল, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। হিডকোর দাবি, সমস্যা মূলত জমি নিয়ে। আগের প্রকল্পে হিডকোর কোনও জমি ছিল না। সব জমিরই মালিক ছিল বেসরকারি সংস্থাটি। হিডকোর এক মুখপাত্রের বক্তব্য, “আইন অনুযায়ী কোনও বেসরকারি সংস্থা সিলিংয়ের (২৪ একর) বেশি জমি রাখতে পারে না। হিডকোর অ্যাকশন এরিয়ার মধ্যে যে সব সংস্থা ‘লিজ’-এ জমি নিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সিলিংয়ের বেশি জমি রাখার ছাড় রয়েছে। কিন্তু ওই বেসরকারি সংস্থার জমি রয়েছে অ্যাকশন এরিয়ার বাইরে। তাই ওই জমিকে ভূমি আইনের ১৪ওয়াই ধারায় ছাড় দেয়নি সরকার। এই কারণে জমিটি আইনসিদ্ধ নয়।” বেঙ্গল ওরিয়েনের চেয়ারম্যান অর্ধেন্দু সেনও বলেন, “ওরিয়েনের জমি হিডকোর এলাকার বাইরে ছিল। তারা ১৪ওয়াইয়ে অনুমতি পায়নি। তা ছাড়া ওই সংস্থার কাজের অগ্রগতি ছিল না। তাই হিডকো প্রকল্পটি একাই করবে বলে ঠিক করেছে।”
ওরিয়েনের তরফে সরকারি ভাবে এ ব্যাপারে কেউ মুখ খোলেননি। তবে বেঙ্গল ওরিয়েন সংস্থার এক মুখপাত্রের দাবি, পরিচালন বোর্ডের সভায় প্রকল্পের জমি ‘ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কন্ট্রোল প্ল্যান’-এ নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ, জমিটা হিডকোর এলাকার অন্তর্ভুক্ত। তাই ওই জমির জন্য ১৪ওয়াই ধারায় ছাড়পত্রের প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি বিরোধীদের বক্তব্য, হিডকোর অ্যাকশন এরিয়ার মধ্যে না হওয়া সত্ত্বেও নতুন সরকার রাজ্যের অন্যত্র কী করে জিন্দল-সহ ১১টি সংস্থাকে ১৪ওয়াই ধারায় ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? কী করে ১৪ওয়াই ধারায় ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত না হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন পার্ক ও হাব তৈরির কাজে হাত দিচ্ছে সরকার, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
হিডকো সূত্রে আরও দাবি, প্রকল্পের মূল অংশীদার বেসরকারি সংস্থা হওয়ায় অনেকেই তাদের কাছ থেকে জমি কিনতে আগ্রহী নয়। তা ছাড়া সরকার নিজেই যেখানে কোনও প্রকল্প করতে পারে, সেখানে বেসরকারি সংস্থার প্রয়োজন কী, সেই প্রশ্ন তুলেছেন হিডকোর কর্তারা।
এই যুক্তি মেনে আগের পরিচালন বোর্ড থেকে চেয়ারম্যান-সহ হিডকোর তিন সদস্যকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প থেকে হিডকোর অংশীদারিও (১১%) তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। হিডকোর এক মুখপাত্রের কথায়, “এখন ওই চ্যাপ্টার ক্লোজড। ওরিয়েন সংস্থাকে তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।” যদিও বেঙ্গল ওরিয়েনের মুখপাত্রের দাবি, বোর্ড থেকে হিডকোর প্রতিনিধি তুলে নেওয়ার কথা সরকারি ভাবে জানানো হয়নি। উল্টে নতুন সরকারের আমলে গত ৩০ জুলাই পরিচালন বোর্ডের শেষ সভায় হিডকোর পাঁচ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে প্রকল্পের জমি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই মুখপাত্র।
যার আমলে এই প্রকল্পের সূচনা, সেই গৌতম দেব প্রশ্ন তুলেছেন, “সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোদের প্রকল্প বাতিল করতে হলে বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত করতে হবে। তা কি হয়েছে? এই প্রকল্পে কেন্দ্র সাহায্য, পরামর্শ দিয়েছে। কয়েকটি ব্যাঙ্ক জমি নেবে বলেছিল। স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কারস কমিটি প্রকল্পটিতে উৎসাহ দেখিয়েছিল। এত কিছুর পরে সব বন্ধ হয়ে যাবে!” এত বড় প্রকল্প হিডকো একা কী করে করবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন গৌতমবাবু। তাঁর মন্তব্য, “এতে সব তালগোল পাকিয়ে যাবে।”
হিডকো সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, তাদের প্রকল্পে অফিস করার জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক এবং ডব্লুবিএস ব্যাঙ্ক প্রাথমিক কথাবার্তা বলেছে। এ ছাড়া যেখানে ওই প্রকল্প গড়ে উঠবে সেই সিবিডি-তে আগেই জমি নিয়ে রেখেছে স্টক এক্সচেঞ্জ ও ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.