অবৈধ খাদান থেকে মোরাম চুরি করতে গিয়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে রামপুরহাট থানার রদিপুর মৌজায় হালদাসা এলাকায়। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম খুশিরুল শেখ (২০)। বাড়ি মুর্শিদাবাদের কান্দি থানা এলাকার যশোহরি গ্রামে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মোরামে চাপা পড়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আরও এক শ্রমিক গুরুতর জখম হয়েছেন। পুলিশ একটি ট্রাককে আটক করেছে। জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “সরকারকে ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে মোরাম পাচার রুখতে গেলে সেখানে ভূমি দফতরের সাহায্য দরকার। তা না হলে পুলিশের নামে টাকা তোলার বদনাম হয়। তবুও অবৈধ ভাবে মোরাম পাচার করার গাড়ি পুলিশ আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এ ক্ষেত্রে যে মোরাম খাদান এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেটা কে বা কারা চালাচ্ছিল তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা রুজু করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “অবৈধ খাদানে মোরাম বোঝাই করতে এসে কারও যদি মৃত্যু হয়, সেটা তার নিজস্ব ব্যপার।”
অবৈধ মোরাম খাদানে মোরাম বোঝাই বা পাচার বা চুরি দীর্ঘদিন ধরে চলছে এবং রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা চলছে সে ব্যাপারে ওয়াকিবহল সংশ্লিষ্ট ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। রামপুরহাট ১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মহম্মদ মনিরুদ্দিন বলেন, “রদিপুর মৌজায় একমাত্র প্রভাতকুমার দাস নামে এক ব্যবসায়ীকে মোরাম খাদানের অনুমতি দেওয়া আছে। ওই মোজার ১৪২ দাগের কিছুটা অংশে খাদান চালানোর সরকারি অনুমোদন রয়েছে। বাকি অংশগুলি থেকে মোরাম চুরি বা পাচার করার জন্য কাটা হয়। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের রেভিনিউ ইনস্পেক্টরের রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু যখন আমরা ওই সব অবৈধ খাদানগুলিতে যাই, তখন কাউকে পাওয়া যায় না।” রামপুরহাটের রদিপুর মৌজা বা ভাটিনা মৌজা বনহাট পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। এই দু’টি মৌজায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ মোরাম পাচারের ব্যবসা চলছে। এই পঞ্চায়েতের রেভিনিউ ইনস্পেক্টর অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত ওই সমস্ত খাদানে যন্ত্রের সাহায্যে আলো জ্বেলে মোরাম কাটা হয়। ভোর ৪টে থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত গাড়িতে বোঝাই করে মোরাম পাচার করা হয়।” তাঁর দাবি, “একাধিকবার পুলিশের সাহায্যে অভিযান চালানোর ব্যবস্থা নেওয়া হলেও রাতে পুলিশ তেমন পাওয়া যায় না। আর যাঁরা মোরাম পাচারের সঙ্গে যুক্ত তাঁদেরকে সরকারি অনুমোদন দিয়ে ব্যবসা করার জন্য বলা হলেও তারা এগিয়ে আসেনি।”
রামপুরহাট মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক হরিসাধন দত্ত বলেন, “অনুমোদন দিয়ে মোরাম পাচারকারীদের ব্যবসা করার জন্য বলা হলেও তারা সেই সুযোগ নিতে এগিয়ে আসেনি।” এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মৃতদেহটি ঘিরে পুলিশ তদন্ত করছে। কান্দি থানার যশোহরি এলাকা থেকে দু’টি গাড়ি এদিন ওই মোরাম খাদানে এসেছিল। তার মধ্যে একটি গাড়ির কর্মী মৈজুদ্দিন শেখ বলেন, “সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। যন্ত্রের সাহায্যে মোরাম কাটার পর গাড়িতে বোঝাই করার সময়ে আচমকা ধসে পড়ে মোরাম। তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় খুশিরুলের। যন্ত্রের সাহায্যে আধঘণ্টা ধরে মোরাম সরিয়ে দেহ উদ্ধার করা হয়। রাজেকুল নামে আরও এক শ্রমিকের কোমর পর্যন্ত মোরাম চাপা পড়েছিল।”
অন্য দিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই খাদানটি স্থানীয় হরিনাথপুর গ্রামের কয়েক জন আদিবাসী অবৈধ ভাবে চালাচ্ছিলেন। গাড়ি পিছু ৯০০ টাকা করে দিলে মোরাম বোঝাই হয়ে যায় বলে এক চালক জানিয়েছেন। যদিও জেলা আদিবাসী গাঁওতার সদস্য দেবু সোরেন বলেন, “আমরা তো এ ব্যাপারে প্রশাসনকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি। প্রশাসন জেনেও না জানার ভান করছে! এটা দেখে আমরা অবাক হচ্ছি।” |