কেতুগ্রামে ট্রেনে ডাকাতির অভিযোগে ধৃত দু’জনকে ধর্ষণের মামলাতেও যুক্ত করল পুলিশ। ফলে, মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণে অভিযুক্তের সংখ্যা দুই থেকে বেড়ে দাঁড়াল চারে।
পুলিশ জানায়, কাটোয়ার কেশিয়া গ্রামের নুর মহম্মদ শেখ এবং গাঙ্গুলিডাঙার সেন্টু শেখ নামে ওই দু’জন গত সাত দিন রেলপুলিশের হেফাজতে ছিল। ডাকাতির অভিযোগে তাদের ধরা হলেও এত দিন ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়নি। সোমবার ফের আদালতে তোলা হলে ওই দু’জনকে ধর্ষণের মামলাতেও যুক্ত করা হয়।
কাটোয়া আদালতের সরকারি আইনজীবী (এপিপি) প্রবীর রায় বলেন, “ওই দু’জনকে ধর্ষণ মামলায় যুক্ত করা এবং সাত দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য কেতুগ্রাম থানার তরফে আবেদন জানানো হয়েছিল। বিচারক মঞ্জুর করেছেন।” আবার ডাকাতির মামলায় ওই দু’জনকে প্রত্যক্ষদর্শীদের দিয়ে শনাক্ত করানোর জন্য (টিআই প্যারেড) ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম ইডেন লামাসার কাছে অনুমতি চেয়েছিল রেলপুলিশ। তা-ও মঞ্জুর হয়েছে। |
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কাটোয়া-আমোদপুর ন্যারোগেজ লাইনের ট্রেনে ডাকাতি ও এক মহিলাকে নামিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। আদালতের নির্দেশে পরে জেলা পুলিশ তদন্তে নামে। গত ২ মার্চ বীরভূমের লাভপুর থেকে ধর্ষণের অভিযোগে ফরিদ শেখ ও নয়ন শেখ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ দিন তাদের সঙ্গেই বাকি দু’জনের নাম যুক্ত হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ফরিদ ও নয়ন দু’জনেই বর্তমানে তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত। আবার, নুর মহম্মদ শেখের হয়ে এ দিন জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী তথা বর্ধমান জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল।
পরে আদালত থেকে বেরিয়ে আজিজুল বলেন, “নুর মহম্মদের মূল আইনজীবী মধুসূদন মুখোপাধ্যায়। ওঁর হয়েই এ দিন আমি সওয়াল করেছি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের কটাক্ষ, “এর আগে ধর্ষণের অভিযোগে যারা ধরা পড়েছিল, তারা যে তৃণমূলের লোক তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এখন আবার আদালতে অন্য দু’জনকে ছাড়াতে এলেন তৃণমূল নেতা। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সব সিপিএমের চক্রান্ত। বোঝাই যাচ্ছে, পিছনে কারা আছে।” মণ্ডল আজিজুল অবশ্য দাবি করেন, “নুর মহম্মদ আমাদের দলের কর্মী নয়। কিন্তু পুলিশের উপরে প্রভাব খাটিয়ে সিপিএম ওকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করিয়েছে।”
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগে কেতুগ্রামের ভুলকুড়ির কাছে বোলপুর-কাটোয়া রাস্তায় বাস ছিনতাই করতে গিয়ে এক জনকে খুনের অভিযোগ রয়েছে নুর মহম্মদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও আরও কিছু চুরি-ছিনতাইয়ে সে এবং সেন্টু যুক্ত বলে পুলিশের সন্দেহ। আসানসোলে একটি খুনের মামলাতেও সেন্টুর নাম আছে।
নুর মহম্মদের মা অবশ্য এ দিন আদালতে দাঁড়িয়ে দাবি করেন, “ওই রাতে আমার ছেলে কেশিয়াতেই ওর শ্বশুরবাড়িতে শুয়ে ছিল। পুলিশ এসে ওকে তুলে নিয়ে যায়। এর আগেও পুলিশ ওকে এই ভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল।” পরে গ্রামের বাড়িতে গেলে নুরের বাবা এবং দাদা অবশ্য কোনও কথা না বলে কার্যত পালিয়ে যান। গাঙ্গুলিডাঙায় গেলেও সেন্টুর বাড়ি দেখিয়ে দেওয়ার মতো লোক পাওয়া যায়নি। |