এর আগে পুলিশ যাঁদের হেফাজতে নিতে চায়নি, বর্ধমানে দুই সিপিএম নেতা খুনে ধৃত সেই চার জনকে নিজেদের হেফাজতে নিল সিআইডি। সোমবার তদন্তকারীদের বিশেষ আবেদনে সাড়া দিয়ে জেল হাজতে থাকা অভিযুক্তদের দু’দিন সিআইডি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় বর্ধমান আদালত। সন্ধ্যাতেই সিআইডি তাঁদের নিয়ে কলকাতা চলে গিয়েছে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে দেওয়ানদিঘিতে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা ও সত্তরোর্ধ্ব নেতা কমল গায়েনকে প্রকাশ্যে খুন করা হয়। ঘটনাস্থল থেকেই চার তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু পরের দিন আদালতে তোলার সময়ে জেলা পুলিশ তাঁদের নিজেদের হেফাজতে চায়নি। যদিও বড় অপরাধের ক্ষেত্রে ‘তদন্তের স্বার্থে’ সাধারণত সেটা করাই হয়। পুলিশ হেফাজত না চাওয়ায় ধৃতদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। |
সেই সময়েই পুলিশের ভূমিকা ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল নিহতদের পরিবার তথা সিপিএম। কিন্তু পুলিশ দাবি করে, ধৃতদের যা জেরা করার ছিল তা হয়ে গিয়েছে। তাঁদের আর হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আগের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ৭ মার্চ ধৃতদের ফের আদালতে হাজির করানোর কথা ছিল। তখন তাঁদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদনও করতে পারতেন। কিন্তু ইতিমধ্যে গত ২ মার্চ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিআইডি-র হাতে তদন্তভার দেওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। নিহত প্রদীপ তা-র স্ত্রী চিত্রলেখাদেবী এ দিন বলেন, “সরকার ও পুলিশের তরফে তদন্তে গাফিলতি হয়েছে। তবে বিচারবিভাগ সময় মতো হস্তক্ষেপ করেছে।” প্রথম দিন সিআইডি-র কার্যকারিতা সম্পর্কে ‘অনাস্থা’ প্রকাশ করলেও এ দিন তিনি বলেন, “ওরা যে ভাবে এগোচ্ছে, তা এখনও সদর্থক বলেই মনে হচ্ছে।”
এ দিন সকালেই চার অভিযুক্ত পতিতপাবন তা, সুরজিৎ তা, ভূপাল গোস্বামী ও ছোটন চক্রবর্তীকে জেলা সংশোধনাগার থেকে এজলাসে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চায় সিআইডি। কিন্তু অভিযুক্তদের পাঁচ আইনজীবী সিআইডি-র আবেদন জানানোর পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, নিয়ম অনুযায়ী জেল থেকে এজলাসে আনা ও হেফাজতে চাওয়ার জন্য দু’টি পৃথক আবেদন করতে হয়। কিন্তু সিআইডি একটি আবেদনেই দু’টি আর্জি জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কিছুই না জানিয়ে আদালত কী করে ধৃতদের জেল থেকে কাঠগড়ায় নিয়ে এল?
বর্ধমানের ভারপ্রাপ্ত সিজেএম শুভ্রকান্তি ধর অবশ্য অভিযুক্ত পক্ষের আপত্তি নাকচ করে চার অভিযুক্তকে দু’দিন সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এই মামলার তদন্তকারী অফিসার, সিআইডি-র হোমিসাইড সেলের ইনস্পেক্টর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ওই চার জনকে জেরা করে খুনের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইব। প্রয়োজনে ওঁদের ফের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানানো হবে।”
খুনের পরেই প্রদীপবাবুর ভাই প্রবীর তা ২২ জনের নামে বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। চার জন ছাড়া বাকিরা এখনও অধরা। সে প্রসঙ্গে কল্যাণবাবু বলেন, “কাকে ধরা হবে বা হবে না তা এখনই বলা সম্ভব নয়। এমনও হতে পারে যে, অভিযোগে নিরপরাধ লোকেদের নামও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য, প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা। নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার করা নয়। তবে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে আমরা অন্য অভিযুক্তদেরও জেরা করব।” |