বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সের কালচিনি ব্লকের মধু চা বাগান। ‘নিরাপত্তার অভাব’এর কারণ দেখিয়ে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়ে কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন। শনিবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে কারখানার সামনে অফিসে বাগান বন্ধের নোটিশ দেখেন শ্রমিকেরা।
বাগানের প্রধান ম্যানেজার রাজেন বর্মা জানান, বকেয়া মেটানোর দাবিতে শ্রমিকেরা শুক্রবার বাগানের ৬ জন ম্যানেজারকে হাঁটিয়ে হাসিমারা ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবারের মধ্যে বকেয়া মেটানোর দাবি জানানো হয়। কার্যত শ্রমিকদের চাপে পড়ে এ ভাবে যাওয়ার পরে ওই বাগান কর্তৃপক্ষ ম্যানেজারদের নিরাপত্তা নিয়ে আর ঝুঁকি নিতে চাননি। রাজেনবাবুর কথায়, “বকেয়া মেটানো না হলে শ্রমিকেরা দেখে নেবেন বলে হুমকিও দেন। ম্যানেজারদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাগানে নোটিস ঝোলানো হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত মালিকপক্ষ নেবেন।” আইটিপিএ’র জলপাইগুড়ির উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীও বলেন, “শুক্রবার যে ভাবে ম্যানেজারদের হেনস্থা করা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না। নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে তাই বাগান বন্ধের নোটিস টাঙানো হয়েছে।”
শনিবার সকালে বাগানের অফিসে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিস টাঙিয়ে দেন ম্যানেজারের গাড়ির চালক। সমস্যা মেটাতে শ্রমিক সংগঠন ও মালিকপক্ষকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকতে উদ্যোগী হয়েছে শ্রমদফতর। আলিপুরদুয়ারের সহকারী শ্রম আধিকারিক সুমন্ত শেখর রায় বলেন, “শনিবার সকালেই মধু চা বাগান বন্ধের খবর পেয়েছি। এ দিন দফতর বন্ধ থাকায় মালিকপক্ষের নোটিসের কাগজ বা শ্রমিকদের দাবি নিয়ে নথি এসে পৌঁছয়নি। সোমবার অফিস খুললে বিষয়টি উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জানিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যবস্থা করা হবে।”
আলিপুরদুয়ারের আরএসপি সাংসদ মনোহর তিরকি এ দিন চা বাগনে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, বর্ধিত মজুরির বকেয়া দোলের আগে মেটানোর কথা ছিল মালিকপক্ষের। শ্রমিকেরাও সেই দাবি জানিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ উল্টে বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ায় অন্তত সাড়ে ন’শো শ্রমিক বিপাকে পড়লেন। এমনিতে গত জানুয়ারি থেকে মজুরির বদলে সপ্তাহে ৩০০ টাকা ও রেশন দিচ্ছিলেন মালিকপক্ষ। শ্রমিকেরা তা মেনেও নিয়েছিলেন। মনোহরবাবু বলেন, “পুলিশ ফাঁড়িতে আলোচনায় বাগান ম্যানেজাররা জানিয়েছিলেন, শনিবার ৩০০ টাকা এবং রেশন দেবেন। ৬ মার্চ বকেয়া নিয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চা বাগানগুলিতে পাতা থাকে না। এই সময় বাগানগুলির পরিচর্যার দরকার হয়। মুনাফা না থাকায় এই সময় মালিকপক্ষ নানা অজুহাতে বাগান ছেড়ে চলে যাবার চেষ্টা করেন। বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক ও শ্রমদফতরের আধিকারিকদের জানানোর পাশাপাশি দিল্লিতে সংসদে চা বাগনের শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলব।”
আইএনটিইউসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক প্রভাত মুখোপাধ্যায় জানান, মধু চা বাগানে সাড়ে তিন কোটি টাকা পিএফ, দশ বছরের গ্র্যাচুইটি, শ্রমিকদের অনেকের প্রাপ্য রেশন বকেয়া পড়ে। দিন কয়েক আগে বাগানের বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। শ্রমিকদের থেকে জীবন বিমার টাকা নেওয়া হলেও তা জমা করেননি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের কথা মতোই দোলের আগে শ্রমিকরা বর্ধিত মজুরির বকেয়া ১৭০০ টাকা দাবি করেছিলেন। আরএসপি নেতা প্রভাত ছেত্রী, বিকাশ পরিষদের রঘু মিন্জরা জানান, বাগানের স্বার্থে শ্রমিকরা সপ্তাহে ৩০০ টাকা করে মজুরি নিচ্ছিলেন। বাগানের অবস্থা খারাপ থাকায় কিছু দিন ধরে ১০০ দিনের কাজ হচ্ছিল। দ্রুত বাগান খোলার ব্যবস্থা না হলে তাঁরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। |