এনবিএসটিসি
ছাঁটাই শ্রমিকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার মাথাভাঙায়
ছাঁটাই হওয়ার ১২ দিনের মাথায় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এনবিএসটিসি)-র ঠিকাদার নিযুক্ত এক শ্রমিকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার রাতে কোচবিহারের মাথাভাঙা শহরের পশ্চিমপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মনীশ ব্রহ্ম (৪১)। ঘটনার দিন রাতে তিনি ঘরে একা ঘুমিয়ে ছিলেন। শনিবার সকালে বাড়ির লোকজন তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা বলেই মনে করা হচ্ছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। কী কারণে এমন ঘটেছে তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
মণীশ ব্রহ্ম
এই ঘটনার কথা শুনেছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। তিনি বলেন, “যে কোনও মৃত্যুই মর্মান্তিক। এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যানের কাছে ওই ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছি।” এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য, “ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে ওই ব্যক্তি আমাদের সংস্থার কর্মী ছিলেন না। তিনি ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করেছেন। তাই ঘটনার দায় ঠিকাদার সংস্থার।”
মনীশবাবু যে ঠিকাদার সংস্থার অধীনে কাজ করতেন তার কর্তা চিত্তরঞ্জন কুণ্ডু কিন্তু জানান, ঘটনার দায় এনবিএসটিসি কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। চিত্তরঞ্জনবাবুর যুক্তি, “আমরা কমিশনের ভিত্তিতে এনবিএসটিসিকে কর্মী-শ্রমিক সরবরাহ করেছি। ওই কর্মী-শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে এনবিএসটিসিতে কাজ করেছেন। কিন্তু, ওঁদের ছাঁটাই করার বিষয়ে আমাদের আগাম কিছু জানানো হয়নি। তাই কর্মী-শ্রমিকদের যাবতীয় দায় এনবিএসটিসিকে নিতে হবে।” এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান জানান, ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে চুক্তির সময়েই যে কোনও সময়ে কর্মী সঙ্কোচন করার বিষয়টি উল্লেখ করা রয়েছে। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এনবিএসটিসিতে কাজ করতেন মনীশবাবু। মাসে ৩ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। মৃতের স্ত্রী অঞ্জলিদেবী-সহ বাড়ির লোকজনেরা দাবি করেছেন, কাজ হারানোর পর থেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন মনীশবাবু। সংসারের হাল ধরতে অঞ্জলিদেবী সম্প্রতি প্রাইভেট
টিউশন শুরু করেন। এ দিন সকালে অঞ্জলিদেবী বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়ে নেই। ধারদেনা করে কষ্টেসৃষ্টে চলে যেত। ছাঁটাই হওয়ার পরে উনি একেবারে ভেঙে পড়েন। আমি টিউশন শুরু করি। প্রয়োজনে লোকের বাড়িতে রান্নার কাজ করব ঠিক করি।
মণীশ ব্রহ্মের শোকার্ত পরিবার।-হিমাংশুরঞ্জন দেব
উনি কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারেননি।”
মনীশবাবুর দাদা পারিজাতবাবুও এনবিএসটিসি-র ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। পারিজাতবাবু বলেন, “ঠিকাদারের অধীনে হলেও অনেক বছর ধরে ওরা কাজ করছিল। হঠাৎ করে ছাঁটাই হলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়তেই পারে। ”
এই ঘটনার খবর পেয়েই মনীশবাবুর বাড়িতে যান সিপিএমের মাথাভাঙা জোনাল কমিটির সম্পাদক শ্যামল ভট্টাচার্য, পরিবহণ নিগমের মাথাভাঙা ডিপোর কয়েকজন কর্মী। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিক বিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগে আজ, রবিবার এলাকায় মিছিল করবে সিটু।
এ দিন মাথাভাঙা ডিপোর আর এক ছাঁটাই শ্রমিক চন্দন দাস বলেন, “গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মনীশবাবু-সহ আমাদের ২৯ জনকে ছাঁটাই করা হয়। এখনও আমার দু’মাসের বেতন পাওনা। কী ভাবে চালাচ্ছি তা আমরাই জানি।” দিনহাটা ডিপোর ছাঁটাই শ্রমিক অজিত পাল, কল্যাণ সরকারেরাও একইরকম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। পরিবহণ নিগমের ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক বিষ্ণু রায় বলেন, “আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। দেখা যাক কী হয়!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.