অবিশ্বাস্য! কোহলির ওই অসাধারণ ইনিংসটা আর তাতে ভর দিয়ে হোবার্টে ভারতের দুরন্ত জয় সম্পর্কে এই একটা বিশেষণই খাটে। ভারত ওই ম্যাচ জেতার পরে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে যাওয়া নিয়ে একটা আশার আলো তৈরি হয়েছিল। শুক্রবার শ্রীলঙ্কা জেতার পর সেই আলো নিভে যাওয়ায় প্রত্যেকেই হতাশ। কিন্তু মনে মনে এটাও জানি যে, টুর্নামেন্টের সেরা দু’টো দলই ফাইনালে গিয়েছে। রবিবার প্রথম ফাইনাল।
শুক্রবার শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটা অসম্ভব জেতার খিদে আর সাহস দেখলাম। যার জন্য জয়বর্ধনেকে পুরো কৃতিত্ব দিতে হবে। ও একটা বড় উদাহরণ যে, এক বার নেতৃত্ব হারানো মানে সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া নয়। তার পরেও আরও উন্নত, আরও ভাল অধিনায়ক হয়ে ফেরা যায়। মাহেলার উদাহরণ থেকে এটাও প্রমাণ হয় যে কখনও কখনও একটা ব্রেক ক্রিকেটারকে সাহায্যই করে। ফিরে গিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করে নিজের দক্ষতায় নতুন করে শান দিয়ে আরও ভাল ক্রিকেটার হয়ে ফেরত আসে সে। |
ভারতকে ঠিক রাস্তায় ফিরিয়ে আনতে হলে নির্বাচকদের খুব সম্ভবত এই উদাহরণটাকেই সামনে রেখে এগোতে হবে। বিশ্বকাপ জেতার পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের ভাগ্য ক্রমশ নীচের দিকে নেমেছে। এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেট এমন একটা মোড়ে দাঁড়িয়ে যেখান থেকে সঠিক রাস্তা দেখানোর জন্য নির্বাচকদের বড় ভূমিকা নিতে হবে। ভারত টানা আটটা টেস্ট হেরেছে। এত খারাপ রেকর্ড সাম্প্রতিক অতীতে অন্য আর কোনও ভারতীয় দলের নেই। তাই নির্বাচকেরা অপ্রিয় সত্যিটার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলে চলবে না। অস্ট্রেলিয়ায় যে ওয়ান ডে দল খেলল, এশিয়া কাপে তার প্রায় নব্বই শতাংশ ক্রিকেটারকে রেখে দেওয়া হয়েছে। মনে হয় নির্বাচকেরা চাপের মুখে এ ভাবে দল বাছতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ দল নির্বাচনের সময় ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল খেলার একটা সুযোগ তখনও ভারতের সামনে ছিল। বড় বদল ঘটালে দলের পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব পড়তে পারত।
তবে ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় শেষ আটটা টেস্টে সব বিভাগেই ভারতের দুর্বলতা ভীষণ প্রকট হয়ে গিয়েছে। নির্বাচকদের কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। সমস্যাগুলো আপাতত ঝেঁটিয়ে কার্পেটের নীচে পাঠিয়ে সব দায় আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব নিতে চলা নতুন নির্বাচন কমিটির উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সেটা হবে মস্ত ভুল। ক্রিকেট একটা কম্পিটিটিভ স্পোর্ট। এখানে কেউ পারফর্ম করতে না পারলে তাকে অন্যের জন্য জায়গা ছাড়তেই হয়। নির্বাচকদেরও এটা মাথায় রাখা জরুরি। তা না হলে ওঁরা কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের বড় ক্ষতি করে বসবেন। সবাইকে একটা কথা বুঝতে হবে, দল যখন একটা লম্বা সময় ধরে ভাল খেলতে পারছে না, তখন কয়েক জনকে বিশ্রামে পাঠিয়ে নতুনদের সুযোগ দিতেই হয়। সেটা শুধু নতুন প্রতিভাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য নয়। বিশ্রাম পেলে বাদ পড়া ক্রিকেটাররাও ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়ার সময় পাবে।
এ বার ঘরের মাঠে ভারত কয়েকটা টেস্ট সিরিজ খেলবে। আর ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়া সফরের তুলনায় অনেক ভাল ফল করবে। তা দিয়ে কিন্তু বিদেশের উইকেটে খেলতে পারে না-এই বদনাম ঘোচানো যাবে না। তার জন্য এমন একটা দল বাছতে হবে যারা বিদেশের মাটিতে গিয়ে ভাল খেলবে।
নির্বাচকদের তরফে একটা কঠোর বার্তা পাঠানো এখন খুব জরুরি। ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ওঁরা কী কী ব্যবস্থা নেন, সেটা দেখার জন্য আমরা সবাই অপেক্ষা করে আছি। নির্বাচকদের বুঝতে হবে, ওঁরা যদি এর পরেও কিছু না করে হাত গুটিয়ে থাকেন, তা হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। |