ইস্টবেঙ্গল-২ (রবিন-২)
ভবানীপুর-১ (বিশ্বজিৎ) |
ব্যান্ডপার্টির ড্রাম-বিউগলের বাজনার মধ্যে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র এবং আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে আকাশে উড়ল বেলুন ও পায়রা। ১১৬তম আইএফএ শিল্ডের ম্যাড়ম্যাড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল এতটাই সংক্ষিপ্ত।
তার থেকেও বেশি সাদামাঠা ছিল উদ্বোধনী ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের পারফরম্যান্স। তা-ও ফুটবল ঐতিহ্যে তাদের থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকা ভবানীপুর ক্লাবের বিরুদ্ধে। যার কারণ খুঁজতে গিয়ে লাল-হলুদের এক নির্ভরযোগ্য ফুটবলার জানালেন, দীর্ঘ দিন ম্যাচ না খেলায় বোঝাপড়ার অভাব ছিল।
গ্যালারির শুধু এক দিকের ফেন্সিংয়ে বাঁধা ছিল বিক্ষিপ্ত কিছু বেলুন। ঠিক যে রকম ছড়ানো-ছিটানো ছিল মাঠের ভিতর টোলগে-পেনদের ফুটবল। এএফসি কাপে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়েমেনের আল ওরুবা শহরে পৌঁছচ্ছে আজ, রবিবার। এক দিন আগে এলে তাঁরা দেখতে পেতেন বিপক্ষের বিশ্রী ফুটবল। মিস পাস। ছোট বক্সের মধ্যে থেকেও গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট। মেহতাবদের পারফরম্যান্সে যে তিনি রীতিমতো হতাশ, বাড়ি ফেরার পথে গোপন রাখেননি স্বয়ং লাল-হলুদ কোচ ট্রেভর মর্গ্যান। বিরতির সময়ে ড্রেসিংরুমে বকাবকি করেও পাল্টায়নি ছবিটা। ৪-৩-৩ ছক বদলে মর্গ্যান দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে গিয়েছিলেন পুরনো ৪-৪-২ ছকেই। গ্রুপে ইস্টবেঙ্গলের পরের ম্যাচ শিলং লাজংয়ের সঙ্গে। যারা মাঝেমধ্যেই অঘটন ঘটিয়ে থাকে। তাই ট্রফির লক্ষ্যে শিল্ডে নেমেও ইস্টবেঙ্গলের চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। |
শিলচরে আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের প্রাথমিক পর্ব থেকে ভবানীপুর সদ্য ফিরেছে একটিও ম্যাচ না জিতে। ছ’ম্যাচে ১১ গোল খেয়ে। সেই দলের ডিফেন্সেও রবিন-টোলগেরা ভয় ধরাতে পারলেন না। কারণ, দীর্ঘকায় ডগলাস। পোড়খাওয়া এই ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার অসাধারণ ট্যাকলে যেমন বল ছিনিয়ে নিয়েছেন। তেমনই সেট-পিসের সময় উঠে এসেছেন বিপক্ষ বক্সেও। তাঁর ফুটবল-বুদ্ধির প্রশংসা করছিলেন মর্গ্যানও। এ ছাড়া ভবানীপুরের হয়ে ভাল খেললেন সন্তোষ ওঁরাও।
প্রথমার্ধে মেহতাবকে আটকে দেওয়ায় উঁচু বলে খেলতে চাইছিল ইস্টবেঙ্গল। যে চেষ্টা মোটেই কাজ দেয়নি। বিরতির পর ডগলাসের দলের অনভিজ্ঞ ফুটবলাররা সেই চাপটা আর রাখতে পারেননি। তবু লাল-হলুদ ফুটবলাররা সেই সুযোগটা নিতে পারলেন না। বরং ডগলাসের টাফ ট্যাকলে মাথা গরম করতে দেখা গেল ইস্টবেঙ্গলের টোলগে-রবিনকে। ডগলাসকে জঘন্য মেরেও শুধু হলুদ কার্ড দেখলেন টোলগে। ওপারা, রবিন সিংহও কার্ড দেখলেন এ দিন।
ছ’মিনিটে রবিনের যে গোলে ভবানীপুর পিছিয়ে পড়ল তাতেও অবশ্য ছিল ডগলাসের ‘টাচ’। টোলগের দুর্বল শট শুয়ে পড়েও পুরো আটকাতে পারেননি ডগলাস। বল গড়িয়ে রবিনের পায়ে পৌঁছলে হাফটার্নে ফিরেই শট নিয়েছিলেন রবিন। যার মিনিট দশেক পর ১-১ করেন বিশ্বজিৎ বিশ্বাস। গোলমুখী যে শটে তিনি মাথা ছোঁয়ালেন সেই শটটি ছিল ডগলাসেরই। যদিও বিরতির পরই রবিন ২-১ করে দেন। সুশান্ত ম্যাথুর পাস থেকে ডান পায়ের শটে।
ম্যাচ শেষে ডগলাস ক্ষোভ উগড়ে দিলেন ম্যাচের সেরা রবিনের উপর। বলছিলেন, “মাঠে সারাক্ষণ গালাগাল করছিল রবিন। এত কথা কেন বলবে? আমি ইস্টবেঙ্গলকে ওর থেকে বেশি ট্রফি দিয়েছি। গোলও করেছি ওর থেকে বেশি।” যা অস্বীকার করে রবিন বললেন, “আমি কোনও কথা বলিনি।”
মেহতাব হোসেন এবং উগা ওপারা এ দিন সামান্য চোট পাওয়ায় কিছুটা চিন্তায় মর্গ্যান। তবে তিনি আশায়, “গুরবিন্দর আর রবার্ট সুস্থ হচ্ছে মঙ্গলবারের আগেই। ডিফেন্সটা অন্তত আলাদা হবে।”
কিন্তু স্ট্রাইকারদের গোল নষ্টের প্রদর্শনী বন্ধ হবে তো?
ইস্টবেঙ্গল: সন্দীপ, হরমনজোৎ, সৌমিক, ওপারা, রবিন্দর, সুশান্ত (পাইতে), পেন, মেহতাব, টোলগে, রবিন (বলজিৎ), লেন (সঞ্জু)। |