কংগ্রেসের চাল, ভোট মিটতেই জালে বাবুসিংহ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ঠিক বিকেল পাঁচটায় উত্তরপ্রদেশের ভোট শেষ হতেই বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে গ্রেফতারের কথা ঘোষণা করল সিবিআই। দু’দিন পরে ভোটের ফল প্রকাশের আগে এর ফলে অস্বস্তিতে পড়ল বিজেপি। আর চাপের মুখে মায়াবতী। গ্রেফতারের পর আদালতে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি
করে গোটা ঘটনার জন্য মায়াবতীকেই দায়ী করলেন বাবুসিংহ।
জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনে দুর্নীতি কাণ্ডে এযাবৎ দশ জনকে গ্রেফতার করা হলেও সিবিআই মায়াবতী মন্ত্রিসভার প্রাক্তন পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রী বাবুসিংহকে ছোঁয়নি। মায়াবতীর দল থেকে বিতাড়িত বাবুসিংহের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়েও তুমুল বিতর্ক হয়। ফলে তাঁর সদস্যপদও স্থগিত রাখা হয়। তা সত্ত্বেও পৃথক মঞ্চ থেকে উত্তরপ্রদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত বিজেপির পক্ষেই ভোট চেয়ে প্রচার করে গিয়েছেন তিনি। আজ ভোটপর্ব শেষ হতেই যে ভাবে বাবুসিংহকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হল, তা নিয়েও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ দেখছে বিজেপি। বাবুসিংহের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ বহুজন সমাজ পার্টির বিধায়ক রামপ্রসাদ জয়সওয়ালকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিজেপি নেতা জগৎপ্রকাশ নাড্ডা বলেন, “ঠিক ভোট শেষ হতেই যে ভাবে বাবুসিংহকে গ্রেফতার করা হল, তাতে স্পষ্ট, কংগ্রেসের সদর দফতর স্থির করে কখন কাকে গ্রেফতার করা হবে। সিবিআই এখনও কংগ্রেসের ইশারাতেই কাজ করে। এখনও পর্যন্ত এই দুর্নীতির রাঘব বোয়ালকে ধরছে না কংগ্রেস ও সিবিআই। তাঁদের প্রতি নরম মনোভাব কেন নেওয়া হচ্ছে? এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তারও তদন্ত হওয়া উচিত।” কিন্তু কংগ্রেসের মুখপাত্র রশিদ অলভির বক্তব্য, “আইন আইনের পথেই চলবে। এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক বিষয় নেই। কংগ্রেস বা সরকার ঠিক করে না, সিবিআই কী করবে।” |
আদালতে বাবুসিংহ কুশওয়াহা। শনিবার গাজিয়াবাদে। ছবি: পিটিআই |
তবে বিজেপি নেতৃত্ব নিশ্চিত, ভোটের ফল বেরোনোর দু’দিন আগে রাজনৈতিক খেলায় নামল কংগ্রেস। ভোটের শেষ দিনে বাবুসিংহকে গ্রেফতার করে কংগ্রেস এক ঢিলে তিনটি চাল দিতে চেয়েছে। প্রথমত, এত দিন গ্রেফতারি ঠেকিয়ে রাখা হয়েছিল, যাতে কুশওয়াহা জেলে যাওয়ায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে সহানুভূতি ছড়িয়ে বিজেপির ঝুলিতে বাড়তি ভোট না যায়। দুই, রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেস এ বারে বিজেপিকে আক্রমণ করে বলবে, যে দল দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত কথা বলে, তাঁরাই জেনেবুঝে এক জন দুর্নীতিগ্রস্তকে দলে নিয়েছে। তিন, গ্রেফতারের পর থেকেই বাবুসিংহ বলতে শুরু করেছেন, যে কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার প্রধান ছিলেন মায়াবতী। ফলে মায়াবতীর নির্দেশেই যাবতীয় ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে মায়াবতীকেও আর একটি মামলায় সিবিআই চাপে রাখতে পারবে। কেন্দ্র কিংবা রাজ্যের রাজনীতিতে কংগ্রেসও সেটি সুকৌশলে ব্যবহার করতে পারবে।
বুথ ফেরত বিভিন্ন সমীক্ষায় যা-ই দেখানো হোক, সংখ্যা অনুকূলে থাকলে এখনও মায়াবতীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপির একাংশ সরকার গড়ার পক্ষপাতী। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, বাবুসিংহকে শেষ দিনে গ্রেফতার করে সেই সম্ভাবনা বিনষ্টের চেষ্টা করছে কংগ্রেস। সে কারণে এখন থেকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণের সুরটি চড়া করে রাখতে চাইছে বিজেপি। নাড্ডা বলেন, “এই বাবুসিংহকে অনেক দলই নিতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু বাবুসিংহ নিজে স্থির করেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন।” |