|
ঘরে আটকে সুযোগ
হারালেন বরুণ, বলছে দলই দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
|
উত্তরপ্রদেশের ভোট শেষ হল। গোটা রাজ্য জুড়ে ঝড়ের গতিতে প্রচার করলেন রাহুল গাঁধী। সপরিবারে রায়বরেলী-অমেঠীতেও প্রচার করেছেন প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু গাঁধী পরিবারের অন্য তরুণ নেতা?
বরুণ গাঁধী?
নিজের ও মা মানেকা গাঁধীর লোকসভা কেন্দ্রের বাইরে তিনি পা-ও রাখলেন না। বিজেপির সাংসদ হয়েও উল্টে ভোটের মধ্যে দলের কোন্দল বাইরে এনে বলে বসলেন, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ৫৫ জন মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী! সমাজবাদী পার্টিই উত্তরপ্রদেশে সরকার গড়বে।
বরুণ যেমন পিলিভিট আর সঞ্জয়-জায়া মানেকার কেন্দ্র আওনলার বাইরে যাননি, বিজেপির কোনও শীর্ষ নেতাও তাঁদের এই কেন্দ্র দু’টিতে প্রচার করেননি। কিন্তু নিতিন গডকড়ীর নেতৃত্বে সব শীর্ষ নেতা যখন উত্তরপ্রদেশে উদয়-অস্ত ঘাম ঝরাচ্ছেন, সেই সময় বরুণের আর একটি বিস্ফোরক মন্তব্যে খেপে উঠেছেন দলের নেতারা। গত লোকসভা নির্বাচনে বরুণের সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের জন্য খেসারত দিতে হয়েছিল বিজেপিকে। এ বারে দলের নেতাদের মনোভাব দেখে নিতিন গডকড়ীকেও বলতে হচ্ছে, ভোটের পর বরুণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বরুণ অবশ্য দলের নেতাদের চাপে বিতর্কিত মন্তব্য গিলে নিয়েছেন। সাফাইও দিয়েছেন। দাবিও করছেন, “দলের নেতাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। কেউ আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেননি। আমি যে ব্যাখ্যা দিয়েছি, তাতে অনেকেই সন্তুষ্ট।”
কিন্তু বরুণ যেন দলের কাছে বোঝা হয়ে উঠছেন। বরুণকে বিজেপি না পারছে গিলতে, না পারছে উগরাতে।
কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল?
কংগ্রেসের গাঁধী পরিবারের সঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্যই বরুণকে বিজেপিতে নিয়ে এসেছিলেন প্রমোদ মহাজন। বরুণ মনে করেছিলেন, কংগ্রেসে রাহুল গাঁধী যে গুরুত্ব পান, বিজেপিতে তিনি তারই সমান মর্যাদা পাবেন। গত বছর অক্টোবরে যখন উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে দলের কৌশল চূড়ান্ত হচ্ছে, সেই সময় পর্যন্ত বরুণ নিশ্চিত ছিলেন, তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে ভোটে যাবে দল। ঘনিষ্ঠমহলে সে কথা বলেও ছিলেন
তিনি। কিন্তু উমা ভারতীকে দলে এনে দলের ‘মুখ’ করলেন গডকড়ী। দলের কোন্দলের জেরে উমাকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা যায়নি বটে, কিন্তু এ বারের নির্বাচনে উমাই অঘোষিত নেতা। হতাশ ও ক্ষুব্ধ বরুণ নিজের কেন্দ্রে নমো নমো
করে প্রচার করলেন। আর খানিকটা নরেন্দ্র মোদীর মতো গোঁসা করেই গোটা রাজ্যে ঘুরলেন না।
উত্তরপ্রদেশের প্রচারের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা বিজেপি নেত্রী তথা অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাইজি করুণা শুক্লর বক্তব্য, “ছেলেটি নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারছে।” করুণা বলছেন, “নরেন্দ্র মোদী তো তা-ও বড় মাপের নেতা। নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। কিন্তু শুধু গাঁধী পরিবারের সদস্য হওয়ার কারণে বরুণকে রাতারাতি বিজেপিতে বড় পদ ও গুরুত্ব দেওয়া হবে, দলের তো সেই সংস্কৃতি নেই।” জানালেন, বরুণকে উত্তরপ্রদেশে প্রচারের জন্য তিনি নিজে বারবার ফোন করেছেন। হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে দিতেও রাজি ছিলেন। কিন্তু বরুণ নিজে অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। করুণা বললেন, “অথচ বিভিন্ন প্রার্থীকে দিয়ে ফোন করাচ্ছেন তাঁর প্রচারের দিন ধার্য করানোর জন্য। এটাই কি তাঁর গুরুত্ব বাড়ানোর কৌশল?”
বিজেপির এক শীর্ষ নেতাও একই সুরে বললেন, “রাহুলের থেকে দশ বছরের ছোট বরুণ। সবে মাত্র ৩২ বছর বয়স। তাতেই দলের সচিব পদ পেয়েছেন। বরুণ নিজেকে প্রমাণ করুন। ধীরে ধীরে পদোন্নতি, বাড়তি গুরুত্ব আপনা আপনি আসবে।” তিনিও মনে করেন, উত্তরপ্রদেশের ভোটে নিজেকে প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল বরুণের। কিন্তু নিজের অহংয়ের (ইগো) জন্য তা-ও হারালেন।
রাহুল গাঁধী, বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে এখনও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বরুণের। ভোট পর্বের মধ্যেই রাহুল ও বরুণের একটি বৈঠকের জল্পনা নিয়েও গোটা রাজধানী সরগরম হয়ে ওঠে। বিজেপি নেতারা বিষয়টিকে তো আমলই দিতে চাইছেন না। কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “কেউ যদি নিজের দলের উপরে রুষ্ট হন, সেটি তাঁকেই জিজ্ঞাসা করুন। সব বিষয়ে আমাদেরই মন্তব্য করতে হবে এটা নিশ্চয়ই জরুরি নয়।” বরুণের ঘনিষ্ঠমহল অবশ্য বলছে, কংগ্রেসে গেলে রাহুলের মতো গুরুত্ব তাঁর পক্ষে পাওয়া সম্ভব নয়। আবার বিজেপিতেও মনপসন্দ গুরুত্ব পাচ্ছেন না। তা হলে বরুণ কী করবেন?
এর জবাব একমাত্র বরুণ নিজেই দিতে পারেন। |