মুলায়মের পালে বদলের হাওয়া কংগ্রেসের লাভ দেখছে
না কোনও সমীক্ষা
যে রাজ্য এখনও জাতীয় রাজনীতিকে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, সেই উত্তরপ্রদেশে সাত দফা ভোট পর্বের পরে বুথ-ফেরত সমীক্ষায় সকলকে পিছনে ফেলে অনেকটা এগিয়ে মুলায়ম সিংহ যাদব। সমীক্ষাগুলির মতে, মায়াবতীর এ বার ক্ষমতার ধারেকাছে আসার সম্ভাবনা নেই। আর দুই প্রধান জাতীয় দলের টক্করে প্রায় সব ক’টি সমীক্ষাই কংগ্রেসের থেকে সামান্য হলেও এগিয়ে রেখেছে বিজেপি-কে।
শনিবার পাঁচ রাজ্যের দীর্ঘ ভোট পর্ব শেষ হল। মঙ্গলবার সব রাজ্যেই একসঙ্গে ভোট গণনা। তবে উত্তরপ্রদেশের ফলই যে জাতীয় রাজনীতিতে সব থেকে বেশি প্রভাব ফেলবে, সে ব্যাপারে প্রায় সব রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই একমত। বিশেষ করে ইউপিএ-২ এর ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে উত্তরপ্রদেশের ফলের উপরে। বস্তুত সেই কারণেই উত্তরপ্রদেশকে পাখির চোখ করে লড়াইয়ে নেমেছিলেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু বুথ-ফেরত সমীক্ষা তাঁকে আশার আলো দেখাচ্ছে না।
তবে এটা ঠিক যে বুথ-ফেরত সমীক্ষা সব সময় মেলে না। উত্তরপ্রদেশের গত বিধানসভা ভোটই তার সব চেয়ে বড় উদাহরণ। ২০০৭-এর সেই ভোটে সব বুথ-ফেরত সমীক্ষাই ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু সেই ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমাণ করে একার জোরে মসনদে বসেছিলেন বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী। এর উল্টো ছবিটা দেখা গিয়েছিল গত বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে। প্রায় কাঁটায় কাঁটায় মিলে গিয়েছিল স্টার নিউজ-এ সি নিয়েলসেনের সমীক্ষার ফল। তবে শেষ পর্যন্ত পূর্বাভাস মিলুক বা না মিলুক, বুথ-ফেরত সমীক্ষা থেকে ভোটারদের মানসিকতার একটা আঁচ যে পাওয়া যায় সেটা মোটামুটি সর্বজনস্বীকৃত।
স্টার নিউজ-এ সি নিয়েলসেনের করা বুথ-ফেরত সমীক্ষা বলছে, উত্তরপ্রদেশে ত্রিশঙ্কু বিধানসভার পূর্বাভাস দিলেও মায়াবতীর দলের থেকে একশো আসনে এগিয়ে রাখছে মুলায়মের দলকে। সমাজবাদী পার্টিকে দেওয়া হয়েছে ১৮৩টি আসন। সমীক্ষার মতে, কংগ্রেস পাবে ৫১টি আসন। তাদের জোটসঙ্গী অজিত সিংহের রাষ্ট্রীয় লোকদল ১১টি। এই জোটের থেকে ৯টি আসন বেশি পেয়ে রাজ্যে তিন নম্বর আসনটি ধরে রাখবে বিজেপি।
এই পূর্বাভাস ঠিক হলে মুলায়মের একার পক্ষে সরকার গড়া সম্ভব হবে না ঠিকই, (৪০৩ আসনের বিধানসভায় সরকার গড়তে ২০২ জন বিধায়ক দরকার) এমনকী ৭ জন নির্দল বা ছোট দলের বিধায়ককে সঙ্গে নিয়েও নয়। কংগ্রেসের সমর্থন তাদের দরকার হবেই। কিন্তু সেটা আবার এতটা নয় যে, কংগ্রেস তাদের চাপে রাখতে পারবে। অথচ কংগ্রেস তথা রাহুলের এ বার মূল প্রয়াসই ছিল, নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যাতে সরকার গঠন করতে গিয়ে মুলায়মকে তাদের উপর পূর্ণমাত্রায় নির্ভরশীল হতে হয়। সে ক্ষেত্রে দিল্লির রাজনীতিতে
বিস্তারিত জানতে...
সমাজবাদী পার্টিকে পাশে পাবে কংগ্রেস। তৃণমূলের চাপ উপেক্ষা করে সংস্কারমুখী বিভিন্ন বিল পাশ
করা তখন সহজ হবে। কিন্তু সমীক্ষার ফল তাদের সেই আশায় আজ জল ঢেলে দিয়েছে। হেডলাইন্স টুডে তো সপাকে ১৯৫ থেকে ২১০টি আসন দিয়েছে। যার অর্থ কংগ্রেসকে মুলায়মের দরকারই হবে না। আর সিএনএন-আইবিএন কোনও সংখ্যা না বললেও সপা ৩৪ শতাংশ ভোট পাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের নিরিখে যাকে একপ্রকার ‘ঝড়’ই বলা চলে। ২০০৭ সালে একার জোরে সরকার গড়া বিএসপি পেয়েছিল ৩০ শতাংশ ভোট।
প্রকাশ্যে কংগ্রেস নেতারা অবশ্য সমীক্ষার এই ফলকে অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য দিগ্বিজয় সিংহের বক্তব্য, ২০০২ সালে নিজের সেরা সময়ে মুলায়ম ১৪৩টি আসন পেয়েছিলেন। আর তাঁর ‘গুন্ডারাজের’ স্মৃতি যখন অমলিন, তখন কী করে তিনি এত আসন পাবেন!
সমীক্ষার ফল মানতে নারাজ বিএসপি নেতারাও। তাঁদের মতে, সপা ৩৪ শতাংশ ভোট পাওয়ার অর্থ দলিতরাও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যেটা কার্যত অসম্ভব বলেই বিএসপি নেতাদের দাবি। গত বিধানসভা ভোটে ‘সর্বজন’ সমাজ গঠনের যে প্রত্যাশা মায়াবতী দেখিয়েছিলেন, সমীক্ষার ফল সত্যি হলে তা নিঃসন্দেহে ধাক্কা খাবে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দলিতদের একাসনে বসানোর চেষ্টাটা উচ্চবর্ণের ভোটাররা শেষ পর্যন্ত ভাল চোখে দেখেননি। ফলে তাঁরা মায়াবতীর পাশ থেকে সরে গিয়েছেন। ‘অপশাসনের’ অভিযোগের পাশাপাশি জাতপাতের রাজনীতির এই পরিবর্তনই বিএসপি-কে ক্ষমতার বৃত্ত থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
সমীক্ষার ইঙ্গিতই যদি ঠিক হয়, তা হলে প্রশ্ন, মায়ার থেকে মুখ ফেরানো ভোটাররা কংগ্রেস বা বিজেপি-র দিকে ঝুঁকলেন না কেন? বিশেষত রাহুল তথা গোটা গাঁধী পরিবার যেখানে সর্বশক্তি ঢেলে দিয়েছিলেন। এখানেই রাহুলের ভোট টানার ক্ষমতা নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হচ্ছে বলে কংগ্রেসেরই একটি অংশের মত। বিশেষ করে প্রায় ‘দিশাহীন’ বিজেপি-কে পিছনে ফেলে তিন নম্বর স্থান দখলে ব্যর্থ হওয়ার ইঙ্গিত কংগ্রেস শিবিরে হতাশা বাড়িয়েছে। তার উপরে মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ যদি মুখ্যমন্ত্রী হন, তা হলে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ফল নিয়েও সংশয় থাকবে।
কংগ্রেসে অন্য অংশ অবশ্য এই সম্ভাব্য ‘খারাপ’ ফলের জন্য রাহুলকে দায়ী করছেন না। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায় উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস যদি ৫০টি আসনও পায়, সেটা রাহুলেরই কৃতিত্ব।
আর ১২৫টির বেশি আসন পাবেন বলে দাবি করা দিগ্বিজয় সিংহের মন্তব্য, “নেতা একটা উন্মাদনা তৈরি করতে পারেন ঠিকই। তার পর সেটাকে ভোটে পরিণত করাটা কিন্তু দলীয় কর্মীদের দায়িত্ব।”
শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, উত্তরাখণ্ড এবং পঞ্জাবও কংগ্রেসকে চিন্তায় রাখছে। স্টার নিউজ এই দুই রাজ্যের বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল আজ প্রকাশ করেনি। সিএনএন-আইবিএনের মতে, পঞ্জাবে এগিয়ে থাকছে অকালি দল-বিজেপি জোটই। উত্তরাখণ্ডে তারা কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখলেও ব্যবধান মোটেই নিশ্চিন্তে থাকার মতো নয়।
অন্য দিকে, বিজেপি-র জন্য আজকের সমীক্ষা আশার আলো দেখাচ্ছে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, উত্তরপ্রদেশে যদি বিজেপি ৭০-এর বেশি আসন পায় এবং পঞ্জাব বা উত্তরাখণ্ডের মধ্যে একটি রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে, তা হলে তা দলীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বড় সাফল্য হিসেবে পরিগণিত হবে। বড় রকমের ধাক্কা খাবেন নরেন্দ্র মোদী। শত তোয়াজ সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশে এক বারের জন্য প্রচারের যাননি মোদী। ফলে সমীক্ষার পূর্বাভাস ফলে গেলে এটাই প্রমাণিত হবে যে, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মোদীকে ছাড়াই এগোতে পারবে বিজেপি। গডকড়ীর হাত তখন আরও শক্ত হবে।
আজ ভোটপর্বের শেষে বুথ-ফেরত সমীক্ষা অন্তত এই জল্পনাগুলোকে আরও বেশি করে উস্কে দিয়ে গেল। বাকিটা তোলা রইল মঙ্গলবার ফল বেরনো পর্যন্ত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.