এয়ারপোর্ট থানা লিখিত অভিযোগ নিলেও তদন্ত শুরু করেনি। তাঁর কাছে কিছু জানতেও চায়নি। এই নালিশ জানিয়ে শনিবার আদালতের দ্বারস্থ হন রাজারহাটে গুলিতে জখম সিপিএম কর্মী শঙ্কর রায়ের স্ত্রী টিঙ্কু রায়। ওই আবেদনের ভিত্তিতে বারাসতের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম নামচু ওই অভিযোগ এফআইআর হিসেবে গণ্য করে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রের খবর, টিঙ্কুদেবীর অভিযোগপত্রে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত-সহ ১৪ জনের নাম রয়েছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের দিন একটি স্কুল খোলাকে কেন্দ্র করে রাজারহাটের বাবলাতলায় সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। তাতেই গুলিবিদ্ধ হন শঙ্করবাবু। তাঁর বাম উরুতে গুলি লাগে। সংঘর্ষে জখম হন দু’পক্ষের কয়েক জন। ওই সংঘর্ষের সূত্র ধরে তৃণমূল সে দিনই রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায়-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ জনা তিনেক সিপিএম সমর্থককে গ্রেফতার করে। তাপসবাবুর বাড়িতেও পুলিশ যায়। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। এর পরে পুলিশের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্ব অভিযোগ করেন, একই ঘটনায় দু’টি অভিযোগ জমা পড়লেও পুলিশ শাসক দলের কাউকে গ্রেফতার করেনি। আবেদনকারীর কাছে কিছু জানতেও চায়নি। উল্টে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করেছে।
গুলিবিদ্ধ শঙ্করবাবু বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। টিঙ্কুদেবীর আইনজীবী মিহির দাস শনিবার বলেন, “ঘটনার রাতে পুলিশ আমার মক্কেলের লিখিত অভিযোগ নিলেও কোনও ‘রিসিট’ দেয়নি। |
ফলে আমরা যে অভিযোগ দায়ের করেছি, তার কোনও প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। সেই সুযোগ নিয়ে পুলিশ এখন আমাদের যাবতীয় বক্তব্য অস্বীকার করছে।” পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষের রাতেই তিনটি পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় এয়ারপোর্ট থানায়। একটি করেন তৃণমূল বিধায়কের দেহরক্ষী স্বপন মৃধা। অন্য দু’টি সিপিএম এবং তৃণমূলের পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়। পুলিশ দাবি করেছে, ওই রাজনৈতিক সংঘর্ষের ভিত্তিতে বেআইনি সমাবেশ, মারধর করে গুরুতর আহত করা ও অস্ত্র আইনে তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, “টিঙ্কুদেবীর সঙ্গে পুলিশের একাধিক বার কথা হয়েছে। শুক্রবার আমি নিজে কথা বলেছি। তখনও তিনি তদন্তে গাফিলতি নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি। এখন আদালত যা নির্দেশ দেবে, তাই মানবে পুলিশ।” পুলিশ কমিশনার এ-ও বলেছেন, ওই মহিলার অভিযোগ খতিয়ে দেখে যদি কারও দোষ প্রমাণিত হয়, তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংঘর্ষের পরে সিপিএম নেতা গৌতম দেব দাবি করেছিলেন, বিধায়কের দেহরক্ষীর গুলিতেই তাঁদের দলের কর্মী শঙ্করবাবু জখম হন। কিন্তু শঙ্করবাবুর স্ত্রী টিঙ্কুদেবী আদালতে যে অভিযোগ পেশ করেন, তাতে ওই দেহরক্ষীর নাম নেই। তাঁর অভিযোগ, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজারহাটে সংঘর্ষের সময়ে গুলি চালিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী রাজু পাল। প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের রিভলভার এক জন তৃণমূল কর্মীর হাতে গেল কী করে? তা হলে কি তিনিই ওই অস্ত্র কেড়েছিলেন? পুলিশ ও সিপিএম এর কোনও জবাব দেয়নি। সরাসরি জবাব এড়িয়ে তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, “আমি পালিয়ে যাইনি, যাবও না। আইন ও প্রশাসনের উপর আমার আস্থা আছে।” |