সরকার ‘স্বেচ্ছাচারী’, পাল্টা তোপ বিমানের
পার্ক স্ট্রিট, কাটোয়া, গাঙ্গুলিবাগানের মতো ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, বর্তমান সরকার দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আসলে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ করছে। রাজারহাটে ‘সন্ত্রাসে’র প্রতিবাদে মিছিল করে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু।
রাজ্যের প্রথম ‘মহিলা’ মুখ্যমন্ত্রীকেও কড়া আক্রমণ করেছেন তিনি। সম্প্রতি প্রধান বিরোধীদল সিপিএমের রাজনৈতিক বক্তব্যেই স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক ‘হামলা এবং সংঘর্ষে’র ঘটনার পাশাপাশিই তারা রাজ্যে লাগাতার ধর্ষণের ঘটনাকে সামনে রেখে সরকারকে আক্রমণের রাস্তায় যাচ্ছে। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর আমলেই রাজ্যে মহিলাদের মান-সম্মান ‘লুঠ’ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিমানবাবু।
বামপন্থীদের ডাকা গত মঙ্গলবারের ধর্মঘটে রাজারহাটের বাবলাতলায় বন্ধ স্কুল খোলা নিয়ে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ বাধে। বোমা, গুলি চলে। তাতে দু’পক্ষের লোকই জখম হন। সিপিএমের কর্মী শংকর রায়ের উরুতে গুলি লাগে। নিউ টাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত অভিযোগ করেন, রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ওই হামলা হয়েছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগে শনিবার বাগুইআটি থেকে রাজারহাটের নারায়ণপুর পর্যন্ত মিছিল করে সিপিএম।
মিছিলের পুরোভাগে বিমানবাবু ছাড়াও ছিলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। বেশিরভাগ সময়েই তাঁরা ছিলেন হুডখোলা জিপে। তবে জিপ ছেড়ে কিছুটা পায়ে হেঁটেও সমর্থকদের ‘উজ্জীবিত’ করেন বিমানবাবু। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে যুব-মহিলা সমর্থকদের ভিড়ও ছিল মিছিলে। বেলা আড়াইটে থেকেই ছোট ট্রাক, ম্যাটাডোরে চেপে উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মিছিলে যোগ দিতে বাগুইআটি, তেঘরিয়া এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। গাড়িগুলি রাখা হয় ভিআইপি রোডের ধারে। নেতারা হাজির হন বিকাল পাঁচটার আগেই। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাগুইআটি মোড় থেকে মিছিল এগোয় নারায়ণপুরের দিকে। ভিআইপি রোড ধরে জোড়ামন্দির-রাজারহাট রোড-চিনার পার্ক মোড় পার হতেই পৌনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায় মিছিলের। চিনার পার্ক পেরিয়ে বাবলাতলা হয়ে মিছিল ঢোকে নারায়ণপুরে। স্থানীয় মণিখোলায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।
বুধবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে মিছিলের তিন দিনের মাথায় এ দিনের মিছিল দেখে ‘উচ্ছ্বসিত’ সিপিএম। এদিনই যাদবপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিল প্রসঙ্গে রাজারহাটে দলীয় কার্যালয়ে বিমানবাবু জানান, আন্দোলনের জন্য বিরোধীদলের একমাত্র সম্বল মিছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারকে কেন বিরোধীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পাল্টা মিছিল করতে হচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। বিমানবাবুর মন্তব্য, “পাল্টা মিছিল করে বর্তমান রাজ্য সরকার কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তা সাধারণ মানুষ বুঝে নিক।” তৃণমূল যে এ দিন বাইরে থেকে লোক এনে মিছিলের ‘কলেবর’ বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে, তাকে ‘কটাক্ষ’ করে বিমানবাবুর মন্তব্য, “গাঙ্গুলিবাগানের মিছিলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দলীয় কর্মী ছাড়া আর কোনও জেলা থেকে কিন্তু লোক জড়ো করে মিছিল বার করতে হয়নি আমাদের।”
যে ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন সিপিএমের মিছিল ছিল, সে প্রসঙ্গে বিমানবাবুর অভিযোগ, “রাজারহাটে দলীয় কর্মী শংকরবাবুর স্ত্রীয়ের অভিযোগ থানার পুলিশ নিতে চায়নি। তাঁর স্ত্রীকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। এই ঘটনা প্রশাসনের কাছে লজ্জা। বোঝাই যাচ্ছে, রাজ্য সরকার গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করতে পারছে না। তারা আসলে দলতন্ত্রকেই প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তারা স্বেচ্ছাচারিতা করছে। রাজ্যের মানুষও তা একের পর এক ঘটনায় বুঝতে পারছেন।”
সংবাদমাধ্যমকেও ‘স্বাধীন ভাবে’ রাজ্য সরকার কাজ করতে দিতে চাইছে না বলেও অভিযোগ করেন বিমানবাবু। তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। এই সরকার সংবাদমাধ্যমেরও টুঁটি টিপে ধরছে।” সেই প্রসঙ্গেই বিমানবাবুর প্রশ্ন, “এ ভাবে কি সরকার চলতে পারে?” তাঁর আরও অভিযোগ, “এখন এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য চালাচ্ছেন। অথচ এ রাজ্যে মহিলাদেরই মান-সম্মান লুঠ হচ্ছে। আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সব সাজানো ঘটনা। সাধারণ মানুষ কিন্তু দেখছেন। তাঁরাই এর বিচার করবেন।” বিমানবাবুর মন্তব্য, “রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে ধরনের সংঘর্ষ ঘটছে, তাতে বিচলিত হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা সকলেই রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। এতে প্রশাসন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কী ধারণা হচ্ছে?”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.