‘ফলো অন’ করলেও বুদ্ধকে ‘টেক্কা’ মমতার
‘ফলো অন’ করার পরেও যে ম্যাচ জিতে বেরিয়ে যাওয়া যায়, শনিবার যাদবপুরে তা প্রমাণ করে দিল রাজ্যের প্রধান শাসন দল তৃণমূল।
বুধবার যাদবপুরে ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে গড়িয়া পর্যন্ত বামফ্রন্টের মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার পাল্টা বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা প্রায় একই পথে মিছিল করেছিলেন। কী কলেবরে, কী স্বতঃস্ফূর্ততায় বুদ্ধবাবুদের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন পার্থবাবুরা। কিন্তু এ দিন ‘উল্টোপথে’ যাদবপুরে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে মিছিল হল, তাতে বুদ্ধবাবুদের টেক্কা দিয়েছেন বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি।
মুখ্যমন্ত্রীর মিছিল ‘সফল’ করতে হাওড়ার আমতা, বাগনান, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার দমদম, বারাসত, স্বরূপনগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর, ক্যানিং, বারুইপুর, বেহালা, এমনকী, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও গাড়ি ভর্তি ‘সমর্থক’ আনা হয়েছিল। বিকেল চারটের পর থেকেই দলীয় পতাকা লাগানো ম্যাটাডোর, বাসের জমায়েত শুরু হয় গাঙ্গুলিবাগান মোড়ে। গাঙ্গুলিবাগানের জমায়েতে ‘লোক’ নামিয়ে প্রায় হাজারখানেক গাড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এর পরে অপেক্ষা করতে থাকে ইএম বাইপাসের পাটুলি থেকে বাঘাযতীন উড়ালপুলের সামনে বা সুকান্ত সেতুর একধারে। অনেক গাড়ি আবার মিছিলের পথেই ৮বি থেকে যাদবপুর থানার মাঝের রাস্তার একধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। সুকান্ত সেতুর মুখ পেরিয়ে মিছিল ৮বি-র দিকে এগোতে শুরু করলে তার পিছু নেয় দূর-দূরান্ত জেলা থেকে আসা গাড়িগুলিও। মিছিল যাদবপুর থানা এবং থানা ছাড়িয়ে গড়িয়াহাটের দিকে এগোতে শুরু করলে মিছিলও হাল্কা হতে শুরু করে।
রাজ্যের ‘প্রাক্তন অধিনায়ক’ যেমন হুড খোলা জিপে বুধবার মিছিল করেছিলেন, এ দিন রাজ্যের ‘বর্তমান অধিনায়িকা’ও ছিলেন হুডখোলা জিপেই। কোনও ভাষণ দেননি। হাত নেড়েছেন জনতার দিকে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম মিছিল করলেন মমতা। মিছিলের বহর দেখে যিনি মুচকি হেসেছেন। তৃপ্তির হাসি। বিকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ সুকান্ত সেতু থেকে নেমে মমতা মিছিলে যোগ দেন। তার আগে দলীয় নেতৃত্বকে নির্দেশ দেন, রাজা সুবোধ মল্লিক রোডের একটি লেন ধরে মিছিল যাবে। বুদ্ধবাবুদের মতো রাস্তা জুড়ে মিছিল হয়নি এ দিন।
তৃণমূলের মিছিলে যাওয়ার পথে সুকান্ত সেতুতে আটক ম্যাটাডর ভ্যানের সারি। ছবি: প্রদীপ আদক
মমতার জিপে ছিলেন কবি জয় গোস্বামী, নাট্যব্যক্তিত্ব অর্পিতা ঘোষ ও অভিনেতা-বিধায়ক চিরঞ্জিত। পরের জিপে রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক তাপস রায় প্রমুখ। ঠিক ছিল, মমতা গাঙ্গুলিবাগানেই যাবেন। আচমকা সুকান্ত সেতু থেকে তিনি মিছিলে যোগ দেওয়ায় গাঙ্গুলিবাগানে তাঁর জন্য অপেক্ষারত দলীয় কর্মী-সমর্থকরা খানিকটা হতচকিত হয়ে যান। ফলে মিছিল খানিকটা অগোছাল হয়ে যায়।
তৃণমূল নেতাদের দাবি, “আমাদের মিছিল ওদের থেকে অনেক বড় হয়েছে।” দৃশ্যতও অন্যকিছু মনে হয়নি। তবে প্রায় গোটা রাজ্য থেকে লোক আনায় তা অপ্রত্যাশিতও ছিল না। বামেদের চেয়ে তৃণমূলের মিছিল সময় অনেক বেশি নিয়েছে। বুদ্ধবাবুর মিছিলের রাস্তা ছিল প্রায় চার কিলোমিটার। কিন্তু মমতার মিছিল যায় গাঙ্গুলিবাগান থেকে গড়িয়াহাট। দূরত্বটা বুদ্ধবাবুর মিছিলের তুলনায় বেশিই। ফলে মিছিল শেষ হতে দু’ঘন্টারও বেশি সময় লেগেছে। ৮বি বাসস্ট্যান্ডে মিছিল শেষ করলে ‘হুলুস্থূল পরিস্থিতি’ হয়ে যেত বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এত লোক ছিল যে ওখানে মিছিল শেষ করলে লোকের পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল।” প্রচুর ব্যানার-পতাকা-পোস্টার। আকাশে তৃণমূলের ঝান্ডাবাহী বেলুন। সঙ্গে স্লোগান, ‘আয় বুদ্ধ দেখে যা, মমতার ক্ষমতা’ এই হল মিছিলের রং।
লোক আনার অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর দাবি, দু’লাখেরও বেশি মানুষ মিছিলে যোগ দিয়েছেন। সংখ্যা বিচার নিয়ে ‘বিতর্ক’ থাকতে পারে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, মিছিলের মাথা যখন গাঙ্গুলিবাগানের মোড় পেরিয়ে বাঘাযতীনের মুখে, তখন লেজ গড়িয়ার ৪৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে। থিক থিক করছে মানুষের ভিড়। মিছিলের বহর দেখে ‘সন্তুষ্ট’ মুকুলবাবু বলেন, “মমতা’দির উন্নয়নের কর্মসূচি সন্ত্রাস ও চক্রান্ত করে দেওয়ার চেষ্টা বাংলার মানুষ যে বরদাস্ত করবেন না, এ দিনের মিছিলই তার প্রমাণ।”
গড়িয়াহাটে মমতার জিপ পৌঁছোয় সাড়ে ৭টা নাগাদ। উত্তরবঙ্গ থেকে ফিরেই তৃণমূল ভবনে একবার থেমে সোজা মিছিলে এসেছিলেন মমতা। গড়িয়াহাট থেকে তিনি কালীঘাটে রওনা হন। মিছিলের শেষ তখন ঢাকুরিয়ায়।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.