আরও ৪০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘সিল’ করে দেওয়া হল কিংফিশার বিমান সংস্থার । ওই অ্যাকাউন্টগুলি থেকে এখন আর লেনদেন করা যাবে না। ফলে আর্থিক দিক থেকে ধুঁকতে থাকা এই বিমান সংস্থার সামনে আর এক নতুন বিপদ উপস্থিত। এর আগেও কিংফিশারের কিছু অ্যাকাউন্ট ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছিল। গত তিন মাস ধরে সংস্থার কর্মী-বিমানসেবিকা-পাইলট-অফিসার, কেউ বেতনও পাননি। অনেকেই সংস্থা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। আগামী দিনে কিংফিশারের উড়ান বন্ধ হয়ে যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি দিল্লি-মুম্বই থেকে আচমকা উড়ান পরিষেবা কমিয়ে দিয়েছিল এই বিমান সংস্থাটি। কলকাতা থেকে তো বন্ধই হয়ে গিয়েছিল পরিষেবা। কিন্তু দিন তিনেকের মাথায় আবার নতুন করে শুরু হয় বিমান পরিষেবা। এখন কলকাতা থেকে কিংফিশারের মাত্র পাঁচটি উড়ান নিয়মিত যাতায়াত করছে। এক সময়ে যে সংখ্যাটা ছিল কুড়িরও বেশি। ফলে ধীরে ধীরে কিংফিশার তাদের পরিষেবা গুটিয়ে আনছে কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। যদিও সংস্থা সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে কর্ণধার বিজয় মাল্য ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করে ফেলবো।” কিংফিশারের অফিসারদের তিনি আরও বলেছেন, “চিন্তা কোরো না। কিছু না কিছু সমাধান বার করেই ফেলবো।” কিন্তু কী সেই সমাধান, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন মাল্য ঘনিষ্ঠ বিমান সংস্থার কর্তারা। গত কয়েক মাস ধরেই রাত দিন ধরে কাজ করছেন মাল্য। মুম্বই থেকে নিয়মিত দিল্লি যাতায়াতও করছেন। ইতিমধ্যেই তাঁর পানীয় সংস্থা ‘ইউবি গ্রুপ’ থেকে অনেক টাকা ঢেলেওছেন বিমান সংস্থায়। তবে বিমান সংস্থার দুঃসময়ের জন্য পানীয় সংস্থার শেয়ারের দরও পড়তে শুরু করেছে বলে খবর। |
এ দিকে স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলি কিংফিশারকে জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে তারা আর ঋণ দেবে না। বিদেশি কয়েকটি বিমান সংস্থার সঙ্গে বিজয় মাল্য কথা বলা শুরু করেছেন। বিদেশি বিমান সংস্থা ভারতে বিনিয়োগ করতে পারবে, কেন্দ্র সরকার এমন ঈঙ্গিত দিলেও এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি কোনও বিমান সংস্থা এখনই সরাসরি ভারতীয় কোনও বিমান সংস্থায় টাকা ঢালতে পারবে না।
তা হলে উপায় কী? সে কথা অবশ্য পরিষ্কার করে বলতে চাননি কিংফিশার-কর্তা।
শনিবার দিল্লিতে পরিষেবা কর বিভাগের কমিশনার এস কে সোলাঙ্কি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার মিলিয়ে কিংফিশারের মোট ৪০টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিংফিশারের কাছে পরিষেবা কর বিভাগের প্রায় ৪০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এর আগেও পরিষেবা কর বিভাগের পক্ষ থেকে সংস্থার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গত মাসে আয়কর দফতরও বিমান সংস্থার অ্যাকাউন্ট ‘সিল’ করে দিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, প্রথমে ঠিক হয়েছিল পরিষেবা কর বিভাগকে মার্চ মাসের মধ্যে বকেয়া ৭০ কোটি টাকা মিটিয়ে দেবে কিংফিশার। তারই একটি কিস্তি হিসেবে ২০ কোটি টাকা মেটানোর কথা ছিল ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। কিন্তু সেই টাকা দিতে না পারায় অ্যাকাউন্টগুলি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। বাজারে এখন প্রায় সাত হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ রয়েছে কিংফিশারের।
২০১০-১১ আর্থিক বছরে সংস্থার এক হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে। ইতিমধ্যেই কমিয়ে ফেলা হয়েছে উড়ান সংখ্যা। এই অবস্থায় শিল্প মহলে ‘লড়াকু’ বলে পরিচিত বিজয় মাল্য কী ভাবে ঘুরে দাঁড়ান, তার দিকেই চেয়ে রয়েছেন সংস্থার কর্মী-অফিসারেরা। |