বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। প্যাথলজিস্ট এবং ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্ট নেই। অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অ্যানাস্থেটিস্টের। স্থায়ী সুপার নেই। এই ভাবেই চলছে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল।
গত জানুয়ারি মাসের গোড়ায় বদলি করে দেওয়া হয় এই হাসপাতালে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে। ফলে এই বিভাগের চিকিৎসা করাতে এসে রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। এক সময়ে এখানে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। এক দিকে তিনি যেমন বর্হিবিভাগে বসতেন, অন্তর্বিভাগেও নাক-কান-গলা সংক্রান্ত গুরুতর অসুস্থদের ভর্তি করানো হত। কিন্তু জানুয়ারি মাসে একমাত্র নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে বদলি করে দেওয়ার ফলে রোগীরা সমস্যায় পড়েন। বিশেষ করে প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়। কারণ, এই বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া কেউ প্রতিবন্ধী-সংক্রান্ত শংসাপত্র দিতে পারেন না।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে এই হাসপাতালের আংশিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন শুধুমাত্র বর্হিবিভাগে বসেন।
উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে রয়েছে যক্ষা বিভাগ। এই বিভাগে প্রয়োজন স্থায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (চেস্ট স্পেশালিস্ট)-এর। দু’বছর হল এই পদে কোনও স্থায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। সাধারণ চিকিৎসকেরা এই বিভাগের দায়িত্ব সামলান। নিয়ম হল কোনও রোগীর কাশি হলে থুথু পরীক্ষার করার কথা বলেন যক্ষা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। পরে যক্ষার আনুষঙ্গিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন তিনি। যক্ষা রোগীদের বক্তব্য, বর্হিবিভাগে একেক দিন একেক জন চিকিৎসক বসেন। এক জন চিকিৎসক থুথু পরীক্ষার কথা বললে সেটি পরীক্ষা করিয়ে ফের তাঁকেই দেখাতে হয়। কিন্তু ওই চিকিৎসক যেহেতু প্রতিদিন বসেন না তাই পরবর্তী সময়ে তিনি যখন ফের বর্হিবিভাগে ফের বসেন তাঁর কাছে থুথু পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে এলে বেশ দেরি হয়ে যায়। রোগীরা জানান, যক্ষা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে এই অসুবিধার মুখোমুখি তাঁরা হতেন না। হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে সপ্তাহে এক দিন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসে যক্ষা বিভাগে বসেন। এতে সমস্যা কমে না বলে রোগীরা জানান।
জানুয়ারি মাসে বদলি করে দেওয়া হয়েছে একজন অ্যানাস্থেটিস্টকে। ফলে তিন জনের মধ্যে মাত্র দু’জন অ্যানাস্থেটিস্ট ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক জন ছুটি নিয়ে নেওয়ায় সপ্তাহখানেক আগে এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। পরে আমতা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে একজন অ্যানাস্থেটিস্টকে ডেপুটেশনে এখানে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এই হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের চাপ থাকে। ফলে অন্তত চার জন অ্যানাস্থেটিস্ট-এর প্রয়োজন রয়েছে। ফলে এই বিভাগটিও কার্যত ‘ঠেকা’ দিয়ে চলছে। দীর্ঘদিন ধরে প্যাথলজিস্ট-এর পদটি শূন্য। রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে আনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। ল্যাবরেটরি অ্যাসিস্ট্যান্টকেও বদলি করে দেওয়া হয়েছে।
এই হাসপাতালে নেই স্থায়ী সুপার। বাউড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপারকেই এই হাসপাতালের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় দু’মাস ধরে চলছে এই ব্যবস্থা। ভারপ্রাপ্ত সুপার ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “আমার কোনও অসুবিধা হয় না। বাউড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের কাজ কম। বেশিরভাগ সময় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে থাকি।” উলুবেড়িয়া মহকুমার ৯টি ব্লক ছাড়াও হাওড়া সদরের পাঁচলা এবং সাঁকরাইল থেকেও প্রচুর রোগী এখানে আসেন। মুম্বই রোড এবং হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের রেলপথ কাছেই থাকায় দুর্ঘটনাগ্রস্তেরা প্রথমে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। ফলে এখানকার অব্যবস্থা দূর করার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। ঈশ্বরবাবু অবশ্য বলেন, “এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং কর্মী নিয়ে সমস্যার কথা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে নিয়মিত ভাবে জানানো হয়।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শূন্য পদের সংখ্যা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানে। নিয়োগের ব্যবস্থা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরই করবে। |