বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ময়নাগুড়ি |
একে ধুলোর ঝড়। তার উপরে যানজটে নাকাল দশা হয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ময়নাগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটের নিত্য যাত্রীদের। মাসের পর মাস ওই দুর্দশা চললেও কর্তৃপক্ষের হেলদোল না-দেখে যাত্রী সহ পরিবহণ কর্মী মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বেহাল রাস্তায় দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট রুটিন ঘটনা হয়েছে। অথচ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ‘মহাসড়ক’ তৈরির কথা বলে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। ওই সড়কের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে সেটাও স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন না। যদিও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ পরিবহণ কর্মী ও নিত্য যাত্রীদের ওই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, মহাসড়ক তৈরির ক্ষেত্রে জমির যে জটিলতা ছিল তার অনেকটাই মিটেছে। কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। তবে মহাসড়ক তৈরির আগে জাতীয় সড়কের ভাঙাচোরা এলাকা মেরামত করা হবে। সংস্থার উত্তরবঙ্গের টেকনিক্যাল ম্যানেজার পঙ্কজ মিশ্র বলেন, “জাতীয় সড়কের ময়নাগুড়ি থেকে শিলিগুড়ির মধ্যে কিছু জায়গা খারাপ হয়েছে। ওই রাস্তা মেরামতের জন্য টেণ্ডারের কাজ চলছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে। এ দিকে মহাসড়ক তৈরির কাজের ৫০ শতাংশ প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে।” কিন্তু কর্তৃপক্ষ যাই বলুন না-কেন কাজ শুরু না-হওয়া পর্যন্ত ভরসা করতে পারছেন না নিত্য যাত্রীদের কেউ। উল্টে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সামনে বর্ষা। দ্রুত রাস্তা মেরামত না-হলে সড়ক পথে শিলিগুড়ির সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা এ বারও বিপর্যস্ত হবে। কেন এমন আশঙ্কা! ময়নাগুড়ি থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৬২ কিলোমিটার। ওই রুটে বাসে দেড় ঘন্টার মধ্যে গন্তব্যে পৌছে যাওয়ার কথা। বাস চালকদের কয়েকজন জানান, তিন বছর আগে ওই সময়েরও আগে তাঁরা শিলিগুড়ি থেকে ময়নাগুড়িতে যাতায়াত করেছেন। কিন্তু তার পর থেকে তিন ঘন্টাতেও সম্ভব হচ্ছে না। ফাটাপুকুরের পরে ভাঙাচোরা রাস্তায় ধুলোর ঝড়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা নিয়মে দাঁড়িয়েছে। খাদে পড়ে কোন বাস ট্রাক কখন উল্টে যাবে ঠিক নেই। প্রায়ই মাঝ রাস্তা থেকে ফিরে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। নর্থ বেঙ্গল বাস অ্যাণ্ড ট্রন্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজ আহমেদ বলেন, “প্রাণ হাতে নিয়ে কর্মীরা পরিষেবা দিচ্ছেন। বর্ষায় রাস্তার ওই দশা থাকলে তাঁদের কেউ কাজ করার সাহস পাবে না।” পরিবহণ কর্মীদের অভিযোগ, জাতীয় সড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তায় পিচের চাদর উড়ে গিয়েছে দেড় বছর আগে। গোড়ালি ডোবা ধুলোয় ভরা রাস্তা জুড়ে দেড় থেকে দু’ফুট গভীর ছোটখাটো জলাশয়ের মতো গর্তের ছড়াছড়ি। বাস যেতে ধুলোয় সাদা হচ্ছে চারদিক। রাধা নগরের কাছে ছড়িয়ে থাকা গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে ট্রাক। কে বলবে এটাই ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক! ওই বিপজ্জনক রাস্তা এড়াতে বাসগুলি বাধ্য হয়ে তিস্তা-মহানন্দা ক্যানেলের পাশ দিয়ে গণ্ডার মোড় হয়ে জাতীয় সড়কে উঠছে। কিছুটা এগিয়ে বন্ধুনগরের ভিতর দিয়ে যাতায়াত শুরু করছে। ডুয়ার্স মিনি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গৌরব চক্রবর্তী বলেন, “এ ভাবে কতদিন চলাচল করা সম্ভব হবে জানি না! রাস্তা মেরামতের দাবিতে প্রতি মাসে ডেপুটেশন দিচ্ছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।” |