এলাকায় বেড়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীদের আনাগোনা। পাশাপাশি অসামাজিক কাজও চলছিল সমান তালে। এ সবেরই বিরোধিতা করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। যা পছন্দ হয়নি সামাজবিরোধীদের। তারই জেরে দুষ্কৃতীদের অবাধ বোমাবাজিতে জখম হলেন কয়েকজন বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে হাবরার হাটথুবা অঞ্চলের ঘোষপাড়া এলাকায়। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় বসে দুষ্কৃতীদের বোমা বাঁধার প্রতিবাদ করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরাও ওই কাজের প্রতিবাদ জানায়। তা নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হতেই দুষ্কৃতীরা ফোন করে তাদের আরও কয়েক জন সঙ্গীদের ডেকে নেয়। এরপরেই এলাকায় শুরু হয়ে যায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। শুরু হয়ে যায় বোমাবাজি ও সেইসঙ্গে এলোপাথাড়ি গুলি। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমা ও গুলিতে জখম হন সুনীল দাস ও বাপ্পা কুণ্ডু নামে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের প্রথমে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বোমাবাজি করে চলে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতীরা জখম সুনীল দাসের ছেলে সুজয় দাসকে তুলে নিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে স্থানীয় তালবাগান এলাকার ঝোপের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা তার ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখতে পান। পুলিশ জানিয়েছে, সুজয়ের শরীরে মারধরের চিহ্ন এবং বোমার ক্ষত রয়েছে। সুজয় হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লাগোয়া নদিয়া জেলা থেকে দুষ্কৃতীরা এলাকায় ঢোকে। এ ছাড়া অশোকনগর থেকেও তাদের আনাগোনা রয়েছে। এতদিন এই সব দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন ‘দাদা’র আশ্রয়ে ছিল। এখন তারা বিভিন্ন নেতার আশ্রয় পেয়ে লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে।
দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে ডিআইজি (পি আর) অনিল কুমার, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহবুব আখতার হাবরায় যান। অনিলকুমার বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে।”
হাবরার বিধায়ক ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “যে তিনজন গুলি ও বোমায় জখম হয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থক। সম্প্রতি হাবরা এলাকায় সিপিএম এবং কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বেড়ে গিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।” হাবরা পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের ঋজিনন্দন বিশ্বাস বলেন, “এত দিন হাবরার বাইরে থাকা তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীরা ফের এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। তার জেরেই গোলামাল বাড়ছে। প্রশাসনের উচিত রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে হস্তক্ষেপ করা।” হাবরার কংগ্রেস নেতা নীলিমেশ দাস বলেন, “এত দিন সিপিএমের জার্সি গায়ে দিয়ে যারা অপরাধ করত, তারা এখন তৃণমূলে নাম লিখিয়েছে। অবিলম্বে এই জাতীয় ঘটনা বন্ধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরও বড় গন্ডগোলের আশঙ্কা রয়েছে।” অন্যদিকে, এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে এবং দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে আগামী রবিবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে হাবরা শহরে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। |