হাঁড়ির খবর: অকাল বোধন
অচেনা কেকের উৎসব
ড়দিন তো সেই কবেই চলে গিয়েছে। শীতও সদ্য গেল। তাতে কী? কেক-পেস্ট্রির রমরমার এই বাজারে বাঙালির সারা বছরটাই এখন কেক-ময়। আর তার উপরে যদি তুলনায় কম চেনা কেক আর নানা বিদেশি মিষ্টি পাওয়া যায় নাগালের মধ্যে, তবে তো কথাই নেই!
এই যেমন ক্রকেমবুশ। বাঙালি কানে নামটা খুব একটা চেনা নয়। ফরাসি পেস্ট্রি শেফ আন্তোয়ান কারেম ফ্রান্সে প্রথম যখন ক্রকেমবুশ বানিয়েছিলেন, ‘ওয়েডিং কেক’ হিসেবেই সেটা বেশ নাম কিনেছিল। অনেকগুলো ক্রিম পাফকে টফি দিয়ে পিরামিডের মতো সাজিয়ে তৈরি হয় এই ফরাসি সুখাদ্যটি। আর বাইরের চিনির গোল-গোল শক্ত আস্তরণের স্বাদ ঠিক যেন বাঙালি গজার মতো।
শুধু ক্রকেমবুশই নয়। ফরাসি মিষ্টি সুখাদ্যের তালিকায় রয়েছে ম্যাকারুন টাওয়ার, সেন্ট অনর গাতো, অপেরা গাতো, ফ্রেশ ফ্রুট গাতোও। ফরাসি ভাষায় ‘গাতো’ মানে কেক। পারি-তে স্বনামধন্য অপেরা গাতোর মহা-আবির্ভাব হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। এর মধ্যে আমন্ড স্পঞ্জ কেকের সঙ্গে পরতে পরতে মাখামাখি হয় কফি সিরাপ, কফি বাটার-ক্রিম আর চকোলেট সস। একই সঙ্গে দৃষ্টি আর রসনার সুখ। চকোলেটের পরতে পরতে মিশে আছে নিয়ম ভাঙার হাতছানি। এক দিনের জন্য শুধু ডায়েটটা ভুলে এক চামচ মুখে তুললেই জিভে মিশে যাবে আমন্ড আর চকোলেট। ফ্রুট গাতো অবশ্য স্বাস্থ্যসম্মত। কারণ এতে স্পঞ্জ কেকের উপরে সাজানো বেদানা, ন্যাসপাতি এবং আরও হরেক কিসিমের ফল।
ফ্রান্সের এই মিষ্টিসুখগুলো নিয়েই সম্প্রতি ‘কেক-বুফে’র আয়োজন করেছিল শরৎ বসু রোডের ‘দ্য ফ্রেঞ্চ লোফ’। পেস্ট্রি-প্রিয় বাঙালির চোখ এবং মন জুড়োতে মধ্যবিত্ত বাঙালির সাধ্যের খেয়ালও রাখা হয়েছিল সেখানে। মেনু-লিস্টে ছিল চেনা-অচেনা আরও নানা নাম। যেমন লাল টুকটুকে রেড ভেলভেট কেক, ছোট ছোট গ্লাসে ভ্যানিলা আর চকোলেট ক্রিমে টইটম্বুর ব্লু বেরি পাই শুটার, অ্যাপল পাই শুটার, লেবুর স্বাদের লেমন মেরিঙ্গ শুটার, মিনি এক্লেয়ার্স, প্রফিতেরোল, আইরিশ ফ্যান্টাসি আর টার্ট তাত্যাঁ।
‘টার্ট তাত্যাঁ’-র হঠাৎ জন্ম নিয়েও চালু আছে এক মজার গল্প। ১৮৮০ সালে স্তেফানি আর ক্যারোলিন তাত্যাঁ নামে দুই বোন একটা রেস্তোরাঁ চালাতেন। স্তেফানি এক দিন অ্যাপল পাই বানাতে গিয়ে পুড়িয়ে ফেললেন। কী উপায়? চট করে অ্যাপল পাইকে কেক-ওভেনে ঢুকিয়ে, পরে পুরো জিনিসটা উল্টে দিয়ে অতিথিদের পরিবেশন করা হল। বলাই বাহুল্য, এই নতুন রকমের মিষ্টিও সে দিন খুবই মনে ধরেছিল সকলের। আর সে দিন থেকেই শুরু হল ‘টার্ট তাত্যাঁ’ তৈরি।
তবে ‘কেক-বুফে’র এখানেই শেষ নয়। ওরিও কুকিজ চিজ কেক, ব্লু বেরি চিজ কেক, স্ট্রবেরি চিজ কেক অথবা পেস্ট্রি-ক্রিম আর চকোলেট স্ট্রিপ দেওয়া মিল ফোই একটার পর একটা নাম শুনলেই বিস্ময় শুধু বাড়বে। সঙ্গে চকো ম্যুস, লিচি ম্যুস, ম্যাঙ্গো ম্যুস, রস্পবেরি ম্যুস, ক্যারট কেক, গুই ব্রাউনিজ, গ্র্যঁ ম্যের আর চকোলেট ফাজ।
সব মিলিয়ে কলকাতায় বসেই যেন মুঠোর নাগালে একটা গোটা ফরাসি বেকারি। নেপথ্যে মৃদু ফরাসি গানের সুর আর স্পঞ্জ কেকের সুগন্ধ মুডটাকে আগেই তৈরি করে দেবে। তার পরে চোখের সামনে থরে থরে সাজানো পরম উপভোগ্য সুখাদ্যের ভিড় দেখলে রসনার আবদারকে শাসন করাটা সত্যিই মুশকিল হয়ে পড়বে।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.