দুই বাহিনীর বিরোধে ‘শৃঙ্খলা’ নিয়েই প্রশ্ন
সালুয়ায় রাজ্য পুলিশের দুই বাহিনীইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল (ইএফআর) এবং কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্সের (সিআইএফ) দফায় দফায় বিরোধ-সংঘর্ষে উদ্বেগ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তৈরি হয়েছে অজানা আশঙ্কা, একাধিক প্রশ্নও। গত এক সপ্তাহ ধরেই দুই আরক্ষাবাহিনীর বিবাদ-বিসংবাদ চলছে। বৃহস্পতিবার সেটাই ব্যারাকে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জেলা পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের চেহারা নেয়। যার জেরে আপাতত ছুটিতে পাঠানো হয়েছে সিআইএফ জওয়ানদের। সিআইএফ ব্যারাকও সরিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে বলে খবর।
কিন্তু দু’টি প্রশিক্ষিত, শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী এ ভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে কেন? যাদের হাতে সাধারণের নিরাপত্তার ভার, তাদের একাংশের বিরুদ্ধেই কেন বারে বারে উঠবে মহিলাদের সম্ভ্রমহানির চেষ্টার অভিযোগ? আইনরক্ষক বাহিনীর লোকজন বা তাদের পরিজনেরা কেন নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেবেন? কেন জেলা পুলিশকে আক্রমণ করবেন, আগুন ধরিয়ে দেবেন পুলিশের গাড়িতে? এই যদি আরক্ষাবাহিনীর একাংশেরই মেজাজ-মর্জি হয়, তা হলে সাধারণ বিক্ষোভে শহর-গ্রাম রণক্ষেত্র হলে কী ভাবে তা নিয়ন্ত্রণের বা ‘কর্তব্যপালনে’র নৈতিক অধিকার পাবে সেই বাহিনী?
দুই চিত্র
ইএফআর সদর দফতরের কাছে স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
অদূরে সুনসান সিআইএফ ব্যারাক। শুক্রবার সালুয়ায় সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
জনসাধারণের ট্যাক্সের টাকায় যাদের প্রশিক্ষণ, বেতন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাতারা কী ‘শৃঙ্খলা’রই বা পরিচয় দিচ্ছে? তাদের প্রশিক্ষণে সাধারণ সহবতের শিক্ষা কি ঠাঁই পাচ্ছে না? সর্বোপরি, একটি আরক্ষাবাহিনীর জওয়ান ও তাদের পরিজনেরাই যদি কাছাকাছি এলাকায় অন্য একটি বাহিনীর জওয়ানদের ‘আচরণ’ মেনে নিতে না পারে, তা হলে এহেন বাহিনীর ব্যারাক বা শিবিরের জন্য অন্য কোনও এলাকা নির্দিষ্ট হলে, সেখানকার আম-আদমিই বা কী ভাবে মেনে নেবেন তাদের? আরক্ষাবাহিনী কী উদাহরণ তৈরি করছে সাধারণের কাছে!
বিব্রত পুলিশকর্তারাও। তবে, প্রকাশ্যে বিষয়টিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই এড়াতে চাইছেন পুলিশকর্তারা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, “সালুয়ার ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগের কিছু নেই। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তবে, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।”
খড়্গপুরের সালুয়ায় রয়েছে ইএফআরের তিনটি ব্যাটলিয়নের সদর দফতর। আশপাশে বেশ কয়েকটি বসতিও রয়েছে ইএফআর জওয়ানদের পরিজনেদের। অনেক ইএফআর জওয়ান চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরেও পাকাপাকি ভাবে এখানে বসবাস শুরু করেছেন। অন্য দিকে, বছর দেড়েক আগে এখানে সিআইএফের দু’টি ব্যারাক তৈরি হয়। যেখানে প্রায় দেড়শো জওয়ান থাকতেন। দুই বাহিনীই রাজ্য পুলিশের। আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাই তাদের কাজ। কিন্তু গত কয়েক দিনে এই দুই বাহিনী একে অন্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছে। কিন্তু কেন ‘বিরোধ’ প্রকাশ্যে এল? এ ক্ষেত্রেও একে অন্যকেই দুষছে দু’পক্ষ। ইএফআর পরিবারের দাবি, সিআইএফ জওয়ানরা ‘উৎশৃঙ্খল’ আচরণ করছিলেন। রাস্তায় বেরোলেই মহিলাদের কটূক্তি করা হচ্ছিল। গত শুক্রবার রাতে স্থানীয় মেলার মাঠে এহেন কটূক্তির জেরেই প্রথম দফার গোলমাল। তার আগেও অবশ্য এমন অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে, সিআইএফের দাবি, সব অভিযোগই মিথ্যে। বরং ইএফআর পরিবারের লোকজনই তাদের উপর নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছেন।
বৃহস্পতিবারের হামলায় ব্যারাকের নষ্ট সামগ্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মেদিনীপুরে। নিজস্ব চিত্র।
তবে দুই বাহিনীর ‘বিরোধ’ যে এ ভাবে প্রকাশ্যে আসা অনভিপ্রেত, তা মানছেন সালুয়ার বাসিন্দারা। স্থানীয় রোশন ঘিসিং বলেন, “দুই বাহিনীই জঙ্গলমহল এলাকায় থেকে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়াই বাহিনীর কাজ। সেখানে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত।” তাঁর কথায়, “সিআইএফের মধ্যে কয়েক জন রয়েছেন, যাঁরা সুশৃঙ্খল নন। তাঁদের জন্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি হল।” ইএফআর পরিবারের লোকজন সালুয়া থেকে সিআইএফ ব্যারাক সরানোর চেষ্টা করেছেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও উড়িয়ে দিয়েছেন রোশন। তাঁর কথায়, “কোন বাহিনী কোথায় থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। সিআইএফ যদি ভাল ভাবে থাকতে পারে, তা হলে স্থানীয় কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।” সালুয়ার আরেক বাসিন্দা অনুপ গুরুঙ্গ বলেন, “সিআইএফের সঙ্গে ইএফআরের কোনও ঝগড়া নেই। তবে স্থানীয় মহিলাদের উদ্দেশে কেউ যদি কুরুচিকর মন্তব্য করে, তা মুখ বুজে সহ্য করা সম্ভব নয়। আমরা ন্যায়বিচার চাইবই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.