|
|
|
|
অটো নিয়ন্ত্রণে যৌথ অভিযান |
দিনের বেলায় লরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মেদিনীপুর শহরে দিনের বেলা লরি ঢোকার ক্ষেত্রে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হল। সিদ্ধান্ত হল, রবিবার বাদে সপ্তাহের বাকি ছ’দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরের মধ্যে লরি ঢুকবে না। পথ-দুর্ঘটনা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থার ‘হাল’ ফেরাতে শুক্রবার মেদিনীপুরে এক বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক সুরজিৎ রায়, বিধায়ক মৃগেন মাইতি, পুরপ্রধান প্রণব বসু, কোতোয়ালি থানার আইসি জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকারি কাজে ব্যবহৃত লরি বাদে আর কোনও লরিই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরে ঢুকবে না। পুলিশ নজরদারি চালাবে। শহরে যে দু’টি ট্রাফিক সিগন্যাল দীর্ঘ দিন ‘অচল’ হয়ে পড়ে রয়েছে, সেগুলিও ফের ‘সচল’ করা হবে। বৈঠক শেষে মহকুমাশাসক বলেন, “শহরের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতেই লরি ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল। পুলিশকে এ জন্য নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।” কিন্তু, এমন সিদ্ধান্ত এই প্রথম নয়, আগেও হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন, এ বার এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে তো? মহকুমাশাসক বলেন, “বৈঠকে উপস্থিত সকলেই একমত হয়েছেন। এ বার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।”
মেদিনীপুর শহরে যানজট সমস্যা লেগেই থাকে। শহরের কেরানিতলা, সিপাইবাজার, স্কুলবাজার, এলআইসি মোড়ে প্রায়ই যানজট হয়। ব্যস্ত সময়ে একের পর এক গাড়ি সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফলে সমস্যায় পড়েন পথচলতি সাধারণ মানুষ। শহরবাসীর বক্তব্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রে লরি ঢোকার ফলেই যানজট সৃষ্টি হয়। শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তা এমনিতেই সংকীণর্র্। যেমন, ধর্মা থেকে কর্নেলগোলা হয়ে গোলকুঁয়াচক, বটতলা থেকে স্কুলবাজার হয়ে জগন্নাথমন্দিরচক প্রভৃতি। এই সব রাস্তায় একটি লরি কোনও ভাবে আটকে গেলেই আর কোনও গাড়ি যাতায়াত করতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয়দেরই পথে নামতে হয়। তা ছাড়া এ শহরে নতুন নতুন বসতিও গড়ে উঠছে। স্বাভাবিক ভাবেই শহরে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তায় ছোট-বড় গাড়ির সংখ্যা আগের থেকে বেড়েছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা ভেবেই শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০৭ সালে কেরানিতলায় ট্রাফিক সিগন্যাল পরিষেবা চালু হয়। পরে ২০০৯ সালে এলআইসি মোড়েও সিগন্যাল বসে। কিন্তু দু’টি সিগন্যালই দীর্ঘদিন ‘সচল’ নেই। অভিযোগ, পুরসভার উদাসীনতার ফলেই এই অবস্থা। শুক্রবারের বৈঠকে অবশ্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই দু’টি সিগন্যালই চালু করা হবে। আগামী সপ্তাহেই তা চালু হবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বৈঠকে উপস্থিত সকলেই শহরের যানজট পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে ‘কড়া’ পদক্ষেপই প্রয়োজন। পথচলতি মানুষকেও সচেতন করতে হবে। এ জন্য রাস্তার ধারে হোর্ডিং লাগানো হবে। এক সময় শহরে একমুখী যান চলাচল ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে এখনই তা হচ্ছে না। সিপাইবাজার এলাকায় যানজট সমস্যা এড়াতে অবশ্য নতুন একটি স্টপেজ করা হচ্ছে। এত দিন কেরানিচটি দিয়ে শহরের মধ্যে যে সব বাস ঢুকত, সেগুলি সিপাইবাজার মোড়ে দাঁড়াত। আবার যে সব বাস শহর ছেড়ে বেরোত, সেগুলিও এখানে দাঁড়াত। কিন্তু আর তা হবে না। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সিপাইবাজার মোড়ের অদূরে স্পোর্টস ডেভলপমেন্ট অ্যাকাডেমির কাছে নতুন একটি স্টপেজ হবে। মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ এখানে শেড তৈরি করবে। মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “শহরের মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে।” পাশাপাশি, অটো চলাচল নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। একাংশ অটো বেপোরোয়া ভাবে চলে। গতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না। আবার একাংশ অটো বাড়তি যাত্রী বহন করে। পরিস্থিতি পাল্টাতে পুলিশ ও পরিবহন দফতর এ বার যৌথ অভিযান চালাবে বলে সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। কিন্ত তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ রয়েছে। এ বার তেমন হবে না তো বলেই মহকুমাশাসকের আশ্বাস। তিনি বলেন, “যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা কতটা কার্যকর করা হল তা খতিয়ে দেখতে ফের ১৩ মার্চ বৈঠক হবে।” |
|
|
|
|
|