সবুজ বাঁচাতে রাস্তায় কিশোর-বাহিনী
ময় পেলেই দলবেঁধে বেরিয়ে পড়ছে ছেলেগুলো। সঙ্গে অনভ্যস্ত হাতে লেখা গোটা কয়েক ফেস্টুন, মই, ভাড়া নেওয়া ভ্যানরিক্সা আর পেরেক তোলার জন্য লোহার তৈরি একটি বাঁকানো রড। ভ্যানরিক্সার সামনে একটি আর্ট পেপারের উপর সবুজ কালিতে লেখা ‘সবুজ বাঁচাও, সবুজে সাজাও’। জনা পনেরোর ওই কিশোর বাহিনীকে ভরদুপুরে এভাবে নিঃশব্দে হাঁটতে দেখে আশপাশের বাড়ি কিংবা দোকান থেকে উঁকি দিচ্ছে অনেক কৌতুহলী চোখ। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই কারও। ওদের নজর রয়েছে রাস্তার দু’ধারের গাছগুলোর দিকে। সেই গাছে কোনও হোর্ডিং বা পোস্টার মারা দেখলেই থেমে যাচ্ছে দলটা। তারপর তরতর করে মই বেয়ে গাছে উঠে পেরেক উপড়ে পোস্টার খুলে ভ্যানে রেখে দলটা আবার এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।
এরা হলেন মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙা, আরবপুর গ্রামের জনা পনেরো কিশোর। সকলেই স্কুল কিংবা কলেজে ছাত্র। জয়ন্ত ঘোষ, ষষ্ঠী প্রামাণিক, সুব্রত মিস্ত্রি, নারায়ণ বিশ্বাস, গৌতম বিশ্বাস, প্রসেনজিৎ প্রামাণিক, শৌভিক বিশ্বাস ও অভিজিত মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘আমরা সকলেই দেখেছি মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় বেশ ঘটা করে বৃক্ষরোপণ উৎসব পালিত হয়।
গাছ বাঁচাও অভিযান। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
কিন্তু পরে সেই গাছগুলোর কথা আর কেউ মনে রাখে না। গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে লাগানো হয় নানা বিজ্ঞাপণ। পেরেক, হোর্ডিং, ফেস্টুনের ভিড়ে গাছকে গাছ বলে চেনাই দায় হয়ে পড়ে। গাছ যেন নিখরচায় বিজ্ঞাপণ দেওয়ার আদর্শ জায়গা হয়ে ওঠে। তাই আমরা সবাই মিলে ঠিক করি যেভাবেই হোক গাছকে এই যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচাব। সেইমত আমরা গত কয়েকদিন ধরে আমরা গাছে গাছে উঠে পেরেক তুলে ফেস্টুন কিংবা হোর্ডিং খুলে দিচ্ছি।’’ তাদের কথায়, ‘‘আমরা সীমান্ত এলাকার ছেলে। বেশ কয়েকবছর আগেও দেখেছি এই এলাকায় নদীর ধারে শীতকালে প্রচুর পরিমাণে পরিযায়ী পাখি আসত। এখন সেই সংখ্যাটা অনেক কমে গিয়েছে। সভ্য মানুষের ক্রমাগত অত্যাচারেরই এরকম ঘটছে। আমরা কয়েকজন মিলে ঠিক করি এর একটা ব্যবস্থা করব। তারপরে ত্রিশ টাকা দিয়ে একটা ভ্যান ভাড়া নিয়ে, গাছ থেকে পেরেক তুলে ফেস্টুন ও হোর্ডিংগুলো খোলার কাজ শুরু করেছি। এই হোর্ডিং ও ফেস্টুনগুলো খুলে বিডিও অফিসে জমা দিয়ে আসছি। গাছগুলোকে যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দিতে পেরে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।’’
করিমপুর ১ ব্লকের বিডিও সুমন্ত রায় বলেন, ‘‘ওই ছেলেগুলো আমাকেও বিষয়টি জানিয়েছে। ওদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। ব্লকের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে ওদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে।’’ তেহট্টের ফরেস্ট রেঞ্জার অমলেন্দু রায় বলেন, ‘‘গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে এভাবে পোস্টার কিংবা হোর্ডিং লাগানো রীতিমত অপরাধ। আমরা একাধিকবার এই বিষয়ে প্রচারও করেছি। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের ওই ছেলেরা স্বেচ্ছায় গাছগুলোকে বাঁচাতে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়।’’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.