|
|
|
|
ব্যাঙ্ককর্মীদের ‘খারাপ’ ব্যবহার, অসুস্থ হয়ে মৃত্যু |
নিজস্ব সংবাদদাতা • লিলুয়া |
ব্যাঙ্কের মধ্যেই মৃত্যু হল ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধের। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ব্যাঙ্ককর্মীদের ‘দুর্ব্যবহার’ ও ‘অমানবিক’ আচরণের জেরেই অসুস্থ হয়ে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। কারণ, প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকা সত্ত্বেও গ্রাহক-পরিচিতি সংক্রান্ত নিয়ম পালনের নামে ওই বৃদ্ধকে নিয়ে বহুক্ষণ ধরে টানাপোড়েন চলে। তার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। শুক্রবার, লিলুয়ার কাছে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ডন বস্কো শাখায় এই ঘটনার পরে বালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের পরিজনেরা। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ এবং মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বেলুড়ের অভয় গুহ রোডের বাসিন্দা প্রীতম সিংহ পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ওই শাখায় গিয়েছিলেন টাকা তুলতে। ওই ব্যাঙ্কে ওই বৃদ্ধ এবং তাঁর স্ত্রী হরদেব কৌরের দীর্ঘ চল্লিশ বছরের জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে। টাকা তোলার সময়ে প্রীতমবাবুকে ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়, নতুন নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহক-পরিচিতির (নো ইওর কাস্টমার) একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। কারণ, ব্যাঙ্কের কাছে গ্রাহকদের সম্পর্কে যে তথ্য ও ছবি থাকার কথা, ওই দম্পতির ক্ষেত্রে তা ছিল না। পুলিশ জানায়, টাকা তোলার পরে প্রীতমবাবু ওই ফর্ম নিয়ে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে নিজের বাড়িতে যান। ওই ফর্মে নিজের ও স্ত্রীর ছবি আটকে, তাতে স্বাক্ষর করে ফের ব্যাঙ্কে যান। |
|
লিলুয়ার সেই ব্যাঙ্কের সামনে পুলিশকর্মীদের টহল। নিজস্ব চিত্র। |
প্রীতমবাবুর ছেলে গুরদর্শন সিংহের অভিযোগ, ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ দীর্ঘক্ষণ ওই বৃদ্ধকে বসিয়ে রাখার পরে জানান, ফর্মে প্রীতমবাবুর স্ত্রীর স্বাক্ষর মিলছে না, নতুন করে সই করিয়ে আনতে হবে। বৃদ্ধ ফের বাড়ি ফিরে যান। স্ত্রীকে দিয়ে নতুন করে স্বাক্ষর করিয়ে তিনি আবার ব্যাঙ্কে ফিরে আসেন। কিন্তু এর পরেও তাঁকে ফের স্বাক্ষর মিলছে না বলে ফিরিয়ে দেন ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ। এর কিছুক্ষণ পরে পুনরায় বাড়ি থেকে ব্যাঙ্কে ফিরে আসেন প্রীতমবাবু। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, শেষ বার ব্যাঙ্কে ফিরে আসার পরেই এক ব্যাঙ্ককর্মীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় ওই বৃদ্ধের। তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পরে চেয়ারে বসেই এক দিকে হেলে পড়েন প্রীতমবাবু।
প্রীতমবাবুর পরিবার জানায়, তাদের এক প্রতিবেশী বলজিৎ সিংহও সেই সময়ে ওই ব্যাঙ্কে ছিলেন। তিনিই বাড়ি ফিরে গিয়ে জানান, ব্যাঙ্কে প্রীতমবাবুর সঙ্গে এক ব্যাঙ্ককর্মীর ঝামেলা হচ্ছে। গুরদর্শন জানান, খবর পেয়েই তিনি ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেন, তাঁর বাবা চেয়ারে হেলান দিয়ে এলিয়ে পড়ে আছেন। সারা শরীর ভিজে। গুরদর্শন বলেন, “বাবার কী হয়েছে, জানতে চাইলে ব্যাঙ্কের লোকেরা আমাকে বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে চলে যান।’ বারবার ডাকাডাকিতেও বাবা সাড়া না-দেওয়ায় ভাবলাম, কিছু একটা হয়েছে। তখনই বাড়ির অন্য লোকেদের খবর দিই। পুলিশকে ডাকি।”
পুলিশ জানায়, প্রীতমবাবুকে জয়সোয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ দিন হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে গুরদর্শন বলেন, “কয়েক বছর আগে বাবার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। হার্টের সমস্যা ছিল। ওই ব্যাঙ্কের লোকেরাও জানতেন সে কথা। তার পরেও তিন-চার বার ওঁকে বাড়ি পাঠানোর কোনও দরকার ছিল কি? বয়স্ক লোকের সঙ্গে এ ভাবে তর্ক করাটাও তো ঠিক হয়নি।” প্রীতমবাবুর পরিবারের অভিযোগ, ব্যাঙ্কের ভিতরে অসুস্থ হয়ে পড়লেও ওই বৃদ্ধকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি। কোনও চিকিৎসক ডাকা হয়নি। গুরদর্শনের দাবি, “যদি চিকিৎসক এসে থাকতেন, তা হলে ব্যাঙ্কে ঢুকে বাবাকে চেয়ারে হেলান দিয়ে পড়ে থাকতে দেখতাম না। নিশ্চয়ই কোথাও শুইয়ে রাখা হত।” যদিও ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের তরফে সিনিয়র ম্যানেজার আশিস সামন্ত বলেন, “ওঁর সঙ্গে কারও কোনও কথা-কাটাকাটি হয়নি। কোনও রকম দুর্ব্যবহারও করা হয়নি। উনি নিজেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তখনই ওঁর এক প্রতিবেশীর মারফত বাড়িতে খবর পাঠিয়েছিলাম। অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে চিকিৎসক ডেকে দেখানোও হয়েছিল।” হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) সুকেশ জৈন বলেন, “ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানতে ব্যাঙ্কের সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।” |
|
|
|
|
|