ভুবন ভ্যালির যন্ত্রণা
চা বাগান নিয়ে তদন্তের নির্দেশ গগৈয়ের
চার মাস বন্ধ থাকার পর খুললেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না কাছাড়ের ভুবন ভ্যালি চা বাগানের। হাজারো সমস্যা এখানে। অনাহার-রোগ-ব্যাধিতে জর্জরিত বাগানের শ্রমিকেরা। ভাঙাচোরা ঘরদোর। কাছেপিঠে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। কার্যত মনুষ্যেতর জীবন কাটাচ্ছেন চা বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলি। এ দিকে ৯ জনের অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগ গোড়ায় রাজ্য সরকার উড়িয়ে দিলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলির চাপে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়িয়েছে। খাদ্যের অধিকার সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্ট কমিশনার মামলাটি বিচারের জন্য গ্রহণ করায় বিব্রত মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ কাল এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই সঙ্গেই অন্যতম মন্ত্রী অজিত সিংহকে তিনি বলেছেন, বাগান পরিদর্শন করে চার দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফের খুলেছে ভুবন ভ্যালি চা বাগান। দিদারখুশ, মতিনগর ও চেংজুরতিনটি ডিভিশন এর অধীনে। স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৪৭৫। সমসংখ্যক অস্থায়ী শ্রমিক। চার মাস বাগান বন্ধ থাকায় অনেক পরিবারে বহুদিন উনুন জ্বলেনি। শ্রমিকদের অভিযোগ, সে সময় ৯ জন অনাহারে মারা গিয়েছেন। বাগান খুললেও এখনও ঘরে ঘরে রোগ। বাগান কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত চিকিৎসক অভিজিৎ সিংহ অসহায় কণ্ঠে বলেন, “রক্তশূন্যতায় ভুগছেন বেশির ভাগ লোকই। ওষুধ দেওয়া হলে কী হবে, উপযুক্ত পথ্য পায় কোথায়?’’
শ্রমিকদের জীর্ণ বাসস্থান। ছবি: রশিদ আহমেদ লস্কর
শ্রমিকদের অবশ্য অভিযোগ, বাগান খোলা থাকার সময়ও চিকিৎসকের দেখা মিলত না। মিললেও সাদা কাগজে ওষুধের নাম লিখেই তিনি দায়িত্ব সারতেন। বাজার থেকে ওষুধ কেনার ক্ষমতা নেই বলেই রোগে ধুঁকছেন সাদেশ্বরী রী, বলরাম বাউরি, সুদর্শন বাউরিরা। ১৬ বছরের বাবলি হাজমকে দেখে মনে হয় জীবন্ত কঙ্কাল।
অথচ এখানে আছে পাঁচ শয্যার হাসপাতাল। চার বছর আগে সরকারের সঙ্গে বাগান কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়, এখানে এমবিবিএস ডাক্তার, ল্যাবরেটরি টেকনিসিয়ান, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স চালকের নিযুক্তি দেবে বাগান। সরকার জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযান তহবিল থেকে বাগান কর্তৃপক্ষের হাতে তাদের বেতন তুলে দেবেন। সেই সঙ্গে বাগান দেবে হাসপাতাল ভবন এবং সরকার জোগাবে ওষুধ। অল্টারনেটিভ মেডিসিনের চিকিৎসক অভিজিৎবাবু নির্ধারিত পদে নিযুক্ত নন। নিযুক্তি দেওয়া হয়নি নার্সকেও। ফলে হাসপাতালটিকে সাজিয়ে তোলা হলেও পাঁচ শয্যা ফাঁকাই পড়ে থাকে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির লাগাতার আন্দোলনে হালে অবশ্য হাসপাতালের ভোল বদলানোর প্রয়াস শুরু হয়েছে। গিয়ে দেখা গেল, সামনে ঝুলেছে নতুন সাইন বোর্ড, শয্যায় পাতা হচ্ছে পরিষ্কার চাদর। টেবিলে দেখা গেল কিছু ওষুধপত্রও। অভিজিৎবাবু জানান, এখনও এমবিবিএস ও নার্স নিয়োগ হয়নি। তা হয়ে গেলে এটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হয়ে উঠবে। বিদ্যুৎ ছিল না। তা-ও ক’দিন হল এসেছে।
বাগানের সহকারী ম্যানেজার ফুলন আহমদ বড়ভুইয়াঁ জানান, এসকেজি কনসলিডেটেড লিমিটেড এবং বেঙ্কটেশ্বর বাণিজ্য ইন্ডিয়া লিমিটেডের অংশীদারিত্বে চলছে এই ভুবনভ্যালি টি এস্টেট। এত দিন কোনও ম্যানেজার ছিলেন না এখানে। কলকাতা অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ক’দিন আগে ম্যানেজার পদে একজনকে নিয়োগ করা হয়েছে। হোলির পরই তিনি কাজে যোগ দেবেন। তখন সব সমস্যা মিটে যাবে বলেই বড়ভুইয়াঁর দাবি। মজুরি বৃদ্ধির দাবিও নতুন ম্যানেজার এলে চূড়ান্ত হবে বলে তিনি জানান।
আট বছর ধরে লোকসানে চলা কাছাড়ের এই চা বাগান সঙ্কট কাটিয়ে উঠবে এই আশাতেই এখন চেয়ে আছেন শ্রমিকেরা। সেই আশা কতটা পূর্ণ হয় এখন তারই অপেক্ষা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.