সংঘর্ষে ‘ব্যবহৃত’ সার্ভিস পিস্তল উদ্ধারকে ঘিরে রাজারহাট-কাণ্ড নতুন মোড় নিল। ঘটনার তিন দিনের মাথায় রাজারহাটের সেই বাবলাতলাতেই পুলিশ একটি নর্দমার ভিতর থেকে কালো প্লাস্টিক-বন্দি পিস্তলটি উদ্ধার করে। ওই পিস্তল উদ্ধারকে ঘিরে সিপিএম ও তৃণমূল, উভয়েই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের প্রশ্ন, প্লাস্টিকের প্যাকেটটি যদি তিন দিন ধরে নর্দমাতেই পড়ে থাকে, তবে তা কারও নজরে পড়েনি কেন? পুলিশ অবশ্য এর ব্যাখ্যা দেয়নি। পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাজারহাট-গোপালপুর পুর-এলাকার বাবলাতলায় স্থানীয় বাসিন্দারা একটি নর্দমায় প্লাস্টিকে মোড়া ভারী কিছু পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ওই প্লাস্টিক খুলে দেখে, তার মধ্যে একটি কার্তুজহীন পিস্তল রয়েছে।
|
রাজারহাটে তৃণমূলের মিছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র |
পরে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার জানান, উদ্ধার হওয়া পিস্তলটিই ২৮ ফেব্রুয়ারি বাবলাতলায় সংঘর্ষের সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের নিরাপত্তারক্ষী স্বপন মৃধার খোয়া যাওয়া সার্ভিস পিস্তল। এ প্রসঙ্গে সব্যসাচীবাবু বলেন, “প্রশাসনের উপরে সম্পূর্ণ আস্থা আছে। কিন্তু কী ভাবে পিস্তলটি ঘটনাস্থলে পাওয়া গেল এবং কারা খবর দিলেন, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”
এ দিকে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেবেরও অভিযোগ, “প্লাস্টিকের প্যাকেটটি যদি তিন দিন ধরে পড়ে থাকে, পুলিশ বা অন্য কেউ তা দেখতে পেল না কেন?” তাঁর আরও অভিযোগ, “লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্লাস্টিকে মোড়া পিস্তলটি উদ্ধার করা হয়। এর ফলে ফরেন্সিক পরীক্ষার উপাদান নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পিস্তল উদ্ধারের সময়ে তার কোনও ভিডিও তোলা হয়নি।” ঘটনাস্থলে গিয়ে কেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা পিস্তলটি উদ্ধার করলেন না, সে প্রশ্নও তোলেন গৌতমবাবু।
বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার অবশ্য সিপিএমের অভিযোগকে আমল দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “খোয়া যাওয়া পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিকে, স্থানীয় বিধায়ক সব্যসাচীবাবুর দাবি, যাঁর পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে, তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তা হলে পিস্তল যে ছিনতাই হয়েছে, সেটা প্রমাণ হল।
সেই পিস্তল। |
সব্যসাচীবাবু বলেন, “এখনও পিস্তলের ম্যাগাজিন এবং বাঁধার দড়ি মেলেনি। কে সেটি প্লাস্টিকে মুড়ে ফেলে গেল, তা খুঁজে বার করুক পুলিশ।” উল্লেখ্য, তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর দলের লোকজন ওই পিস্তল ছিনতাই করেছিলেন। এখন ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকাতেই পিস্তলটি উদ্ধার হওয়ার পিছনে সিপিএমের হাত আছে বলে মনে করছে তৃণমূল।
এ দিকে, এ দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনের নেতৃত্বে ভিআইপি রোডে কেষ্টপুর মোড় থেকে কৈখালি পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল। রবিবার ফের তৃণমূলের মিছিল হবে। আজ, শনিবার রাজারহাটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর নেতৃত্বে মিছিল বেরোবে। গৌতমবাবুর বক্তব্য, “ওই মিছিলের উদ্দেশ্যকে খাটো করতেই পিস্তল উদ্ধারের সাজানো নাটক করা হল। এটা গভীর চক্রান্ত।” |