‘উল্টো পথের’ পাল্টা মিছিলে আজ মমতা
লোক আনতে হবে গোটা কলকাতা থেকে। লোক আনতে হবে দুই ২৪ পরগনা থেকে। লোক আনতে হবে হাওড়া-হুগলি থেকে। এটা আনুষ্ঠানিক নির্দেশ।
বিনা নির্দেশে ‘নিজ দায়িত্বে’ লোক আনবেন দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার নেতারা।
আজ, শনিবার ‘সফল’ করতে হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘যাদবপুর-মিছিল’। ‘হারাতে’ হবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বুধবারের মিছিলকে। ‘মুছে দিতে’ হবে তৃণমূলের বৃহস্পতিবারের মিছিলকেও। প্রমাণ করতে হবে মমতার ‘জন-আকর্ষণী’ ক্ষমতা অটুট। রাজ্যের এক মন্ত্রী যেমন বলেছেন, “জনতা যে মমতার সঙ্গেই আছে, সেটাই দেখিয়ে দেব আমরা!”
শুক্রবার থেকেই নেমে পড়েছেন তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। দেদার ভাড়া করা হচ্ছে বাস-লরি-ম্যাটাডর (নমুনা: শুধু দক্ষিণ কলকাতার ৬০টি ওয়ার্ড থেকে মিছিলে কর্মী-সমর্থক নিয়ে যাওয়ার জন্যই প্রায় ৫০০ ম্যাটাডর ভাড়া করা হয়েছে)। লোক চাই। মিছিলের প্রচার? মন্ত্রী বলছেন, “আমরা শুধু কর্মীদের বলেছি, শনিবার গাঙ্গুলিবাগান থেকে যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মিছিল হবে। মিছিলে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাই যথেষ্ট।”
এ দিনের ‘প্রস্তুতি’ দেখে অবশ্য সে সম্পর্কে বিশেষ সন্দেহের অবকাশ থাকছে না। কৌতূহল থাকছে, তৃণমূল নেতৃত্ব ঠিক কত লোক জড়ো করে শনিবারের সন্ধ্যায় যাদবপুর ‘অচল’ করবেন, তা নিয়ে। কলকাতার সমস্ত ওয়ার্ড থেকে মিছিলে কর্মী নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা-সহ সন্নিহিত এলাকার মন্ত্রীদেরও লোক নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কালিম্পং থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় ফোনে ফোনে মিছিলের প্রস্তুতির তদারক করেছেন। দলের শ্রমিক সংগঠনের কর্মীদের মিছিলে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনকেও।
গত মঙ্গলবার বন্ধের দিন সিপিএমের যাদবপুর জোনাল কমিটির অফিসে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের লোকজন। সেই ঘটনার ছবি তুলতে গেলে বেধড়ক মারা হয় আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক এবং আলোকচিত্রীকে। মাটিতে ফেলে পেটানো হয় স্টার আনন্দের এক সাংবাদিককেও। তার প্রতিবাদেই বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বে মিছিল করেছিল সিপিএম। সঙ্গে বামফ্রন্টের শরিকরা। ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ সেই মিছিল দেখেই পর দিন ‘পাল্টা’ মিছিল ডেকে দেয় তৃণমূল। মমতা-হীন যে মিছিল তেমন ‘সাড়া’ ফেলতে পারেনি। তখনই ঠিক হয়েছিল, পাহাড়-সফর সেরে ফিরে শনিবার দ্বিতীয় মিছিল করবেন মমতা। বৃহস্পতিবারের মিছিল হয়েছিল ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে গাঙ্গুলিবাগান। মমতা হাঁটবেন একেবারে উল্টোপথে গাঙ্গুলিবাগান থেকে ৮বি বাসস্ট্যান্ড।
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, বাস্তবিকই ‘উল্টোপথে’ হাঁটছে দল। এক নেতার কথায়, “শাসক দল উন্নয়ন করে। বিরোধীরা আন্দোলন। এটাই গণতন্ত্রের দস্তুর। এখানে তো শাসকরাই মিছিল করে আন্দোলনে নামছে!”
প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। কিন্তু ঘটনা পরম্পরায় যথেষ্ট ‘উৎফুল্ল’ বিরোধী সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের প্রতিক্রিয়া, “সাত সমুদ্রের গর্জন শোনা যাবে শুনছি! ভালই তো!” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের সহাস্য বক্তব্য, “আগে তৃণমূল আমাদের ‘ফলো’ করত। এখন ‘ফলো-অন’ হচ্ছে! আমরা এক বার ব্যাট করলাম, ওরা দু’বার ব্যাট করছে!”
বস্তুত, মমতার মিছিলে যত লোক হবে, সিপিএম তত ‘খুশি’ হবে। প্রথমত, প্রবল ভিড়ের কারণে শনিবারের সন্ধ্যায় রাস্তায় যান চলাচল ব্যাহত হবে। মিছিলের লোক নিয়ে আসা গাড়ি রাখার জন্য যে জায়গা লাগবে, তাতে জনসাধারণের চলাচলের পরিসর আরও কমে আসবে (অথচ বন্ধের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা মমতা নিজেই কিন্তু কাজের দিনে মিটিং-মিছিল করে মানুষের ‘অসুবিধা’ করার বিরোধী)। এ সবের জেরে যাদবপুরের স্থানীয় মানুষের সঙ্গে তৃণমূলের ‘স্বাভাবিক সম্পর্কে’ই টান পড়বে। দ্বিতীয়ত, ‘বহিরাগত’ এনে মিছিল করায় ‘ক্ষুব্ধ’ হবেন এলাকার মানুষ। বিরোধী সিপিএমের বক্তব্য খুব স্পষ্ট যাদবপুরে তাদের মিছিল ছিল দলের জোনাল কার্যালয়ে হামলা এবং সাংবাদিক-নিগ্রহের প্রতিবাদে। তাদের লোক মার খাওয়ার প্রতিবাদে তারা মিছিল করেছে। কিন্তু তৃণমূলের মিছিল স্রেফ সিপিএম মিছিল করেছিল বলেই! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “বিরোধীদের যে বিলাসিতা করার সুযোগ থাকে, সরকারে থাকলে তা থাকে না। সরকারে থাকলে প্রতিক্রিয়া-নির্ভর রাজনীতি করা যায় না। সরকার সক্রিয়-রাজনীতি করবে। প্রতিক্রিয়ার রাজনীতি করবে কেন? অথচ তৃণমূল সেটাই করছে! ওরা সম্ভবত এখনও নিজেদের বিরোধীই ভাবছে!” আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করছেন, তাঁদের মিছিল রাজ্যের উন্নয়নে সিপিএমের ‘বাধা দেওয়ার চক্রান্তে’র বিরুদ্ধে। সিপিএমের পাল্টা প্রশ্ন, উন্নয়ন তো গোটারাজ্যের বিষয়। তা হলে যাদবপুরে মিছিল কেন? তার জন্য ধর্মতলা বা ব্রিগেডে তো কর্মসূচি নেওয়া যেত।
বন্ধের দিনের ঘটনায় জড়িত এক পুলিশ কনস্টেবলকে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে। কিন্তু ওই দিনের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীদের এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অথচ, তাঁরা এলাকাতেই রয়েছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানাচ্ছেন। শনিবারের মিছিলে তাঁরা থাকবেন কিনা, তা নিয়েও তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে। দলের এক নেতা রসিকতা করে বলেও ফেলেছেন, “সিপিএম যেমন তপন-সুকুরকে দলের সম্পদ বলে বর্ণনা করত, তেমনই হয়তো আমরাও বলব, মানিক-ইন্দ্রাণী আমাদের দলের সম্পদ!” মানিক বণিক, ইন্দ্রাণী সাহা-সহ মোট ১০ জন তৃণমূল কর্মী ওই দিনের ঘটনায় এফআইআরে অভিযুক্ত। টেলিভিশন ক্যামেরাতেও তাঁদের ছবি স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। সেই ছবি কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্য প্রশাসনের কাছে পৌঁছেও দেওয়া হয়েছে।
বাগডোগরা থেকে কলকাতায় নেমে সরাসরিই মিছিলে যাওয়ার কথা মমতার। বেলা ৫টায় গাঙ্গুলিবাগান পার্কে জমায়েত। তার পর মিছিল শুরু। দলের সাংসদ-বিধায়ক-কাউন্সিলার-শাখা সংগঠনের নেতারা প্রায় সকলেই শনিবার দুপুরের মধ্যে কলকাতায় পৌঁছে যাচ্ছেন। সঙ্গে সাধ্য মতো লোকজন। কিন্তু দলের একাংশ আবার পাশাপাশিই প্রশ্ন তুলছেন, আদৌ মিছিল করার কী দরকার ছিল। রাজনীতিতে ‘আনকোরা’ মনীশ গুপ্তের কাছে যিনি বিপুল ভোটে হেরে গিয়েছেন, সেই ‘হেরো নেতা’ মিছিল করলেন বলে ‘জয়ী’ তৃণমূল নেত্রী মিছিল করতে রাস্তায় নেমে পড়বেন? দলের এমনই এক নেতার কথায়, “এতে তো সিপিএম মজা পেয়ে যাবে! কোথায় ওরা একটা মিছিল করবে। আর আমরা তাদের সঙ্গে টক্কর দিতে নেমেপড়ব! সরকারের কি কোনও কাজ নেই? এতে তো বিরোধীরা মনে করবে, আমরা ওদের গুরুত্ব দিচ্ছি!”
সিপিএম অবশ্য এখন থেকেই মজায়। মমতার মিছিলে যত লোক। তত মজা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.