নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হার ইতিমধ্যেই ৬.১ শতাংশে এসে ঠেকেছে। বিশ্বজনীন মন্দার বাতাবরণে তা প্রত্যাশিত হলেও হতাশাজনক বলে গত কালই মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। আর আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরও কঠোর সতর্কবাণী শোনালেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর কথায়, বৃদ্ধির হার যদি আগামী সাত-আট বছরে ধারাবাহিক ভাবে ৯ শতাংশ বা তার কাছাকাছি না থাকে, তাহলে ভয়াবহ দুর্দিন আসন্ন। সে ক্ষেত্রে ২০২০ সালে এমন খাদ্য সংকটের পরিস্থিতি হতে পারে, যে দেশের ৩৫ কোটি মানুষ অনাহারের কবলে পড়বেন। এই পরিস্থিতি কাটাতে আর্থিক সংস্কার ছাড়া গতি নেই।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, বাজেট অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের বক্তৃতার খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেখানেই প্রণববাবু এ কথা বলেন এবং মন্দার পরিস্থিতি সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তার কথায়, বিশ্বজনীন মন্দার বাতাবরণে যে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কমছে, মূলত সেই বিষয়টিই এ বার রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে থাকবে। এটা ঠিকই যে খাদ্যশস্যের মুদ্রাস্ফীতির হার এখন সহনশীল সীমার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ফের ঊর্ধ্বগামী। সেই সঙ্গে ইরানের পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে। ফলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব ফের অর্থনীতিতে পড়তে পারে। এই অবস্থায় বাজেটে কিছু কঠোর পদক্ষেপও করা হতে পারে।
কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় এ কথা বলার পাশাপাশি রাজনৈতিক বার্তাও থাকবে। আর সেই বিষয়টিও আজ সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেছেন প্রণববাবু। তাঁর বক্তব্য, সম্প্রতি অণ্ণা হজারের আন্দোলন থেকে শুরু করে রামদেব পর্ব বা কুড়ানকুলামে পরমাণু প্রকল্পের বিরোধিতায় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আন্দোলনের মতো ঘটনা বারবার দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। সেই অস্থিরতা আর্থিক পরিস্থিতির উপরেও প্রভাব ফেলছে। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতির উপর আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেই তাঁর মত। তিনি এ কথাও বলেন, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির মতো সংস্কার কর্মসূচিতে স্রেফ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির কারণে বাধা দিয়েও অর্থনৈতিক সংকটকে তীব্র করে তুলছেন বিরোধীরা।
বস্তুত কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারাও মনে করেন যে আগামী দিনে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। অর্থনৈতিক সংস্কার করা না গেলে, মন্দার বাতাবরণ কাটবে না। আর তখন খাদ্য সুরক্ষার মতো সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণে অর্থ বরাদ্দ করাও মুশকিল হবে। গত কাল প্রকাশিত কংগ্রেস মুখপত্রে বলা হয়েছে, “বিশ্বজনীন মন্দা কাটিয়ে ওঠাই এখন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রণব মুখোপাধ্যায় এক জন অভিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। কংগ্রেস আশা করছে, আসন্ন বাজেটে তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর যথাযথ দাওয়াই দেবেন।” |