আন্দোলনের জেরে সিঙ্গুর ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন যিনি, সেই রতন টাটা এ বার পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে আরও একটি ‘বৃহৎ শিল্পাঞ্চল’ গড়ার প্রস্তাব দিলেন। আর এক কথায় সেই প্রস্তাব লুফে নিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা।
আজ রাঁচিতে টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধারের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, রতন টাটার প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর হলে ঝাড়খণ্ডে আগামী দিনে আরও একটি ‘টাটানগর’ বা ‘রতনপুর’ গড়ে উঠতে পারে। রতন টাটার উত্তরসূরি তথা টাটা সন্সের ডেপুটি চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রিও এই বৈঠকে হাজির ছিলেন।
পড়শি রাজ্যের তুলনা টেনে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ যে সুযোগ হারিয়েছে, ঝাড়খণ্ড তা হারাতে চায় না। রাজ্যে দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে মুন্ডা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোতে চাইছেন। এ ক্ষেত্রে টাটাদের সহায়তাতেই সেটা সম্ভব।”
১ কোটি কুড়ি লক্ষ টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গ্রিনফিল্ড ইস্পাত কারখানা তৈরির জন্য সাত বছর আগে টাটাদের সঙ্গে ঝাড়খণ্ড সরকারের একটি সমঝোতাপত্র সই হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে এখন নতুন করে এগোতে চাইছে দু’পক্ষই। পাশাপাশি অর্জুন মুন্ডা চাইছেন, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও ঝাড়খণ্ডকে সামনের সারিতে তুলে আনতে। বিষয়টি নিয়ে আজ রতন টাটা ও সাইরাস মিস্ত্রির সঙ্গে বিশদে আলোচনা হয় মুখ্যমন্ত্রীর। এই লক্ষ্যে একটি ‘নলেজ সিটি’ তৈরির ব্যাপারেও দু’পক্ষে কথা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানানো হয়েছে। |
পাশে আছি। অর্জুন মুন্ডার সঙ্গে রতন টাটা এবং সাইরাস মিস্ত্রি।
রাঁচিতে শুক্রবার প্রশান্ত মিত্রের তোলা ছবি। |
টাটা গোষ্ঠীর উত্থানের পিছনে ছোটনাগপুরের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। সিঙ্গুর-পরবর্তী অধ্যায়ে পূর্বাঞ্চলে নতুন করে লগ্নি করতে গিয়ে সেই ছোটনাগপুর তথা ঝাড়খণ্ডেই ফিরছে টাটা গোষ্ঠী। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, ঝাড়খণ্ডের সার্বিক উন্নয়নে সামিল হতে চেয়ে এ দিনের বৈঠকে অর্জুন মুন্ডার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেন রতন টাটা। বৈঠকে তিনি জানান, ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে জড়িয়ে রয়েছে টাটা গোষ্ঠী। এ বার সেই ঝাড়খণ্ডের উন্নয়নে অংশ নিতে আগ্রহী তারা। ঝাড়খণ্ডের উন্নয়নের প্রশ্নে তাঁরা সর্বদাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছেন বলে বৈঠকে জানান রতন টাটা।
আগামিকাল, ৩ মার্চ, জামশেদপুরে টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটার জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালিত হবে। সেই উপলক্ষে রতন টাটা এবং
সাইরাস মিস্ত্রি এখন ঝাড়খণ্ডে। আগামিকালের অনুষ্ঠানের ২৪ ঘণ্টা আগে, আজ তাঁরা রাঁচিতে মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে গিয়ে মুন্ডার সঙ্গে টানা দু’ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাজির ছিলেন রাজ্যের রাজস্ব ও ভূমিসংস্কার মন্ত্রী তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতা মথুরাপ্রসাদ মাহাতোও।
রাজ্যের উন্নয়নের ব্যাপারে রতন টাটার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে টাটা গোষ্ঠীর প্রশংসা করে অর্জুন মুন্ডা বলেন, “দেশে অনেক শিল্প গোষ্ঠী আছে। কিন্তু সকলের থেকেই টাটারা আলাদা।” পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘উৎখাত’ হওয়া টাটাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুন্ডা বলেন, “টাটা শিল্প গোষ্ঠীর কর্মসংস্কৃতি একেবারেই ভিন্ন। রাজ্যের বিকাশের ক্ষেত্রে টাটা গোষ্ঠীর প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে।” প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ঝাড়খণ্ডের শিল্পায়নের জন্য টাটাদের সহযোগিতা চান মুন্ডা। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা কার্যকর হলে অদূর ভবিষ্যতে পূর্ব ভারতে শিল্প-বিনিয়োগের প্রথম ও প্রধান ঠিকানাই হবে ঝাড়খণ্ড।
রতন টাটা-সাইরাস মিস্ত্রির সঙ্গে অর্জুন মুন্ডার এ দিনের বৈঠকে রাজস্ব ও ভূমিসংস্কার মন্ত্রী মথুরাপ্রসাদ মাহাতোর উপস্থিতিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ছোটনাগপুর টেন্যান্সি (সিএনটি) আইন কার্যকর করার পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হওয়া আন্দোলনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। সিএনটি আইনে আদিবাসীদের জমি অন্য জনজাতির কাছে হস্তান্তর নিষিদ্ধ। এই আইন কার্যকর করতে জোরদার সওয়াল করছেন রাজ্যের ভূমিসংস্কার মন্ত্রী তথা জেএমএম নেতা মথুরাপ্রসাদ মাহাতো। মুন্ডার দল বিজেপি চায় সিএনটি আইন সংশোধন হোক। এই বিতর্কিত পরিস্থিতিতে টাটা গোষ্ঠীর নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ার প্রস্তাব-সহ একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্প সামনে রেখে সিএনটি আইনের জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতেই মুন্ডা বৈঠকে মাহাতোকে গুরুত্ব দিয়ে পাশে রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। উল্লেখ্য, বৈঠকে জমি পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়েছে। সরকারের তরফে জমি নিয়ে টাটাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। |