স্কুল গড়তে জমি দান তিন ভাইবোনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পূর্বস্থলী |
গ্রামে একটি মাধ্যমিক স্কুলের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু স্কুল গড়ার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোলগোবিন্দপুর গ্রামে মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের জন্য ৮ কাঠা জমি দিয়ে সমস্যা মেটাতে এগিয়ে এল স্থানীয় পাল পরিবার। পরিবারের তিন সদস্যের দেওয়া ওই জমিতেই শুরু হয়েছে জীবনকৃষ্ণ চৌধুরী মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ার কাজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় প্রায় সত্তর বছর আগে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য দোলগোবিন্দ চৌধুরী উদ্বাস্তুদের নিয়ে কলোনি তৈরি করতে উদ্যোগী হন। তাঁর নামেই গড়ে ওঠে বসতি। গ্রামের প্রাথমিক স্কুল তৈরি করার জন্যও জমি দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই গড়ে ওঠে প্রথমিক স্কুল। বসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে উচ্চবিদ্যালয়। অন্য দিকে কাছাকাছি তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনও উচ্চবিদ্যালয় নেই। তাই প্রাথমিকের পর স্কুলছুটদের সংখ্যা বাড়ছিল। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে চাইতো না। তাই ২০০৮ সালে উচ্চবিদ্যালয় চেয়ে আন্দোলন শুরু করেন গ্রামবাসীরা। তারই ফলশ্রুতিতে এ বছর সর্বশিক্ষা দফতর থেকে হাইস্কুল তৈরির অনুমোদন মেলে। পরিবারের তিন সদস্য সত্যরঞ্জন পাল ও তাঁর দুই বোন বর্ণনা মণ্ডল ও গীতাঞ্জলি পাল নিজেদের নামে থাকা মোট ৬ কাঠা জমি দেন স্কুলকে। |
|
এই জমিতেই মাথা তুলবে মাধ্যমিক স্কুল।ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য। |
এর পরেই স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য সর্বশিক্ষা দফতরের কাছে টাকা চেয়ে চিঠি পাঠান স্কুল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সেই খাতে মেলে প্রায় সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা স্কুলের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির জন্য ধার্য করা হয়েছে। বাকি টাকা দিয়ে ভবন তৈরির কাজ হবে। প্রধান শিক্ষক সঞ্জিতকুমার সাহার আশা, মাস তিনেকের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে স্কুলবাড়িটি।
তবে বাড়ি এখনও তৈরি না হলেও পড়াশোনা শুরু হয়েছে জোরকদমে। ক্লাস চলছে গ্রামেরই জিএনএফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দোতলা বাড়িতে। মিড-ডে মিল সহ স্কুলের সব কাজই চলছে ওই ভবনে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ১৩৯ জন ছাত্র-ছাত্রী। রয়েছেন তিন জন শিক্ষক। তাঁরা জানান, ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। পড়াশোনার মানোন্নয়নের জন্য নিজস্ব একটি ভবন থাকা দরকার যেখানে স্বচ্ছন্দে পড়াশোনা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ করা যায়। তাঁদের কথায়, “ওঁদের ঋণ ভোলার নয়। স্কুল ও এলাকাবাসী চিরকাল ওঁদের কথা মনে রাখবে।”
জমি দিয়ে তৃপ্ত সত্যরঞ্জনবাবু নিজেও। তিনি বলেন, “স্কুলে গিয়ে গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শিখবে। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে? ভাল কাজে জমি দিতে পেরে আমি খুশি।” বিধায়ক স্বপন দেবনাথ বলেন, “উচ্চশিক্ষার প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দিয়েছে ওই পরিবার। এই ধরনের ভাল কাজে প্রশাসন পাশে থাকবে।” |
|